শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫
ঢাকা শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১
The Daily Post

সুরমার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বাড়িঘর ও ঐতিহাসিক স্থাপনা

সিলেট ব্যুরো

সুরমার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বাড়িঘর ও ঐতিহাসিক স্থাপনা

কোনোভাবেই থামছে না সুরমা নদীর ভাঙন। একের পর এক ভাঙনে বিলীন হচ্ছে নগর বন্দর আর গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা। ভয়াল ভাঙনের কবলে পড়ে একদিকে যেমন বসতি ছোট হয়ে আসছে তেমনি ঐতিহাসিক স্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বাজার তলিয়ে যাচ্ছে। 

বারবার পত্রিকায় লেখালেখি আর আবেদন নিবেদন করা হলেও সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের তেমন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। সরেজমিন নদী ভাঙনের যে ভয়াল চিত্র দেখা গেছে তাতে রীতিমতো শঙ্কিত হয়ে উঠেছেন নদী তীরবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দারা।

সুরমা নদীর ভাঙনের চিত্র সরেজমিনে গেলে বিভিন্ন এলাকার লোকজন তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। সিলেট নগরের সুরমা নদীর কলাপাড়া অংশে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে হিয়াবরণ মোল্লাপাড়া পয়েন্টের বাঁকে ভয়ানক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। সিসিকের তৈরি করা একটি ব্রিজ নদীর পাড়ের সড়কে চরম হুমকির মুখে পড়েছে। 

নদীর পারে অবস্থিত মাজারটিও ক্রমান্বয়ে ভেঙে নদীতে চলে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি কবর তলিয়ে গেছে। এলাকাবাসী হলুদ রঙের পতাকা টাঙিয়ে রেখেছেন ভাঙনের স্থানে। এভাবে সুরমা নদীর দুই পারের একাধিক স্থানে ভাঙন দেখা গেছে।

এই নদীর গোলাপগঞ্জের অংশে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাঘা ইউনিয়নের খালোপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ২০/২৫টি পরিবার বসতভিটা হারিয়েছেন এই ভাঙনের কারণে। তাদের অনেকের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বলে জানান এ এলাকার যুবক জিলাল আহমদ। তিনি জানান, নদীর পাড়ে তাদের ঘর ছিল। সেটা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় রাস্তার উত্তর পারে এসে তাদের বসতি স্থাপন করতে হয়েছে। একই ইউনিয়নের রুস্তমপুর, হাতিমনগর এলাকায় এখনও ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, হাতিমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্মুখ অংশ দেবে গেছে নদীতে। স্কুলের সামনে শহীদ মিনার ছিল, সেটিও বিলীন হয়েছে নদীতে। এখন খেলার মাঠ আর স্কুলের অনিন্দ সুন্দর ভবনটি তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

বিদ্যালয়ের শিক্ষক শুভ্র দাস জানান, এখানে তারা চরম হুমকিতে। বিশেষ করে ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়ের সামনের যে মাঠ রয়েছে সেটি এখন চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে শিশুরা যখন খেলাধুলা করে তখন তাদের সবসময় চোখে চোখে রাখতে হয়। কখন জানি নদীতে পড়ে যায় শিশুরা। তিনি জানান, বার বার লেখালেখি হয়েছে। কোনো ফল মিলছে না।

এই স্কুলের পাশেই প্রায় তিনশ বছরের পুরোনো একটি মসজিদ রয়েছে। যার নাম হাতিমনগর রুস্তমপুর পুরাতন জামে মসজিদ। সেখানে কথা হয় গ্রামের কলিম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা জ্ঞান হওয়ার পর থেকে শুনছি এ মসজিদটি অনেক পুরনো। বয়স তিন-চারশ হতে পারে। কেউ কেউ এর অধিকও বলে থাকেন। 

তিনি জানান, তিন/চারমাস আগে হঠাৎ একদিন মসজিদের অর্ধেক অংশ ভেঙে নদীতে চলে যায়। ফলে এখানে মসজিদের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে সকালে সেখানে মক্তবের পড়া শেখেন শিশুরা। ঝুঁকিপূর্ণ এই মসজিদে শিশুদের পাঠদান নিয়েও শংকায় রয়েছেন এলাকাবাসী।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না- বলে জানান নদীপাড়ের বাসিন্দারা। তবে পাউবোর সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায় তারা সমপ্রতি সুরমা নদীর অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো পরিদর্শন করে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রতিবেদন ও সুপারিশ পাঠিয়েছেন। ধাপে ধাপে ভাঙন রোধে কাজ হবে।

টিএইচ