সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
The Daily Post

সৈয়দপুর পৌরসভার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি

সৈয়দপুর পৌরসভার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন

নীলফামারীর প্রথম শ্রেণির সৈয়দপুর পৌরসভার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৩ কোটি টাকা বিল অপরিশোধিত থাকায় গত সোমবার পৌর ভবনের সামনের খুটি থেকে বিদ্যুতের তার কেটে দেয়া হয়। 

এসময় গাড়িসহ নেসকো কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করেন পৌর কাউন্সিলর ও কর্মচারীরা। এতে প্রায় ২ ঘণ্টা রাস্তায় অবরুদ্ধ হয়ে গাড়িতেই অবস্থান করেন সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণে আসা আভিযানিক দল। ফলে পৌরসভা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

নেসকো রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ মহাব্যবস্থাপক সাখাওয়াত হোসেন তালুকদার বলেন, সৈয়দপুর পৌরসভার ২ কোটি ৯১ লাখ টাকার বিল দীর্ঘদিন থেকে বকেয়া রয়েছে। বার বার নোটিশ দেয়া সত্বেও বকেয়া পরিশোধে কোন উদ্যোগে নেই। নেসকো স্থানীয় নির্বাহী প্রকৌশলীসহ রংপুর জোনাল কার্যালয়ের কর্মকর্তারা একাধিকবার ধর্ণা দিলেও পৌর পরিষদ কর্ণপাত করছেন না। 

তিনি বলেন, এমনকি একবছর পূর্বে আমি নিজে এসে যোগাযোগ করলেও ভ্রুক্ষেপ করেনি। একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের এহেন অদায়িত্বশীল আচরণে সরকার তথা বিদ্যুৎ বিভাগ বিপর্যয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই আমরা বকেয়া আদায়ে মাঠে নেমেছি। পৌরসভার ৩৬ টি সংযোগেই গড়পড়তা বিল বাকী। তার উপর মিটার ছাড়াই তারা ৪টি অবৈধ সংযোগ দিয়েছেন। যেগুলোর বিল নেসকো পাচ্ছে না। এভাবে বিদ্যুৎ খরচ হলেও সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে।

নেসকো সৈয়দপুর সরবরাহ ও বিপণন কেন্দ্রের আবাসিক প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ইতোপূর্বে পৌর কমিউনিটি সেন্টারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। অথচ তারা আমাদের অবগত না করেই পৌরভবন থেকে বাইপাস লাইন নিয়েছেন। কয়েকদিন আগে বিল বাবদ ৫ লাখ টাকার চেক দিলেও একাউন্টে টাকা নাই। এসব নানা কারণে আজ বাধ্য হয়ে সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। 

এই কাজে বাধা দিতে সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে তারা আমাদের গাড়ির সামনে ও পেছনে পৌরসভার ময়লার গাড়ি আড়াআড়ি রেখে পথরোধ করেছে। আমরা প্রায় ২ ঘণ্টা অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলাম। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসে অনুরোধ জানানোয় এবং আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বকেয়া পরিশোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্যানেল মেয়রের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে শুধু পৌরভবনের সংযোগ দেয়া হয়েছে।

 পৌর প্যানেল মেয়র -১ শাহিন হোসেন বলেন, মূলতঃ তাদের দেয়া বিল নিয়ে আমাদের আপত্তি আছে। তাই আমরা একটি কমিটি করেছি যারা এবিষয়ে খতিয়ে দেখার পরই বকেয়া পরিশোধ করা হবে। এজন্য সময় দিতে হবে। নয়তো নাগরিক সেবা দিতে প্রতিবন্ধকতার ফলে জনভোগান্তি হবে। সেজন্য কর্তনকৃত সংযোগ পূনরায় প্রদানের অনুরোধ করায় ইউএনওর মধ্যস্ততায় নেসকো তা রেখেছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল রায়হান বলেন, নেসকো তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। তবে পৌরসভা যেহেতু জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠান তাই গুরুত্ব বিবেচনায় পৌর কর্তৃপক্ষের অনুরোধে পুনঃসংযোগ দিতে বলায় তারা মেনে নিয়েছে। একইভাবে পৌর পরিষদকেও বকেয়া পরিশোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দিয়েছি। নতুবা নেসকো তাদের আইনানুগ পদক্ষেপ নিবে। 

পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) আব্দুস সেলিম বলেন, আগের পরিষদের সময়ই প্রায় ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকার বিদ্যুতের বিল বকেয়া দেখায় নেসকো। যার অধিকাংশই ভুতুড়ে বিল। এনিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় উভয়পক্ষ বসে সমন্বয়ের কথা হলেও বিদ্যুৎ বিভাগ আগে বকেয়া পরিশোধের দাবি জানায়। একারণে নিষ্পত্তি হয়নি। তারপরও বর্তমান পরিষদ ৫০ লাখ টাকা ইতোমধ্যে বকেয়া বিল দিয়েছে এবং চলতি মাসসহ নিয়মিত বিল প্রদান করছে। 

পৌর মেয়রসহ কাউন্সিলররা বলেন, কোন প্রকার নোটিশ না দিয়েই তারা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে এসেছিল। যা আমরা প্রতিহত করেছি। আগে এত টাকা বিল বাকী থাকলেও কখনো লাইন কাটা হয়নি। অথচ এখন নিয়মিত মাসিক বিল দিলেও পূর্বের পরিষদের রেখে যাওয়া বকেয়ার জন্য এমন পদক্ষেপ ষড়যন্ত্রমূলক। আমাদের সুনাম ক্ষুন্ন করতেই একটি মহলের উস্কানিতে এহেন কর্মকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে। তারা এর তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানান।

টিএইচ