শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
The Daily Post

স্কুলসেরা হলো প্রতিবন্ধী আলীনুর ইসলাম

সিরাজদীখান (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি

স্কুলসেরা হলো প্রতিবন্ধী আলীনুর ইসলাম

প্রতিবন্ধকতা কখনোই সাফল্যকে আটকে দিতে পারে না। প্রতিবন্ধীরা বোঝা নয়, সঠিক যত্ন ও পরিচর্যা পেলে ওরাও বদলে দিতে পারে সমাজ, সংসার ও পরিবার। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানের আলীনুর ইসলাম এমনই এক উদাহরণ। 

অক্ষমতাকে জয় করে সে এবার এসএসসি পরীক্ষায় পেয়েছে এ প্লাস। ছেলের  এমন সাফল্যে এলাকার মানুষ, প্রতিবেশী ও তার স্কুলের শিক্ষকদের মাঝে ব্যাপক আনন্দের জোয়ার বইছে। গোটা উপজেলার মানুষের ভালোবাসায় প্রশংসার জোয়ারে ভাসছে আলীনুর ইসলাম। চলতি সালে সৈয়দপুর আব্দুর রহমান স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসিতে অংশ নেয় আলীনুর ইসলাম । 

উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের ফুলহার গ্রামের বাসিন্দা আলীনুর ইসলাম। আলীনুরের জন্মের কয়েক বছর পরই বাবা আফতাব খান মারা যান। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান আলীনুর ইসলাম।  জন্মগতভাবেই তার দুটি পা অচল। মনের জোরে হুইলচেয়ারে বসে পড়ালেখার হাতেখড়ি। নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর মায়ের সহযোগিতায় এখন  সে জেলা প্রশাসক হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। 

মা নুরুন নাহার বলেন, ছেলের এমন ফলাফলে  আমি অনেক খুশি। আমি ছেলের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই ছেলে নো তার  স্বপ্নের জায়গায় পৌঁছাতে পারে ।

পরিবার ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, আলীনুরের মা নুরুন নহার বেগম প্রতিদিন একটি হুইলচেয়ারে বসিয়ে ছেলেকে স্কুলে আনা-নেয়া করতেন। তার শিক্ষকদের আদেশ-নিষেধ মেনে চলা ও মনোযোগ ছিল চোখে পড়ারমতো। অসম্ভবকে সম্ভব করে মেধার স্বাক্ষর রেখে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে আলীনুর ইসলাম । 

স্বপ্নের বিষয়ে জানতে চাইলে আলীনুর ইসলাম  বলে, স্বপ্ন দেখি একদিন জেলা প্রশাসক  হবো। আমার সফলতা আমার মায়ের পরিশ্রম আর শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা। 
প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মিয়া ফরিদ আহমেদ বলেন, আমার প্রতিষ্ঠান থেকে এ বছর ৭৮ পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করে ৬১ জন। ৬১ জন পাসের মধ্যে একটি ‘এ প্লাস’ পায়— যেটা প্রতিবন্ধী মেধাবী আলীনুর ইসলাম পেয়েছে।  আসলে ও এমনিতেও মেধাবী। এ ছাড়া ওর মা খুব পরিশ্রম করেছেন। প্রতিদিন ওর মা হুইলচেয়ারে করে ছেলেকে স্কুলে  আনা-নেয়া করতেন। ওর ভালো রেজাল্টে আমরা ভীষণ খুশি। ও আমাদের শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানের সুনাম বয়ে এনেছে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শীরফুল ইসলাম তানভীর বলেন, বিষয়টি শুনে আমি খুব খুশি হয়েছি। শারীরিক চ্যালেঞ্জ উপেক্ষা করে যে যুদ্ধে সে অবতীর্ণ হয়েছে, এটা একান্তই তার মনোবল এবং তার মায়ের পরিশ্রমের ফসল। ভবিষ্যতে আলীনুরের উচ্চশিক্ষার জন্য যদি আমাদের কোনো সাহায্য-সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, তাহলে উপজেলা প্রশাসন তার পাশে থাকবে। 

টিএইচ