শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া সংশোধনী পাসের দাবি আহছানিয়া মিশনের

নিজস্ব প্রতিবেদক

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া সংশোধনী পাসের দাবি আহছানিয়া মিশনের

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের তৈরি করা আইন-২০২২ এর খসড়া সংশোধনী দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদে পাসের দাবি জানিয়েছে আহছানিয়া মিশন।

মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

এতে জানানো হয়, বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ (১৫ বছর বা বেশি) তামাক ব্যবহার করেন। অন্যদিকে ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ ধূমপান না করেও বিভিন্ন গণপরিবহন ও পাবলিক প্লেসে প্রতিনিয়ত পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন। ১৩ থেকে ১৫ বছরের অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যেও শতকরা ৭ শতাংশ তামাকের ব্যবহার করে। টোব্যাকো এটলাস ২০১৮-এর তথ্যমতে— তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর বাংলাদেশে ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ অকাল মৃত্যুবরণ করেন। তামাকের এই সর্বগ্রাসী আগ্রাসনকে তামাক মহামারি হিসেবেই গণ্য করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মূলপ্রবন্ধ পাঠ করে সংগঠনটির প্রধান প্রকল্প পরিচালক শরীফুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তামাকের ভয়াবহতার বিষয়টি অনুধাবন করে ২০১৬ সালে সাউথ এশিয়ান স্পিকারদের শীর্ষ সম্মেলন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনবিষয়ক অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ওই লক্ষ্য অর্জনে কর কাঠামোকে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে আরও শক্তিশালী করতে আন্তর্জাতিক কনভেনশন অর্থাৎ বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)-এর সঙ্গে আইনটিকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে সংশোধনের বিষয়ে তিনি দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।

খসড়ার তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে নিতে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল তথা সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত)’-এর অধিকতর সংশোধনের জন্য একটি খসড়া প্রণয়ন করেছে। খসড়াতে তামাকবিরোধী সংস্থা ও নাগরিক সমাজের প্রস্তাবনাগুলো সুন্দরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।

শরিফুল ইসলাম আরও জানান, খসড়াটির ওপর স্টেকহোল্ডারদের মতামতের জন্য ১৬ জুলাই ২০২২ পর্যন্ত জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। সংশোধনী প্রস্তাবগুলো ইতোমধ্যেই ব্যাপক জনসমর্থন লাভ করেছে। ১৫ হাজারেরও বেশি সংগঠন ও নাগরিক এই সংশোধনীর প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। এদের মধ্যে ১৫৫ জন সংসদ সদস্য ছাড়াও রয়েছে বিএমএ, সন্ধানীসহ ২০টির বেশি চিকিৎসক সংগঠন, শতাধিক স্বনামধন্য চিকিৎসক এবং নার্স।

এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য, উপ-উপাচার্য, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী: প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবং গবেষক। পাশাপাশি ‘ল’ চেম্বার এবং অনেক আইনজীবী এতে সমর্থন জানিয়েছেন। বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি, বাংলাদেশ লঞ্চ মালিকদের সমিতি, বাংলাদেশ সুপারমার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দিনমজুর, এমনকি শ্রমিকদের কাছ থেকেও সমর্থন আদায় করা সম্ভব হয়েছে। সাংবাদিকদের সংগঠনের পাশাপাশি এককভাবে অনেক প্রথিতযশা সাংবাদিকও খসড়াটির প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেছেন। পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছে এমন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর কাছ থেকেও ব্যাপকভিত্তিক সমর্থন পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছেন আহছানিয়া মিশনের এই প্রকল্প পরিচালক।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আক্তার বলেন, ‘এ আইনটি পাস করতে পারা তামাক নিয়ন্ত্রণে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ তামাক আমাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। একদম তামাক মুক্ত পরিবার খুবই কম আছে। এমন পরিবার খোঁজে পাওয়া দায় যেখানে সিগারেট কিংবা জর্দা ব্যবহারকারী কেউ নেই। এটি এক ধরনের অভ্যস্ততায় পরিণত হয়েছে। তবে আশার দিক হলো- গত কয়েকবছর তামাক নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে প্রচারণা চালানো হয়েছে। বিশেষত আগামী প্রজন্ম যেন তামাকে অভ্যস্ত না হয় সে বিষয়ে সচেতনা তৈরিতে কাজ চলছে। আইনের এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। আইনটি হবে এর প্রথম ধাপ।

দেশ তামাক কোম্পানি বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার প্রধান বলেছেন বন্ধ করতে হবে সুতরাং প্রয়োজনে এসব কোম্পানি বন্ধ করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে নতজানু হওয়া যাবে না। তামাকের ব্যবহার বন্ধ মানে এসব কোম্পানিও বন্ধ।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘এটি প্রতিরোধে কার্যকর কর আরোপ এবং আইন পাস করতে হবে। করের মাধম্যে এটি অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমাদের কর নীতির মধ্যে অনেক ফাঁক-ফোকর রয়েছে। তামাক কোম্পানিগুলো এর সুযোগ নেয়। উন্নত দেশগুলোতে কঠোর আইন রয়েছে। ফলে তারা আমাদের মতো যেসব দেশে আইনের প্রয়োগ কম সেখানে ব্যবসা করছেন।’

এবি