রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post

এক বছরে রেমিট্যান্স কমেছে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

এক বছরে রেমিট্যান্স কমেছে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা
  • ডিসেম্বরে প্রবাসি আয় এসেছে ১৮ হাজার কোটি টাকা 
  • বছরের শেষ দুই মাসে অল্প হলেও বেড়েছে
  • প্রচেষ্টার আশানুরূপ ফল মেলেনি

সদ্য সমাপ্ত বছরে প্রবাসী আয় কমেছে প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২২ সালে বিশে^র বিভিন্ন দেশ থেকে রেমিট্যান্স এসেছে দুই হাজার ১২৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলার । আর ২০২১ সালে এসেছে দুই হাজার ২০৭ কেটি ২৪ লাখ ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে প্রবাসী আয় কমেছে ৭৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার। বর্তমান রেমিট্যান্সে বিনিময় হার ১০৭ টাকা হিসাবে দেশীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ আট হাজার ৪২১ কোটি টাকা।

অন্যদিকে বড় পতনের পর গত দুই মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহে সামান্য গতি এসেছে। যদিও অনেক প্রচেষ্টার পর এমন ফল আশানুরুপ নয় বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয়ে বড় ধাক্কা আসে। ঐ মাসে ৫০ কোটি ডলার কম রেমিট্যান্স আসে আগের মাসের তুলনায়। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের এ গুরুত্বপূর্ন সূচক নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টরা এরপর ব্যাপক তৎপড়তার পরও আর আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়া সম্ভব হয়নি। অথচ গত কয়েকমাসে প্রচুর সংখ্যক জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে। 

রোববার (১ জানুয়ারি) প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত ডিসেম্বর মাসে ১৬৯ কোটি ৯৬ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৮ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা হিসাবে)। এর আগের মাস নভেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫৯ কোটি ৫১ লাখ মার্কিন ডলার। এছাড়া ২০২১ সালের ডিসেম্বরের চেয়ে প্রায় ৭ কোটি ডলার বেশি এসেছে এই ডিসেম্বরে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬৩ কোটি ডলার।  

রেমিট্যান্স প্রবাহ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম (জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত) ৬ মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৪৯ কোটি ৩২ লাখ মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ২৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। সেই হিসাবে এ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ২৫ কোটি ৩৭ লাখ মার্কিন ডলার বেশি এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ডিসেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ২৪ কোটি ৬৫ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৩ কোটি ৮৭ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৪০ কোটি ৭৬ লাখ ২০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬৭ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার।

অন্যান্য সময়ের মতো এবারও ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। ডিসেম্বরে ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৫০ কোটি ১০ লাখ ডলার। এরপরই রয়েছে অগ্রণী ব্যাংকের অবস্থান। ব্যাংকটির মাধ্যমে ৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এছাড়া সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ৮ কোটি ৮৮ লাখ ডলার এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে ৮ কোটি ৬২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।

সম্প্রতি রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়। রেমিট্যান্স পাঠাতে চার্জ মওকুফ ও ছুটির দিনে অর্থ পাঠানোর সুবিধা এর মধ্যে অন্যতম। এছাড়া সম্প্রতি হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো রেমিট্যান্সের ২৩০ জন বেনিফিশিয়ারির হিসাবে সাময়িকভাবে উত্তোলন স্থগিত করে বিএফআইইউ। বলা হয়, ভবিষ্যতে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাবে- এমন প্রতিশ্রুতি দিলে হিসাবগুলো খুলে দেওয়া হবে। হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রতিরোধে এমন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে বিএফআইইউ।

এছাড়া রেমিট্যান্স বাড়াতে আরও যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে বৈধ উপায়ে পাঠানো রেমিট্যান্সের বিপরীতে আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা, রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের সিআইপি সম্মাননা প্রদান, রেমিট্যান্স বিতরণ প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ ও সহজ করা, পাশাপাশি অনিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিনিয়োগ ও গৃহায়ন অর্থায়ন সুবিধা দেওয়া, ফিনটেক পদ্ধতির আওতায় আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার অপারেটরকে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে ড্রয়িং ব্যবস্থা স্থাপনে উদ্বুদ্ধকরণ এবং রেমিট্যান্স পাঠাতে ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর চার্জ ফি মওকুফ করা ইত্যাদি।
টিএইচ