বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল শিক্ষার্থীরা। তারা ভিসিকে আল্টিমেটাম দিয়েছেন। রবিবার (১৮ আগস্ট) আল্টিমেটামের সময়ও পার হয়েছে। কিন্তু পদে থাকার বিষয়ে অনড় ভিসি। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ‘‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই ভিসি শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে প্রকাশ্যে লড়াই চালিয়ে গেছেন। ১৮ জুলাই ও ৫ আগস্ট সরাসরি ভিসির সিদ্ধান্তেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেইট বন্ধ করে দেয়া হয়। এ সময় পুলিশ, ছাত্রলীগ ও সরকারপন্থি লোকেরা শিক্ষার্থীদের মারধর করছিল। এই দুদিন বহু শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। যাদের অনেকে এখনো চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই ‘দালাল’ উপাচার্য পদত্যাগ না করলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানান তারা।’
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘‘অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ছে, অথচ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান কমছে। দলীয়করণের জন্যই ভালো শিক্ষকরা চলে যাচ্ছেন। অনেকে আবার পদোন্নতি বঞ্চিত। এই ভিসি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে তৃতীয় মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন।’
তৌসিফ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘‘আমাদের ওপর সবচেয়ে বড় আক্রমণটা হয়েছে ১৮ জুলাই ও ৫ আগস্ট। এই দুই দিন পুলিশ, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের লোকেরা নর্থ সাউদের শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ও দেশি অস্ত্র নিয়ে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে। আমরা রক্তাক্ত ছিলাম, বড় অসহায় ছিলাম। রক্তাক্ত শরীর নিয়ে জীবন বাঁচাতে দৌড়ে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে যাই; তখনই গেইট বন্ধ করে দেওয়া হলো। এর চেয়ে বড় কষ্ট আর কী হতে পারে।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ই আমাদের মৃত্যুর পথ তৈরি করে দিলো। ওই সময় যারা ছিলাম তারা ছাড়াই কেউ-ই বুঝবে না; কী পরিস্থিতি পার করেছি আমরা। এই ঘটনার জন্য পুরোপুরি দায়ী আমাদের ভিসি। আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ভিসির ‘অ্যাগ্রেসিভ’ নির্দেশনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, ‘‘শিক্ষার্থীদের সামনে বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়ান ভিসি। তিনি ফ্যাসিস্টের দালাল। তিনি তো সাধারণ শিক্ষক নন, তিনি ভিসি; আমাদের সবার অভিভাবক। ভিসি এমন নগ্ন দালালি করতে পারেন না। তাকে শিক্ষার্থীরা আর চায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখনো ভিসির শুভ বুদ্ধি উদয় হচ্ছে না। তার এখনই পদত্যাগ করা উচিত। শিক্ষার্থীরা এখনো শান্তিপূর্ণ আছে। তারা চায়, ভিসির এখনো যেটুকু সম্মান আছে, তা বজায় রেখে তিনি পদত্যাগ করুন।’
আরেকজন শিক্ষক বলেন, ‘‘ভিসি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখিয়েছেন। আন্দোলনে সামনের সারিতে থাকা শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া এবং আন্দোলন থেকে না সরলে সরকারি দলের লোকেরা বড় ক্ষতি করতে পারে এমন হুমকিও দিয়েছেন। শিক্ষকদেরও তিনি একই কায়দায় হুমকি দিয়েছেন। গত ৫ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত তিনি সরকারের পক্ষে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে লড়ে গেছেন। যে ভিসি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের না, আমরা তাকে চাই না।’
প্রসঙ্গত, ভিসির পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে আদায়ে শনিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা উপাচার্যের পদত্যাগে রোববার (১৮ আস্ট) দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন।