শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা সরকারের বড় ব্যর্থতা : সিপিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা সরকারের বড় ব্যর্থতা : সিপিডি

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারাকে সরকারের জন্য বড় ধরনের ব্যর্থতা বলে মন্তব্য করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, আমাদের আয় না বাড়লেও ব্যয় বেড়েছে। খাদ্য ব্যয় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। এক শ্রেণির ব্যবসায়ীকে সুবিধা দিতে গিয়ে সরকার নিত্যপণ্যকে বিলাসীপণ্য বানিয়ে ফেলছে। আমরা নিম্নআয়ের হয়েও বিলাসী দেশে পরিণত হয়েছি।

সরকারের ক্রয় কাজে স্বচ্ছতা আনা না হলে সরকারি ব্যয় কমিয়ে আনার সম্ভাবনাও কম বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সিপিডির এই গবেষণা পরিচালক বলেন, রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প পেয়ে থাকেন। তাদের জন্য প্রকল্পের সময়, ব্যয় ও বরাদ্দ বাড়ানো হয়। এসব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনা গেলে ব্যয় কমিয়ে আনাও সম্ভব হবে।

রোববার (২ জুন) দুপুরে ধানমন্ডিতে সংস্থাটির কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২৩-২৪ : তৃতীয় অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এ শঙ্কা প্রকাশ করেন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, মানুষের আয় কম, কিন্তু খাবারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করতে হয়। যার ভুক্তভোগী গরিব ও সাধারণ মানুষ। ধনী ও গরিবের বৈষম্য বেড়েছে। গরিবের আয় বাড়েনি। জিডিপিতে জাতীয় আয় বাড়ছে, কিন্তু কর্মসংস্থানের ভূমিকা রাখতে পারছে না।

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিম্নআয়ের দেশ হয়েও আমরা বিলাসী দেশে পরিণত হয়েছি। আমরা আয় করি কম, কিন্তু খাবারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করতে হয়। আমরা কোন অর্থনীতির দেশে রয়েছি? সরকারের প্রচেষ্টা রয়েছে। অনেক সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক ট্যারিফ কমিয়ে দেয়, তার সুফল তোলেন এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা।

বর্তমান মূল্যস্ফীতি শ্রীলঙ্কার চেয়েও বেশি জানিয়ে সিপিডির এ গবেষণা পরিচালক বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা সরকারের জন্য বড় ধরনের ব্যর্থতা। যেমন- ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে ১৭ শতাংশ, পাইজাম ১৫ ও মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ, মুনাফাখোররা বেশি লাভ সেখানেই করছে, যেসব পণ্য গরিব ও মধ্যবিত্তরা কেনেন এবং বাজারে বেশি বিক্রি হয়।

তিনি বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি গত পাঁচ বছরে মসুর ডাল ৯৫, আটা ৪০, ময়দা ৬০, খোলা সয়াবিন ৮৪, বোতলজাত সয়াবিন ৫৬ ও পামওয়েলের দাম ১০৬ শতাশ পর্যন্ত বেড়েছে। গরুর মাংসের দামও বেশি। ব্রয়লার ৬০, চিনি ১৫২, গুঁড়া দুধ ৪৬-৮০, পেঁয়াজ ১৬৪, রসুন ৩১০ ও শুকনা মরিচের দাম ১০৫ শতাংশ বেড়েছে। যা আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় অনেক বেশি। বাজার মনিটরিং ব্যবস্থায় দুর্বলতা দেখতে পাচ্ছি।

ধনী ও গরিবের বৈষম্য বেড়েছে উল্লেখ করে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বর্তমানে মাথাপিছু অভ্যন্তরীণ আয় ২৬৭৫ মার্কিন ডলার, আর মাথাপিছু জাতীয় আয় ২৭৮৪ ডলার। মাথাপিছু গড় আয় যতটুকু পেয়েছি, সেটা মূলত যারা উচ্চ আয় করেন তাদের কারণে। গরিব মানুষদের কথা বিবেচনা করলে তাদের আয় কমে গেছে। এখানে বৈষম্য বেড়েছে। গরিবদের কোনো উন্নতি হয়নি।

রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজস্ব আদায়ে ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছি, যা গত বছরের জুলাই-জানুয়ারির চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। গত বছর রাজস্ব আদায় নেতিবাচক ছিল। সেখান থেকে ইতিবাচক ধারায় ফিরে এসেছি, সেটা ভালো দিক। যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হয়, তাহলে ৬৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। যা প্রায় অসম্ভব।

তিনি বলেন, বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে সরকার অনেক ক্ষেত্রে উচ্চ সুদে ঋণ নিচ্ছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিচ্ছে, ফলে তা দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিশোধে রিজার্ভের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করছে। এটা ভবিষ্যৎ মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে।

‘সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াতে কর ফাঁকি বন্ধ করতে হবে। কর কাঠামোকে ডিজিটালাইজেন ও অর্থপাচার বন্ধ করার দিকে নজর দিতে হবে। সরকারের প্রতিটি প্রকল্প জনবান্ধব হতে হবে। সরকারি কর্মচারীদের জন্য গাড়ি কেনা ও বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ করতে হবে। এ মুহূর্তে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের বিকল্প নেই’- যোগ করেন সিপিডির এ গবেষণা পরিচালক।

টিএইচ