শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
The Daily Post

স্কুলছাত্রের বানানো রিমোট কন্ট্রোল লঞ্চ ভাসছে পানিতে

দক্ষিণ আইচা (ভোলা) প্রতিনিধি

স্কুলছাত্রের বানানো রিমোট কন্ট্রোল লঞ্চ ভাসছে পানিতে

অভাব-অনটনের সংসারে বেড়ে ওঠা নয়ন পড়ালেখার পাশাপাশি জীবিকা নির্বাহ করছে। আর সুযোগ পেলে চেষ্টা করেন প্রযুক্তি নির্ভর কিছু না কিছু বানাতে। সম্প্রতি তার নিজ হাতে বানানো ককসিটের লঞ্চ পানিতে ভাসতে শুরু করেছে। 

বরিশালের কীর্তনখোলা-১০ নামে একটি রিমোট কন্ট্রোল লঞ্চ তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে স্কুলছাত্র মো. নয়ন (১৫)। ৭ ফুট দৈর্ঘ্যের এই লঞ্চটি পুকুরের পানিতেও ভাসিয়েছে এ স্কুলছাত্র। যা নিয়ে এলাকায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। লঞ্চটি দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন উৎসুক জনতা। 

নয়ন ভোলা জেলা চরফ্যাসন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার চরমানিকা ইউনিয়ন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের  মো. আলাউদ্দিন ফরাজির ছেলে এবং চর আইচা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। তার বাবা একজন ক্ষুদ্র মৎস্য ব্যবসায়ী ও মা কুলছুম বেগম গৃহিণী। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে বড় নয়ন। রিমোট কন্ট্রোল লঞ্চ তৈরি করতে নয়নের সময় লেগেছে প্রায় ১০ মাস। এতে খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। লঞ্চটি তৈরি করে এরমধ্যে পুকুরের পানিতেও ভাসিয়েছে এই স্কুলছাত্র। 

সরেজমিন দেখা যায়, কীর্তনখোলা-১০ এর আদলে নয়নের বানানো লঞ্চটি পানিতে চালাতে একটি রিমোট কন্ট্রোল ব্যবহার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে লঞ্চটিতে লাগানো হয়েছে দুটি মোটর। মোটর দুটি চালু রাখতে পাওয়ার হিসেবে মোটরসাইকেলের ১২ ভোল্টের একটি ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। মোটর দুটির সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে দুটি পাখা যা ঘুরিয়ে সামনে-পেছনে নিয়ে যায় লঞ্চটিকে। 

তিনতলায় মাস্টার ব্রিজ থাকা এ লঞ্চটিকে বিভিন্ন তলায় বাহারি রংয়ের আলোকবাতি লাগানো হয়েছে। এবং লঞ্চের নিচ তলায় ডেক ও সামনে দোতলায় ওঠার সিঁড়ি, দোতলা-তিনতলায় কেবিন এবং তিনতলার উপরে পেছনের অংশে সাইলেন্সারের ধোঁয়া বের হওয়ার জায়গা এবং সামনে হেড লাইটও রয়েছে। বাস্তবে কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের মতো দেখতে।

লঞ্চ বানানো স্কুলছাত্র নয়ন বলেন, আমি ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন সবসময় দেখি, সে জন্য লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি হাতে কিছু সময় পেলে কিছু বানানোর চেষ্টা করি। যখন নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করি তখন থেকেই স্কুলে যাওয়ার সময় বাবা-মায়ের কাছ থেকে প্রতিদিন কিছু টাকা নিতাম, তা জমিয়ে ৩৫ হাজার টাকা হয়। 

সেই টাকা দিয়ে ককসিট, প্লাস্টিকের পাইপ, কাগজ, মোটর, ব্যাটারি, বৈদ্যুতিক তার, রিমোট কন্ট্রোলার ও পাখা সংগ্রহ করি। এরপর প্রায় ১০ মাসের চেষ্টায় কীর্তনখোলা-১০ এর আদলে একটি লঞ্চটি বানাই। যার দৈর্ঘ্য ৭ ফুট, এবং ৩ ফুট প্রশস্তের এ লঞ্চটি পানিতে চালাতে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত রিমোট কন্ট্রোল এবং হাতেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই লঞ্চটি দ্রুত গতিতে ১০ মিনিটের মধ্যে আদা কিলোমিটার দূরে যাতে পারবে। তিনি আরও বলেন, ২৬ মার্চ আমার এই লঞ্চটি পানিতে ভাসাই। লঞ্চটি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চ কোম্পানির মালিককে উপহার হিসেবে দিতে চাই। তাহলে আমার মনের আশা কিছুটা পূরণ হবে।

নয়নের বাবা আলাউদ্দিন ফরাজি জানান, আমার ছেলে পড়ালেখার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরেই এসব কাজ করে যাচ্ছে। এই কাজের জন্য তাকে পরিবার থেকে সব সময় আর্থিক সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা দেয়া হয়। তার স্বপ্ন পড়াশোনা করে ইঞ্জিনিয়ার হবে। তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে আমি সব ধরনের চেষ্টা চালাবো। আমার বিশ্বাস সে একদিন ইঞ্জিনিয়ার হবে।

টিএইচ