জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কাজী সামিতা আশকা(২৪) নামের এক শিক্ষার্থী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ২০১৮—১৯ সেশনের (৪৮ ব্যাচ) শিক্ষার্থী।
শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন আমবাগান এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। পরে সাভারের এনাম মেডিকেলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আশকার বন্ধুদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আশকার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলায়। আশকা আমবাগান এলাকায় ৫০ ব্যাচের চারজন জুনিয়রের সাথে বাসা ভাড়া করে থাকতেন। খুলনার নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার জামান তুর্যর সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল আশকার। তুর্য খুলনা থেকে মোবাইল ফোনে আত্মহত্যার বিষয়টি জানালে ঘটনাস্থলে ছুটে যান রুমমেট ও সহপাঠীরা। ভেতর থেকে দরজা বন্ধ অবস্থায় ছিলো। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখেন আশকা ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছে। প্রেমিকের সঙ্গে ঝামেলার কারণে আত্মহত্যা করতে পারে বলে জানিয়েছেন তার সহপাঠীরা।
আশকার রুমমেট শর্মী ও মাইশা নুসরাত জানান, আমরা আজকে কেউই বাসায় ছিলাম না। মাইশা সন্ধ্যার কিছু আগে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আশকাকে তার বন্ধু তূর্যর সাথে ভিডিও কলে ঝগড়া করতে দেখেন। পরে রাত সাড়ে আটটায় তুর্য আশকার বন্ধু সামিহাকে ফোন করে দ্রুত বাসায় যেতে বলে। বাসায় গিয়ে তারা তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। তখন বাইরে থেকে দরজা ভেঙে তারা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে আসেন। পরে সেখান থেকে চিকিৎসকরা তাকে এনাম মেডিকেলে পাঠান।
শাহরিয়ার জামান তুর্য বলেন, ‘আমি ও আশকা ভিডিও কলে কথা বলছিলাম। তেমন বড় কোন ঝামেলা না, তবে ছোট বিষয় নিয়ে আজকে ঝগড়া হয়। সেটা নিয়ে আশকা আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তখন ফোন কেটে যায়। আমি বার বার চেষ্টা করেও তাকে পাইনি। তখন তার রুমমেট ও বন্ধুদের জানাই।
বন্ধু গিয়াস উদ্দিন মুন্না ও শাকিল জানান, আমরা রাত ৯ টায় খবর পাই যে আশকা সিলিংয়ের সাথে ঝুলে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। তাকে সে অবস্থা থেকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে আসি। পরে তারা সাভারের এনাম মেডিকেলে পাঠায়। হাসপাতালের ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এনাম মেডিকেলের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. অর্ণব বলেন, আমাদের এখানে তাকে রাত সাড়ে ৯ টায় নিয়ে আসা হয়। ইসিজি রিপোর্ট দেখে আমরা বুঝতে পারি অন্তত এর আধাঘন্টা পূর্বে তার মৃত্যু হয়েছে। এটা যেহেতু অস্বাভাবিক মৃত্যু, পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করার পর আমরা মৃতদেহ পরিবারকে বুঝিয়ে দিব।
জানা যায়, রাত সাড়ে বারোটার দিকে তার লাশ পোস্টমর্টেম করার জন্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠানো হয়। শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) পোস্টমর্টেম শেষে তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আশকাকে তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হবে বলে তার পরিবার নিশ্চিত করেন।
সাভার থানার দায়িত্বরত উপ পরিদর্শক আল মামুন কবির বলেন, প্রাথমিকভাবে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা বলে শনাক্ত করেছি। বন্ধুর সাথে ঝগড়ার কারণে সে আত্মহত্যা করতে পারে বলে জানতে পেরেছি। সাক্ষী এবং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে আমরা পরিবারকে মৃতদেহ বুঝিয়ে দিতে পারব।
টিএইচ