চলতি বছরের গত ৫ই আগস্ট আ.লীগ সরকার পতনের পরই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) তিনটি হল থেকে ভেঙে ফেলা হয় শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নাম ফলক। দাবি উঠে তিনটি হলসহ ববির শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির নাম পরিবর্তনের।
কিন্তু নতুন উপাচার্য নিয়োগের এক মাস পার হলেও কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি প্রশাসনকে। বরং আবাসিক হলগুলোর নতুন প্রাধ্যক্ষ, আবাসিক শিক্ষক নিয়োগসহ হলগুলোর সিটের জন্য আবেদন, নতুন লাইব্রেরিয়ান নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে এখনও ব্যবহার চলছে আগের সেই নাম।
প্রশাসনের এই কচ্ছপ গতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি করেছে অসন্তোষের। যদিও বঙ্গবন্ধু হলের নাম পরিবর্তনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন মতামত।
শিক্ষার্থীরা জানান, ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ২০ আগস্ট পদত্যাগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া। এরপর নতুন উপাচার্য হিসেবে গত ২৩ সেপ্টেম্বর নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন। নতুন উপাচার্য পরদিন ২৪ সেপ্টেম্বর যোগদান করেন।
তার যোগদানের একমাসের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করতে পারেননি। তারা আরো জানান, নতুন বাংলাদেশে আমাদের জন্য উপাচার্য কেমন বিশ্ববিদ্যালয় উপহার দিবেন তা এখনো ধোঁয়াশা।
শেখ হাসিনা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আরিফা জামান লিজা বলেন, জুলাই বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে স্বৈরাচারী শাসকের সঙ্গে সম্পর্কীয় নামে নামকৃত সকল ভাস্কর্য, স্থাপনা এমনকি বিভিন্ন স্থানের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতাতে আমাদের শেখ হাসিনা হলের নাম অপসারণ করা হলেও এখন পর্যন্ত নতুন কোনো নাম দেয়া হয়নি। এজন্য বর্তমান আমাদের হলটি নামহীন হল হয়ে রয়েছে।
এতসময় অতিবাহিত হওয়ার পরও এখনও নতুন নাম দেয়া হয়নি। আশা রাখবো, নামবিহীন হলটি অতিদ্রুত নতুন কোনো নাম পাবে। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ঈশিতা তাসনিম বলেন, দায়িত্বভার গ্রহণের কিছুদিন পরে ভিসি ম্যাম হল পরিদর্শনে আসেন এবং শিক্ষার্থীরা কিছু দাবি উত্থাপন করেন। তার মধ্যে অন্যতম ছিল বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম পরিবর্তন।
নাম পরিবর্তন এবং নতুন নামকরণ এর দাবি উপস্থাপন করা হলেও এখনও প্রশাসন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। যা প্রশাসনের গুরুত্বহীনতা এবং উদাসীনতার পরিচয় দেয়। আমরা চাই যতদ্রুত সম্ভব এই হলের নাম পরিবর্তন করে বরিশালের কোন প্রখ্যাতিসম্পন্ন নারীর নামে হলের নামকরণ করা।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম আহ্বায়ক সুজয় বিশ্বাস শুভ বলেন, গণহত্যা ও নিপীড়নের সঙ্গে যুক্ত মানুষের নামে বাংলাদেশে কোনো প্রতিষ্ঠান থাকুক, সেটা ন্যায্য হয় না। সারাদেশের আপামর জনতা চায় যে, এ নামগুলোর পরিবর্তন ঘটুক। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষের নামগুলোর সামনে আনা হোক।
বরিশালে অনেক চমৎকার ব্যক্তিরা রয়েছেন, সেই ব্যক্তিদের ইতিহাসকে অবহেলা করে দুই-তিনজন মানুষের নামে প্রতিষ্ঠানের নামকরণের যে কালচার গড়ে উঠেছিল সেই কালচার থেকে বের হয়ে আসা উচিত। আমরা শিক্ষার্থীরা এবিষয়ে অনেক আগেই দাবি জানিয়েছিলাম। আমরা বিশ্বাস করি যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আমাদের এই দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে খুব দ্রুতই শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে নামগুলোর পরিবর্তন করবে।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, হলগুলো ও কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির নতুন নামকরণের বিষয়টি উপাচার্য একটি সিন্ডিকেট সভা রাখবেন সেখানেই এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এবিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানি বলেন, আমি ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছি, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে। আমি জুলাইকে ধারণ করি, লালন করি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের কারোর নামে যদি কোনো হল অথবা আরও কিছু থাকে তবে সেগুলো অবশ্যই পরিবর্তন করা উচিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন বলেন, আগের নামগুলো অপসারণ করা হয়েছে। এ বিষয়গুলো একটি প্রক্রিয়ার ব্যাপার, প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
টিএইচ