মানুষের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শাক-সবজি অপরিহার্য। তবে বাজারে সবজির অতিরিক্ত দামে ক্রেতাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। রাজধানীর পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বিক্রেতারা কাঁচা সবজি যে দামে কিনছে, তার চেয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে।
শুক্রবার (২৭)জানুয়ারি সকালে রাজধানীর কাওরান বাজার ও শ্যামবাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে সবজির রাত এবং দিনের দামে ব্যবধান রয়েছে।
প্রতিকেজি মূলা রাতে ১৪ থেকে ১৫ টাকা হলেও সকালে ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ফুলকপি, বাঁধাকপির দাম বাড়েনি। প্রতি পিচ ২০ থেকে ৩০ টাকা তবে, খুচরা কিনতে গেলে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। ধনে পাতার পাইকারি কেজি ৩০ টাকা। পেঁপে কেজি ১২-১৩ টাকা থেকে বেড়ে এখন তা ২০ টাকা। কাঁচা কলার হালি ১০ টাকা। মিষ্টি কুমড়ার কেজি ২০ থেকে ২২ টাকা। তবে রাতে বেড়ে ২৮ থেকে ৩০ টাকা হয়ে যায়।
লালশাক, পালং শাক আঁটি প্রতি পাইকারি ৫ টাকা। তবে খুচরা কিনতে গেলে দেখা যাচ্ছে দ্বিগুণ। বেগুনের পাল্লা পাইকারি রাতে থাকে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা হলেও সকালে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়।
রাত এবং দিনে দামের প্রার্থক্যের কারণ জানতে চাইলে আবুল নামে এক পাইকারি বিক্রেতা জানান, রাতে সবজি থাকে একদম ফ্রেশ। তাই দাম বেশি। আর সকালে চাহিদা কমে যাওয়ায় লোকসান হলেও অল্পদামে বিক্রি করে দিচ্ছি।
এছাড়াও অন্যান্য সবজির মধ্যে পাইকারিতে লাউ প্রতি পিচ ৫০ টাকা। শসা কেজি ২০ টাকা, শিমের পাল্লা ১৫০, কাঁচা টমেটোর কেজি ১০ টাকা। ঢেঁড়শের পাল্লা ৩৫০ থেকে ৪০০ যা কেজি হিসেবে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ টাকা। কাঁচামরিচ কেজি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। নতুন আলু পাইকারি ২৭ থেকে ৩০ টাকা। পুরাতন আলু ২৪ থেকে ২৫ টাকা। দেশি এবং ইন্ডিয়ান পেঁয়াজের কেজি ৩৪ থেকে ৪০ টাকা। তবে এসব সবজি অধিকাংশই দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বিক্রেতারা।
খুচরা বাজারে ভ্যান গাড়িতে করে সবজি বিক্রি করেন বরকত ও ছিদ্দিক। শ্যামবাজার ও কাওরান বাজার থেকে পাইকারি দামে সবজি কিনেন তারা। খুচরা বাজারে বেশি দামে সবজি বিক্রির কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘ব্যবসা সব সময় হয়না। আর আমরা সব মালের (সবজির) দাম দ্বিগুণ রাখিনা। তবে মাঝে মাঝে যেখানে বসে বিক্রি করি সেখানে চাঁদা দিতে হয়। এ জন্য বাধ্য হয়ে দাম বাড়াতে হয় ’
কাওরান বাজারের আড়তদার মেসার্স মিম এন্ড নেহা এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার মান্নান আমার সংবাদকে বলেন, ‘বাজারের অবস্থা খুবই খারাপ। কাঁচামালের সরবরাহ খুব কম। পাওয়াই যায়না।’
কারণ জানতে চাইলে এ আড়ৎ ম্যানেজার বলেন, ‘উৎপাদনকারী কৃষকরা আসলে এখন সন্তুষ্ট না। তারা যেই ব্যয় ও পরিশ্রম করে সবজি উৎপাদন করে সেই মূল্য পায়না। এ জন্য আমরা প্রয়োজনানুসারে নিতে পারিনা। বর্তমানে আমাদের অবস্থাও খুব খারাপ। ব্যবসা নেই, দোকান ভাড়া দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ১৫ হাজার টাকা বেতন দিতাম; গতমাসে এরকম তিনজন কর্মচারিকে বিদায় করে দিয়েছি।’
আক্ষেপ করে তিনি আরো বলেন, ‘আমরা লোকসানে থাকলেও যারা আমাদের থেকে পাইকারি কিনে খুচরা বিক্রি করে, তারা অনেক লাভ করে।’
শ্যামবাজারের আরেক আড়ৎদার মোসলেম হাওলাদার বলেন, ‘বাজারের অবস্থা খুব খারাপ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আমাদের খরচ বেড়েছে। তবে আমাদের বাস্তবতা হচ্ছে আড়ত চালাতে পারছিনা।কাঁচামালের সংকট। বেশি দাম দিয়ে কিনে কম দামে পাইকারি দিতে হচ্ছে, কারণ চাহিদা কমে যাচ্ছে।
টিএইচ