শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১
The Daily Post
এফডিসিতে শুটিং হল ও সরঞ্জাম ভাড়া বেশি

মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন নির্মাতারা

মো. সোহাগ বিশ্বাস

মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন নির্মাতারা

ঢাকাই চলচ্চিত্রের আতুরঘর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি), যা এফডিসি নামেই বেশি পরিচিত। তার রূপ-যশ জৌলুস হারিয়ে বছরের পর বছর পরে আছে নীরব নিথর অবস্থায়। লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন, গেটে সাধারণ মানুষের ভিড় এসব যেন এখন সোনালি অতীত। বেশির ভাগ শুটিং ফ্লুরই থাকে তালাবদ্ধ। স্থবিরতায় জং ধরেছে এফডিসির দেয়ালেও। এক সময় অতিরিক্ত শিল্পী থেকে শুরু করে চলচ্চিত্রের শীর্ষ তারকাদের পদচারণায় মুখোর থাকত এফডিসি। 

এখন বিকেল হলে হাতেগোনা কিছু উঠতি তারকা ছাড়া কাউকে দেখা যায় না এখানে। কিছু মিউজিক ভিডিও ছাড়া তেমন কোনো সিনেমার শুটিংও হয় না এখান। বেশির ভাগ সিনেমার শুটিংই হয় বাইরে। চলচ্চিত্র পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার মনে করেন, এ অবস্থার শেষ পেরেক মেরেছিল করোনা ভাইরাস। 

এফডিসির এত সব সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণে প্রতি মাসে ব্যয় হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। প্রযোজক-পরিচালকদের অভিযোগ অযত্ন আর অবহেলায় দিনের পর দিন নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার সম্পদ। অগোছালো আর স্থবির এই এফডিসির শুটিংয়ের ভাড়া খুবই বেশি, সিনেমা মালিকদের দাবির পরও ভাড়া না কমানোর কারণ রহস্যজনক। ফলে কম ভাড়ায় বাইরের হাউজগুলোতেই শুটিং করেন নির্মাতারা।

প্রবীণ চলচ্চিত্র পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু বলেন, ‘এফডিসিতে ছবি করতে গেলে ভাড়া বেশি গুনতে হয়। এখানে বাড়িঘর তৈরিসহ লাইট সাউন্ড সব কিছুতেই খরচ বেশি। বাইরে সিনেমা করলে এক মাসের মধ্যে একটি সিনেমা শেষ করা যায় কিন্তু এখানে সব কিছু আলাদা আলাদা করতে হয়। যেহেতু হল কমে গেছে তাই খরচের দিকটি মাথায় রাখতে হয়।’

চলচ্চিত্র পরিচালক এস এ হক অলিকবলেন, ‘এফডিসির যেখানে যাবেন তার জন্য আলাদা আলাদা ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। এত ভাড়া দিয়ে এই সময় সিনেমা করা কঠিন। এমনিতেই সিনেমা হল কমে গেছে, তাই সিনেমা নির্মাণে বাজেট বড় বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে আরো মনোযোগী হওয়া উচিত বলে মনে করেন এই নির্মাতা। সরকারি প্রতিষ্ঠনে ভাড়া কম না হওয়াটা অস্বাভাবিক। 

তার ওপর রাষ্ট্রের সম্পদ একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে নষ্ট করছে বলে মনে করেন চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক মনতাজুর রহমান আকবর। তিনি বলেন, ‘এফডিসিতে দুই দিনের বিল দিয়ে আমি বাইরে দুই মাস শুটিং করতে পারব। তা ছাড়া চক্রবৃদ্ধি হারে বিল বাড়তেই থাকে, সে ভয়ে কেউ হল ভাড়া নিতে চায় না। আমরা বলেছিলাম প্যাকেজ করে দিন, কিন্তু আমাদের কথা কানেই নেয়া হয় না।’

চলচ্চিত্র পরিচালক মো. ইকবাল বলেন, এফডিসির প্রত্যেকটি ফ্লোর খালি পরে আছে। বাইরে যে ফ্লোরের জন্য আমরা পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া দেই এখানে তার জন্য দিতে হয় ১৫ হাজার টাকা। এফডিসিতে অনেক ভালো ভালো ক্যমেরা, লাইটসহ অনেক সরঞ্জাম আছে যা অনেক দামি এবং উন্নতমানের, কিন্তু কেউ ব্যবহার করছে না শুধু ভাড়া বেশি হওয়ার কারণে। আগে এফডিসিতে কারেন্ট যেত না, কারণ দুটো লাইন ছিল আর এখন দিনে পাঁচ থেকে ছয়বার বিদ্যুৎ চলে যায়। 

এফডিসির রাস্তায় শুটিং করতে আগে দেড় হাজার টাকা লাগত এখন পাঁচ হাজার টাকা গুনতে হয়। সরকারের হাজার কোটি টাকার সম্পদ এফডিসিতে পরে আছে কিন্তু কোনো যত্ন নেই। তবে নির্মাতারা যাতে কম খরচে এফডিসিতে শুটিং করতে পারেন সে জন্য কাজ করছে সরকার। 

তথ্য ও সমপ্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সিনেমার জন্য যে ক্যমেরা, এডিটিং প্যানেল, সাউন্ড সিস্টেম রয়েছে তা এখনো ব্যবহার হচ্ছে, তবে ভাড়া কমালে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়বে। যেহেতু এফডিসি সরকারি সহায়তায় চলে, সেহেতু বাইরের তুলনায় এখানে ভাড়া কম হওয়া উচিত। এতে ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। মন্ত্রী মহোদয়ও এ বিষয়ে একমত। আমরা আশা করি অল্প দিনের মধ্যেই এফডিসি ভাড়া কমানো সংক্রান্ত প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। 

অনেক পরিচালক বলছেন, ভাড়া কমানোর এই দাবি দীর্ঘ দিনের কিন্তু এফডিসি তা কানেই তোলে না, উল্টো বাড়তে থাকে। অন্যদিকে সেন্সর বোর্ডে ছবি দেখাতে এফডিসির অনাপত্তি লাগে। এফডিসির বাইরে সিনেমার শুটিং করলে অনাপত্তির জন্যও খরচ করতে হয় বলেও জানান একাধিক পরিচালক।

টিএইচ