সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
The Daily Post

একাকিত্ব ও মানসিক অবসাদ আমাদের গ্রাস করছে: শিক্ষামন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

একাকিত্ব ও মানসিক অবসাদ আমাদের গ্রাস করছে: শিক্ষামন্ত্রী

আমরা (শিক্ষার্থীরা) করোনার সময়ে ডিভাইস আসক্তি হয়েছি। আমাদের অনলাইন ক্লাসের প্রয়োজনে আমরা ডিভাইস ব্যবহার করেছি। আমরা অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি। একাকিত্ব, মানসিক অবসাদ এই বিষয়গুলো আমাদের গ্রাস করছে। এরপর শিক্ষার্থীদের উপর পড়াশোনার চাপ থাকে। এর ফলে মানসিক স্বাস্থ্যর অবনতি ঘটছে। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যর বিষয়টি দেখা জরুরি।

রোববার (১১ জুন) মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ-২০২৩ জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ কারীদের পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি একথা বলেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অতিমারির সময় থেকে মানসিক স্বাস্থ্যর বিষয়ে আমরা তিন লক্ষ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যর বিষয়ে আমরা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। আমাদের আরো অনেক কিছু করবার আছে। আমরা সেগুলোও করব। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ব্যাপক পরিবর্তনের জন্য আমরা কাজ করছি। সামগ্রিক শিক্ষার রুপান্তর প্রয়োজন ছিল। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা সেটি করে যাচ্ছি। 

আমাদের শিক্ষার্থীরা হঠাৎ হঠাৎ মানসিক বৈকল্যর হয়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত চাপে কেউ কেউ আসক্তি ডুবে গিয়ে মুক্তির পথ খোঁজার একটি ভুল পথে হাটছে। কখনো কখনো আত্মহননের পথ বেঁচে নিচ্ছে। আমরা যেন কোন শিক্ষার্থীকে এই পথে যেতে না দেই। এর জন্য আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব রয়েছে।  অভিভাবকদের, শিক্ষকদের, অভিভাবকদেরও দায়িত্ব রয়েছে। আমাদের সকল শিক্ষার্থীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যর দিকে নজর দিতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন জ্ঞান,দক্ষতায় ও আনন্দময় শিক্ষায় মানবিক মানুষ হতে পারে সে জন্য আমাদের নজর দিতে হবে।  

অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ-২০২৩ এর জাতীয় পর্যায়ে ১৩৫ জনের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের( মাউশি) অতিরিক্ত সচিব ( মাধ্যমিক)  জনাব খালেদা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন জনাব মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি,শিক্ষা উপমন্ত্রী।  জনাব মো. কামাল হোসেন, সিনিয়র সচিব, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ, মাউশির মহাপরিচালক, অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।

শিক্ষার্থীদের আনন্দময় শিক্ষার দিকে উৎসাহিত করার জন্য ডা. দীপু মনি বলেন, আমরা দেশ টাকে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য পৌঁছাতে হলে মূল হাতিয়ার শিক্ষা। আজকের পৃথিবীর ও আগামীর পৃথিবীতে আমাদের পুরনো শিক্ষা অচল। আমাদের নতুন শিক্ষা কারিকুলামের মাধ্যমে আমরা এটি বাস্তবায়ন করবো। এখানে শুধু জ্ঞান অর্জন নয়। দক্ষতা অর্জনও করতে হবে। 

মোহাম্মদপুর স্কুলের পাঁচ জন শিক্ষার্থী একটি কাজ করে। সেখানে একটি সড়ক আছে। যেই সড়কটি নাম শহীদ সোহরাওয়ার্দী সড়ক। তিনি মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাত বরণ করে। আমাদের শিক্ষার্থীরা অল্প কয়েক মিনিটের প্রতিবেদনে সেই বিষয়টি তুলে ধরেছেন। এর মাধ্যমে তাদের অনেক গুলো দক্ষতা অর্জন করেছে। ছোট একটি কাজের মাধ্যমে তারা দলগত ও প্রযুক্তির দক্ষতা অর্জন করেছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা দক্ষ, যোগ্য হবে। আগামী দিন প্রযুক্তির।  আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তি উদ্ভাবন করবে। আমাদের যদি শুধু পরীক্ষা দিতেই হয়, তাহলে উদ্ভাবন করবো করবে? আমরা সেই বিষয় বেশি পারি।  

আমাদের জিপিএ-৫ এর দৌড়ে রয়েছি। আমাদের বাবা মা যা অর্জন করতে পারেননি, সন্তানদের দিয়ে জোর করে আমরা সেটা করাতে চাই। আমরা একে অপরের সাথে তুলনা করি। এটা ঠিক নয়। আমাদের সবার মাঝে ভিন্নতা আছে। একেক জনের ঝোঁক আগ্রহ বেশি আছে, সেই বিষয়টার প্রতি তাদের উদ্বুদ্ধ করা উচিত। চাপ দিতে থাকলে এটি ক্ষতিকর হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য শিক্ষা উপমন্ত্রী জনাব মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, সৃজনশীল মেধা অনুশীলন করার জন্য আমাদের সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ। আমাদের অতিরিক্ত চাপে শিক্ষার্থীরা চিন্তা করতে পারছে না। সেজন্য আমাদের এই আয়োজন। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে অনেক কিছু প্রয়োগ করার থাকবে না। তাহলে আমি নিজেকে গড়ে তুলবো? সেজন্য সৃজনশীল মানসিকতা থাকতে হবে। আমি বিজ্ঞান ও সাহিত্য যাই শিখি সেখানে আমার নতুন ভাবনা যুক্ত করার চেষ্টা করতে হবে। 

অতি মাত্রায় জ্ঞান নির্ভরতা থেকে আমাদের বেরিয়ে এসে সৃজনশীলতা অর্জন করতে হবে। অভিভাবকরা সন্তানদের উপর চাপিয়ে দেয়ার মানসিকতা কাজ করে। অন্যদের সঙ্গে তুলনা করে তাদের সম্ভাবণা নষ্ট করে দেই। পশ্চিমা দেশে বিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশোনা কম হয়। এর ফলে তাদের চিন্তা করার ক্ষমতা তৈরি হয়। ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একাডেমিকের বাহিরে ভিন্ন কিছু শেখার সুযোগ থাকবে হবে। আইনস্টাইন প্রথম জীবনে পড়াশোনায় পিছিয়ে ছিলেন। এক সময় তারা সৃজনশীলতার পরিচয় অনেক ভালো কিছু করবে।

টিএইচ