সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১
The Daily Post

ঈদের মাসে রেমিট্যান্সে ধস

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদের মাসে রেমিট্যান্সে ধস

* এপ্রিলে প্রবাসি আয় ১৮ হাজার কোটি টাকা
* এক মাসে কমেছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা
* কমার কারণ খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক
পবিত্র ঈদুল ফিতরের মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহে ধস নেমেছে। সদ্য সমাপ্ত এপ্রিল মাসে প্রবাসী আয় আগের মাসের তুলনায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি কমে গেছে। যদিও প্রতিবছর দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। সাধারণত ঈদের আগে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠান প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

মঙ্গলবার (২ মে) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা যায় এপ্রিল মাসে বৈধ পথে বা ব্যাংকিং চ্যানেলে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ চলতি বছরের মার্চ ও আগের বছরের এপ্রিল এ দুই সময়ের তুলনায়ই অনেক কম। এপ্রিল মাসে ১৬৮ কোটি ৩৪ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা) এ অর্থের পরিমাণ ১৮ হাজার কোটি টাকা।

এ অংক আগের মাসের চেয়ে ৩ কোটি ৩৯ লাখ ডলার কম। মার্চে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২ কোটি ২৫ লাখ ডলার। একই সঙ্গে আগের বছরের একই মাসের তুলনায়ও রেমিট্যান্স কমেছে ৩ কোটি ২৭ লাখ ডলার। আগের বছর ঈদুল ফিতরের সময় অর্থাৎ ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০১ কোটি ৮ লাখ ডলার।

ঈদের সময় হঠাৎ রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক জানান, সাধারণত ঈদের সময় রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ে। এবার কেন কমল বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বলা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারব।

প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ২৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৪ কোটি ৯৯ লাখ ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৩৮ কোটি ৩৫ লাখ ডলার এবং বিদেশী ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫৫ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।

এপ্রিল মাসের সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বরাবরের মতো ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। আলোচিত সময় ব্যাংকটির মাধ্যমে এসেছে ৪২ কোটি ২৩ লাখ ডলার। এরপর অগ্রণী ব্যাংকে ৯ কোটি ৮৩ লাখ, ব্র্যাক ব্যাংকে ৭ কোটি ৮১ লাখ, ডাচ্–বাংলা ব্যাংকে ৭ কোটি ৬৭ লাখ ডলার ও সোনালী ব্যাংক ৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার প্রবাসী আয়।

আলোচিত সময়ে সরকারি বিডিবিএল, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, পুলিশের কমিউনিটি ব্যাংক, বিদেশি হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে কোন রেমিট্যান্স আসেনি।

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম (জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত) ১০ মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৭৭১ কোটি ৮৫ লাখ মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৭৩০ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ে প্রায় ৪১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স বেশি এসেছে।

বিদায়ী ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার।

এদিকে ডলার সংকট রেমিট্যান্স প্রবাহ কম থাকায় কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ। সবশেষ গত ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের রিজার্ভ ৩ হাজার ১০৬ কোটি (৩১ দশমিক শুণ্য ৬ বিলিয়ন) ডলারে নেমে আসে। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে যদি রিজার্ভ হিসাব করা হয়, তাহলে রিজার্ভ আরও ৭ বিলিয়নের মতো কমে যাবে। সেই হিসাবে এখন প্রকৃত রিজার্ভ আছে ২৪ বিলিয়ন ডলার।

টিএইচ