শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
The Daily Post

শিক্ষকের প্রত্যাশা পূরণেও আমরা আন্তরিক: শিক্ষামন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

শিক্ষকের প্রত্যাশা পূরণেও আমরা আন্তরিক: শিক্ষামন্ত্রী

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন আমরা সবাই বিশ্বাস করি শিক্ষকের কাছ থেকে প্রত্যাশা করবো কিন্তু শিক্ষকের প্রত্যাশা পূরণ করবো না তা হয় না। শিক্ষকের প্রত্যাশা পূরণেও আমরা আন্তরিক। 

আমাদের যে সীমাবদ্ধতা আছে সেগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে। শিক্ষকের আর্থিক, সামাজিক নিরাপত্তা ও সম্মানের ব্যবস্থা করতে হবে। 

আমরা ভালো কিছু চাইলে ভালো পরিবেশ তৈরি করতে হবে। অবকাঠামো উন্নয়ন যেমন জরুরি তার চেয়ে বেশি জরুরি শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা। সেই পরিবেশ শুধু ইট-কাঠ-বালুর অবকাঠামো দিয়ে হয় না, সেই পরিবেশ শুধুমাত্র প্রযুক্তি দিয়ে হবে না। 

আমার শিক্ষকের মনে যদি প্রশান্তি থাকে, আমার শিক্ষকের মনে যদি উৎসাহ থাকে তাহলে শিক্ষার পরিবেশ সত্যিই যথার্থ হয়ে উঠবে। কাজেই আমরা সেই জায়গায় পৌঁছাতে চাই। সেই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করছি।

বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে শিক্ষক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায়  প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। 

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদের সভাপতিত্ত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একটি সুন্দর সমাজ ও জাতি গঠনে শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম। সারা জীবনের জন্য যিনি আমাদের গঠন করে দেন তিনি আমাদের শিক্ষক। 

আমাদের মানুষ হতে শেখায়, দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে দেন, আমাদের পুরো মনটাকে তৈরি করে দেন, আমাদের মধ্যে স্বপ্ন জাগিয়ে দেন এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে নিয়ে যান। আমাদের পুরো জীবনটাতে তাদের অনন্য সাধারণ ভূমিকা রয়েছে।

তিনি বলেন, আমি নিজে একজন শিক্ষকের সন্তান এবং সেই হিসেবে আমি অত্যন্ত গর্বিত। আমরা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে অনেক কাজ করছি, অনেক কথা বলছি। শিক্ষক  যদি ঠিক থাকেন তাহলে সত্যিকার অর্থে শিক্ষা ব্যবস্থায় যে মান আমরা চাই তা পেতে পারবো।

শিক্ষকের সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, সহমর্মিতা এগুলো ভীষণ জরুরি। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে আপদগুলো দূর করার চেষ্টা করেছি। তার মধ্যে একটি প্রশ্ন ফাঁস- সেটা বন্ধ হয়েছে। কিন্তু তারপরও দুই-একটি জায়গায় চেষ্টা হয়।  সেখানে কোনো একজন ব্যক্তি বা কয়েকজন ব্যক্তি জড়িত থাকেন। 

তারা যদি শিক্ষকতা পেশার সাথে জড়িতও থাকেন কিন্তু তারা সমগ্র শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেন না। কিন্তু সমগ্র শিক্ষক সমাজের মধ্যে একজন, দু’জন বা তিনজনও যদি অনৈতিক কিছু করেন তার দায় কিন্তু সবাইকে নিতে হয়। 

সেজন্য আমাদের সবাইকে খুব সচেতন থাকতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার সময় আমরা চাই একদম নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা হবে। কোথাও যদি শিক্ষক মনে করেন যে আমার ছাত্র, আমার প্রতিষ্ঠানকে আরও বেশি ভালো ফলাফল করতে হবে, তাহলে সেটি শিক্ষকের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করে। 

আমাদের শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে। লাখ লাখ শিক্ষকের মধ্যে এটি হয়তো হাতে গোনা এক-দুইজন করে থাকেন, সেটিও যেন না থাকে। আমাদের সেই প্রচেষ্টা করতে হবে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থী কত নম্বর পেল, শুধু সেই নম্বর দিয়ে যেন তার মান বিচার করতে না যাই। শুধু নম্বর পাওয়াই যথেষ্ট নয় কিংবা শুধু নম্বর পাওয়াই একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। সে আসলে কতটা শিখলো, সে কতটা মানুষ হলো, সে কতটা মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ হলো সেটি বিবেচ্য বিষয়। 

আমাদের নতুন শিক্ষাক্রম এমনভাবে তৈরি করেছি যে শিক্ষাক্রম তৈরিতে হয়তো সব শিক্ষককে অন্তর্ভুক্ত করতে পারিনি, কিন্তু এরমধ্যে বিশেষজ্ঞরা ছিলেন, প্রাথমিক-মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক-উচ্চ শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষকেরা ছিলেন। আমি প্রত্যেকের কাছে কৃতজ্ঞ।

আমরা দেশের সব শিক্ষককে প্রশিক্ষণের মধ্যে নিয়ে আসবার কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছি, সেখানে শুধু শিক্ষক নয়। শিক্ষা প্রশাসনের সাথে যারা জড়িত, শিক্ষা ব্যবস্থাপনার সাথে যারা জড়িত তাদের অনেকেই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। আগামী দিনেও করবেন। 

এবছরের শেষ নাগাদ প্রশিক্ষণগুলো শেষ করবো। এ পর্যন্ত দুই লাখ ৩০ হাজারের বেশি শিক্ষককে সাইকোলজিক্যাল পার্সপেক্টিভ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করি প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্তত দু’জন করে কাউন্সিলিং এ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক থাকবেন।

আমাদের শিক্ষার্থীদের শুধু শারীরিক সুস্থ্যতাই যথেষ্ট নয়। মানসিক অসুস্থতায়, সে যদি বাড়িতে হোক, পথে হোক, বন্ধ-বান্ধবের মধ্যে হোক, পড়াশোনায় হোক; যেকোনো ক্ষেত্রে যেকোনো পরিসরে যদি তার সংকট বা দুঃচিন্তা থাকে যা তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করতে পারে তেমন যেকোনো সংকট মোকাবেলায় সে যেন তার শিক্ষককে পাশে পায়।

আমরা চাই অভিভাবকেরা পাশে থাকবেন, অভিভাবকেরা প্রত্যাশার চাপে সব সময় ভারাক্রান্ত করে রাখবেন না। সেই প্রত্যাশা পূরণের জন্য তার শারীরিক-মানসিক শক্তি যোগানোর জন্য পাশে থাকবেন। কখনও কখনও শিক্ষার্থী প্রত্যাশার ভার বহন করতে না পেরে চরম পথ বেছে নেয়, আত্মহননের পথও কেউ কেউ বেছে নেয়। 

আমরা চাই না একজন শিক্ষার্থী ও এ রকমের পরিস্থিতির শিকার না হয়। সেই ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের পাশাপাশি শিক্ষকেরও দায়িত্ব আছে। তারা যেন বুঝতে পারে কোন শিক্ষার্থী সংকটের মধ্যে আছেন। সেজন্য একেবারে মায়ের মমতা নিয়ে এবং শিক্ষকের মমতা নিয়ে প্রতিটি শিক্ষককে তার শিক্ষার্থীকে দেখতে হবে।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, আগামীবার আরও উৎসবের সঙ্গে উদযাপন করা হবে। উপমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষকের মান উন্নয়নে যিনি কাজ করে যাচ্ছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তিনি আশা করি আপনাদের সাথে থাকবেন।

দীর্ঘ সময়ের পুঞ্জিভূত সমস্যা সমাধান করা অনেক কঠিন হয়ে যায়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যেভাবে শিক্ষায় বিনিয়োগ করছেন, সেই বিনিয়োগের সুফল আমরা অবশ্যই পাবো।

আমাদের মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের লিখতে পারা, বলতে পারা, গুণতে পারার দক্ষতা পুরো দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেটা সম্ভব হয়েছে আমাদের শিক্ষকদের কারণে। খুব নিদারুন কষ্টের মধ্য দিয়ে ছাত্রদের পড়িয়েছেন। মাধ্যমিক শিক্ষায় আমরা।

টিএইচ