রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
ঢাকা রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
The Daily Post

মূল্যস্ফীতির প্রবণতায় স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে : অর্থ উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক

মূল্যস্ফীতির প্রবণতায় স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে : অর্থ উপদেষ্টা

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার বিগত সরকারের উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রবণতা উত্তরাধিকার সূত্রে পেলেও সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে।

তিনি বলেন, পুরোপুরি না হলেও স্থিতিশীলতা ফিরে আসায় আগের অবস্থা এখন নেই। আগে অর্থনীতি শ্লথ হয়ে পড়লেও এখন অলস নয়, বরং সামনের দিকে এগোচ্ছে। অর্থনীতি একবার মন্থর হয়ে পড়লে তা রাতারাতি বেগবান করা সম্ভব হয় না, এতে নির্দিষ্ট সময় লাগে।

নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনের তিন মাস পর বা ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ সচিবালয়ে তার কার্যালয়ে জাতীয় সংবাদ সংস্থার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে অর্থ উপদেষ্টা এ মন্তব্য করেন।

সাধারণ পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতির হার ২০২৪ সালের অক্টোবরে সামান্য বেড়ে ১০.৮৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ছিল ৯.৯২ শতাংশ। ২০২৪ সালের আগস্টে সাধারণ পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

২০২৪ সালের অক্টোবরে খাদ্যে সাধারণ পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশে, যা ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ছিল ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ। তবে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালের অক্টোবরে ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ছিল ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ।

তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো গত দুই বছর ধরে এটি দুই অঙ্কের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে এবং সরকারের অতিরিক্ত অর্থ ছাপানো এবং মেগা প্রকল্পগুলোতে তহবিল প্রদানের কারণেও এটি কিছুটা বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন বলেন, মেগা প্রকল্পগুলোর সমস্যা হলো তাৎক্ষণিক ফল পাওয়া যায় না। আমাদের আরো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে এবং এভাবেই মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। এ ছাড়া আগেও চাহিদা ও জোগানের মধ্যে তারতম্য ছিল।

উপদেষ্টা বলেন, মুদ্রাস্ফীতির বর্তমান বৃদ্ধি কিছু কারণ সাপেক্ষ, যার মধ্যে রয়েছে দেশজুড়ে কয়েকটি আকস্মিক বন্য যা খাদ্যশস্য, হাঁস-মুরগি এবং গবাদি পশুর খামারকে প্রভাবিত করেছে।

উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, দেশে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে চার কোটি পিস ডিমের প্রয়োজন হয় এবং প্রতিদিন এই পরিমাণ ডিম আমদানি করা সহজ নয় এবং শেরপুর ও ময়মনসিংহে বন্যার সময় মৎস্য, হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশুর খামারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাশাপাশি আকস্মিক বৃষ্টিপাতও সবজি উৎপাদনকে প্রভাবিত করেছে।

সব মিলিয়ে বিভিন্ন কারণে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে সরবরাহ কিছুটা কম বলে জানান উপদেষ্টা।

তিনি আরো  বলেন, আমরা উৎপাদক এবং সরবরাহকারীদের মধ্যে ব্যবধান কমানোর চেষ্টা করছি... মধ্যস্থতাকারীরা বিভিন্ন স্তরে ব্যাপকভাবে সক্রিয়... আমরা সেগুলো যথাযথভাবে মোকাবেলার চেষ্টা করছি, কারণ এটা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের একার দায়িত্ব নয়।

সালেহউদ্দিন বলেন, বাজারে প্রভাব ফেলতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পেঁয়াজ, আলু ও চাল আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে। আমরা এখনো সিন্ডিকেট বা দালালের দৌরাত্ম্য পুরোপুরি  ঠেকাতে পারিনি কারণ এর সঙ্গে রাজনীতিও জড়িত। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে চাঁদাবাজি ও দালালের দৌরাত্ম্য পুরোপুরি কমেনি কারণ চাঁদাবাজদের চেহারা বদলেছে, কিন্তু চাঁদাবাজি নয়।

সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, সরকার স্বীকার করে যে কিছু জিনিস রয়েছে, যা এখনও অর্জন করা বাকি আছে, তবে মূল্যস্ফীতির প্রবণতা মাত্র তিন মাসের বেশি হ্রাস করা সম্ভব নয় কারণ এটি গত দুই বছর উচ্চতর ছিল।

তিনি বলেন, আমরা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করছি, আমরা স্বীকার করি যে সাধারণ মানুষ এখনো তাৎক্ষণিক সুফল পায়নি... মানুষ অবিলম্বে খাদ্যের দাম কমাতে চায় এবং আরে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি চায়। এতে কিছুটা সময় লাগছে।

তিনি বলেন, সরকার এ বিষয়ে ভবিষ্যতের জন্য একটি টেকসই সমাধানের চেষ্টা করছে যাতে চাঁদাবাজির পাশাপাশি মধ্যস্বত্বভোগীদের আধিপত্য হ্রাস পায়।

তিনি বলেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর (ডিএনসিআরপি) নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে বাজারে সার্বক্ষণিক নজরদারি নিশ্চিত করতে তাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করছে।

জোর করে পণ্যের দাম কমানো সম্ভব নয় উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, দাম কমাতে আমরা ইতোমধ্যে চিনি, চাল, আলুর মতো পণ্য আমদানিতে শুল্ক কমানোর কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এলসি মার্জিন শূন্য করা হচ্ছে। সূত্র: বাসস।

টিএইচ