শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post

৭০ বছরেও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি সৈয়দপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি

৭০ বছরেও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি সৈয়দপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে

বর্তমানে ধুঁকে ধুঁকে চলছে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি। প্রতিষ্ঠার ৭০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো হয়নি কোনো অবকাঠামোগত উন্নতি, লাগেনি আধুনিকতার ছোঁয়া। আর জনবল ও নারী চিকিৎসক সংকট দীর্ঘদিনের। 

ফলে কাঙ্খিত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এ অঞ্চলের গর্ভবতী মা ও শিশুরা। অত্রাঞ্চলের গর্ভবতী মা ও শিশুদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ১৯৫৩ সালে তৎকালীন সরকার ৮ম সিটি শহর সৈয়দপুরের নতুন বাবু পাড়া এলাকায় মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি স্থাপন করে। এর পর ১৯৫৮ সালে সৈয়দপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হলে এটির দেখভালের দায়িত্ব গ্রহণ করে পৌর কর্তৃপক্ষ। 

দেশ স্বাধীনের পর থেকে সরকারের তত্ত্বাবধানে চলছে এ কেন্দ্রটি। পাকিস্তান আমলে প্রতিষ্ঠিত আটরুম বিশিষ্ট একতলা প্রুতিষ্ঠানটি প্রায় নব্বই দশক পর্যন্ত মা ও শিশু সেবায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এরপর থেকেই ঢিলেঢালা অবস্থায় চলছে কেন্দ্রটি। চিকিৎসাসেবার কার্যক্রম বর্তমানে এটির নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে। 

পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় আর সেবার ক্ষেত্রে আধুনিকতার ছোঁয়া না লাগায় গর্ভবতী মায়েরা চিকিৎসাসেবা নিতে অনীহা প্রকাশ করছেন। এ ছাড়া দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে গাইনি চিকিৎসকের পদ শূণ্য থাকায় অনেকেই শহরে গড়ে উঠা বেসরকারি হাসপাতালে ও ক্লিনিকগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন।

সরেজমিনে জানা যায়, ১০ শয্যার এ কেন্দ্রে একজন মেডিকেল অফিসার (পুরুষ), একজন ভিজিটর, একজন নার্স ও একজন আয়া কর্মরত আছেন। দীর্ঘদিন ধরে গাইনী চিকিৎসকের পদটি শূণ্য অবস্থায় রয়েছে। 

একই ভাবে একজন ভিজিটর, একজন নার্স ও একজন সুইপারের পদ শূণ্য রয়েছে। প্রায় এক যুগ ধরে চালক না থাকায় গ্যারেজে পড়ে আছে অ্যাম্বুলেন্স। ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সরকারের অর্ধ কোটি টাকার সম্পদ। বর্তমানে এটি সচল নাকি বিকল কেউ জানে না।

 কেন্দ্রে কর্মরত ভিজিটর সেলিনা গেম জানান, এখানে অবকাঠামোগত সমস্যার পাশাপাশি মহিলা ও গাইনী চিকিৎসক না থাকায় সিজার অপারেশন রোগীর সেবা প্রদান করা যাচ্ছে না। তিনি আরো জানান, রোগ নির্ণয়ের জন্য নেই কোন পরীক্ষাগার। এ ছাড়া আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন থাকলেও এটি ব্যবহারের জন্য চিকিৎসক নেই। 

তবে ওষুধসহ অন্য সেবা প্রদান করা হচ্ছে। সোমবার (১৪ আগস্ট) সৈয়দপুর ইসলামবাগের বাসিন্দা মো. একরাম তার গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে আসেন এ কেন্দ্রে। পরে জানতে পারেন এখানে মহিলা ও গাইনী চিকিৎসক নেই তা শুনে তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে পার্বতীপুর মিশন হাসপাতালে চলে যায়।

মা ও শিশু কেন্দ্রে আরও কয়েকজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলার সাথে কথা হলে তারা জানান, মহিলা ডাক্তার থাকলে মন খুলে সব সমস্যার কথা বলা যেত। কিন্তু পুরুষ ডাক্তারকে তো সব কিছু সমস্যার কথা বলতে লজ্জা লাগে। তিনি আরও বলেন, মহিলা ভিজিটর ও নার্সরা সব বিষয়ে সমস্যা সমাধান দিতে পারে না। তাই বাধ্য হয়ে অন্যত্র যেতে হচ্ছে আমাদের।

কথা হয় সৈয়দপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার (এফসিএইচ-এফপি) ডা. মো. সোহেল রানা তিনি জানান, সারা দেশে ৭০ টি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ৬০ টি আধুনিকায়ণ করা হলেও প্রায় তিন লাখ অধ্যষিত বাণিজ্যিক শহর সৈয়দপুরের কেন্দ্রটি রয়ে গেছে মান্ধাতা আমলের। এখনো এটিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। ফলে গর্ভবতী মা ও নবজাতকদের কাঙ্খিত সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। 

টিএইচ