মাগুরায় নামসর্বস্ব কিছু এনজিও ও প্রভাবশালী সুদ ব্যবসায়ীর কাছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও প্রান্তিক চাষিরা দিন দিন পণবন্দী হয়ে পড়ছেন। দারিদ্র্যকে পুঁজি করে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় অফিস বানিয়ে দারিদ্র্য বিমোচনের নামে মানুষ শোষণ করে আসছেন এসব এনজিও ও সুদ ব্যবসায়ীরা। মানুষের সরলতা ও জীবনযাত্রার টানাপোড়েনের সুযোগে তারা হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
ব্যাংকঋণের দীর্ঘ জটিলতার বিপরীতে সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার সুবিধার জন্য নিম্ন আয়ের মানুষ একপ্রকার বাধ্য হয়েই ছুটে যাচ্ছেন এদের কাছে। অনেকে আবার সমবায় সমিতির নামে করছেন সুদের রমরমা কারবার। ৮-১০-১৪ শতাংশ সুদের অনুমোদন এনে ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে তারা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত আদায় করছেন। আবার কেউ ৩০-৫০ শতাংশ সুদে টাকা বিতরণ করেন।
সারা দেশের অসংখ্য নিম্নআয়ের মানুষ আজ সুদের জাঁতাকলে সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব, অনেক পরিবার পৈতৃক ভিটাহারা। অনেকে ঋণের বোঝা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। কৃষকদের এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচাতে সরকারকে স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা থাকলেও প্রয়োজনের তাগিদে মিলছে না।
তেমনি মাগুরা শ্রীপুরের এক সুদখোরের কবলে সর্বশান্ত হয়েছে অসহায় একটি পরিবার। সুদখোর এক দম্পতি উপজেলার সদর ইউনিয়নের হরিন্দী গ্রামে বসবাস করেন। তথ্যসূত্রে জানা যায়, উভয়ের পারস্পরিক সম্পর্ক ভালো থাকায় গোয়ালপাড়া গ্রামের মোতালেব বিশ্বাসের স্ত্রী এলাচি বেগম এক দম্পতির কাছ থেকে ১ লাখ টাকা গ্রহণ করেন।
পরে বিভিন্ন সময় ১৬ লাখ টাকা পরিশোধ করার পরেও ১৩ লাখ টাকা দাবি করছে সুদখোর ওই দম্পতি। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী এলাচি বেগম সুদখোর ওই দম্পতির বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন।
অভিযোগ পত্র সূত্রে জানা যায়, হরিন্দী গ্রামের এক নারীর কাছ থেকে গোয়ালপাড়া গ্রামের এলাচি বেগম ১ লাখ টাকা ধার হিসেবে নেন। ফরিদা বেগম বিভিন্ন এনজিও থেকে ১৬ লাখ টাকা লোন নিয়ে সুকৌশলে এলাচি বেগমকে দিয়ে পরিশোধ করে। ১ লাখ টাকার পরিবর্তে এতগুলো টাকা নেয়ার পরেও তিনি এখনও ১৩ লাখ টাকা পাওয়ার দাবি করে আসছেন। টাকা দেয়ার অপারগতা স্বীকার করায় এলাচি বেগমের বাড়িতে হামলার ঘটনাও ঘটে।
গত রোববার সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই সুদখোর দম্পতির কবলে শুধু একটি না বরং বেশকয়েকটি পরিবার সর্বশান্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী এলাচি বেগম বলেন, আমি ১ লাখ টাকা ধার হিসেবে নিই। সে বিভিন্ন এনজিও থেকে কিস্তি তুলে আমাকে দিয়ে ১৬ লাখ টাকা পরিশোধ করি। পরে তিনি এখনও ১৩ লাখ টাকা পাওয়ার দাবি করলে আমি অপারগতা জানাই। এতে তারা রাস্তা থেকে বেশ কয়েকবার আমার ছেলের কাছ থেকে ভ্যান কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করেছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত বলেন, টাকাটা সুদে দেয়া ছিলো না। আমি জমি বন্ধক বাবদ তাকে টাকা দিয়েছিলাম। তার কাছ থেকে আমি এত টাকা নেয়নি। টাকা আদায়ের জন্য ওদের বাড়িতে গেয়েছিলাম কিন্তু তাদের ওপর আমি কোন হামলা করিনি।
ভুক্তভোগীর অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্রীপুর থানার এসআই শরীফুল ইসলাম মুঠোফোনে জনান, শ্রীপুর থানায় একজন ভুক্তভোগী এ বিষয়ে একটি অভিযোগ দিয়েছেন, তাদের শ্রীপুর থানায় আসার কথা ছিল। কিন্তু তাদের এক পরিবার সদস্য মারা যাওয়ার কারণে আসতে পারেনি। বিষয়টি তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন শেষ হলেই জানা যাবে মূলত ঘটনাটা কি, তার আগে বিস্তারিত বলা যাবে না।
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার ওসি কাঞ্চন কুমার রায় বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
টিএইচ