ঢাকা কলেজের শহীদ মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন ছাত্রাবাসে গভীর রাতে ২ সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় বহিষ্কৃত ৬ ছাত্রলীগ নেতাকে এবার কলেজের ছাত্রাবাস থেকে বহিষ্কার করেছে ক্যাম্পাস প্রশাসন।
কলেজ প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে তাদের দোষ প্রমাণ হওয়ায় আগামী সোমবারের (১৬ অক্টোবর) মধ্যে বহিষ্কৃতদের ছাত্রাবাস থেকে বের করে দিতে কলেজের আবাসিক (হল) কমিটিকে নির্দেশনা দিয়েছে প্রশাসন।
বুধবার (১১ অক্টোবর) তাদের বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইউসুফ। এর আগে ৩ দিন সময় বাড়ানোর পর মঙ্গলবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কলেজ প্রশাসনের গঠিত ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি।
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে ৬ জনকে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আগামী সোমবারের মধ্যে পদক্ষেপ নিতে হল কমিটিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরণের কোন ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্যও হল কমিটিকে শতর্ক করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় বহিষ্কৃতরা হলেন- রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রাউফুর রহমান সোহেল, একই বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আবরার হোসাইন সাগর, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সৈয়দ আব্দুল্লাহ শুভ ও ফাহমিদ হাসান পলাশ, হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সজিব আহসান ও বোটানি বিভাগের একই বর্ষের ছাত্র এবিএম আলামিন। তারা ঢাকা কলেজের সবাই শহীদ ফরহাদ হোসেন ছাত্রাবাসের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। তবে রাউফুর রহমান সোহেলের ছাত্রত্ব শেষ হলেও তিনি এতদিন অবৈধভাবে ছাত্রাবাসে থাকতেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, গত ২৭ সেপ্টেম্বর বুধবার ঢাকা কলেজের শহীদ ফরহাদ ছাত্রাবাসের গেস্টরুমে ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির সদস্য ও ডেইলি বাংলাদেশের কলেজ প্রতিনিধি ফয়সাল আহমেদকে মারধর করে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের কিছু কর্মী। এ নিয়ে অনলাইন মাধ্যমসহ জাতীয় গণমাধ্যমে নিউজ হলে তার জেরে পরদিন বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে দীর্ঘ ১৮ ঘণ্টা ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক ও বাংলা ট্রিবিউনের কলেজ প্রতিনিধি ওবাইদুর সাঈদকে একই ছাত্রাবাসে আটকে রাখে নির্যাতন চালানো হয়।
পরে রাউফুর রহমান সোহেলের নেতৃত্বে সোহাগ সরকার, চমক ও সাব্বিরসহ আরো অনেকে তার ফোন কেড়ে নেয়। পরদিন শুক্রবার সোহেল ওবাইদুর সাঈদকে শারীরিক ও অমানসিক নির্যাতন চালায়। ফোন কেড়ে নেয়ার পর সাংবাদিকদের সাথে কথোপকথন, ব্যক্তিগত বিষয় স্কিনশট ও ভিডিও করে নেয়। বিকাশে থাকা ৩৭০০ টাকাও হাতিয়ে নেয় তারা। পরে ওবায়দুরকে ক্যাম্পাস প্রশাসনের মাধ্যমে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ ঘটনায় জাতীয় গণমাধ্যম ও অনলাইনে নিউজ হয়। বিভিন্ন সাংবাদিক সমিতি বিবৃতি দেয়। মুক্ত সাংবাদিকতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন। পরে ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে রাউফুর রহমান সোহেলসহ ৬ জন ছাত্রলীগ কর্মীকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
কিন্তু ক্যাম্পাস প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সমালোচনা শুরু হলে তড়িঘড়ি করে ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াসকে প্রধান করে ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে ঢাকা কলেজ প্রশাসন। সেই অফিস অধ্যাদেশে ৪ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা না দিয়ে ফের ৯ অক্টোবর (সোমবার) পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে নেয় তদন্ত কমিটি।
তবে বর্ধিত সময়েও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি তদন্ত কমিটি। একদিন পর মঙ্গলবার কলেজ প্রশাসনকে তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করে তদন্ত কমিটি। পরবর্তীতে বুধবার তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ঢাকা কলেজ কতৃপক্ষ অভিযুক্ত ৬ শিক্ষার্থীকে হল থেকে বহিষ্কার করেন। যদিও কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দোষিদের ছাত্রত্ব বাতিল করার দাবি তোলা হয়েছিলো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি এ জেড ভূঁইয়া আনাস বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতের স্বার্থে আমরা কলেজ প্রশাসনকে নির্যাতনকারীদের ছাত্রত্ব বাতিল, স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ সৃষ্টি ও হলে গেস্টরুম কালচার বন্ধের দাবি জানিয়েছিলাম।
প্রশাসন তাদেরকে হল থেকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা ভালো দিক। তবে আমরা এখনো দোষিদের ছাত্রত্ব বাতিল, সাংবাদিকতারা পরিবেশ সৃষ্টি ও গেস্টরুম কালচার বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। এ বিষয়ে কলেজের পদক্ষেপ জানতে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রশাসনের সাথে আলোচনা করবো।
টিএইচ