মধ্য আফ্রিকার দেশ ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো (ডিআর কঙ্গো) থেকে শান্তিরক্ষা মিশন প্রত্যাহার করার ঘেষাণা নিয়েছে জাতিসংঘ। ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ সকল শান্তিরক্ষীরা ডিআর কঙ্গো ছেড়েে যাবে। মোট তিন ধাপে এই দেশটিতে থেকে জাতিসংঘের সৈন্য প্রত্যাহার করা হবে।
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তায় কাজ করা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে দেশটি থেকে পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হবে।
কঙ্গোতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনটি মনুস্কো নামে পরিচিত। জাতিসংঘের এই মিশনের প্রধান বিন্টো কেইতা শনিবার কঙ্গোলিজ রাজধানী কিনশাসায় এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘গত ২৫ বছরের উপস্থিতির পরে মনুস্কো (MONUSCO) নিশ্চিতভাবেই ২০২৪ সালের শেষের দিকে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো ত্যাগ করবে।’
আল জাজিরা বলছে, সবেমাত্র বিতর্কিত ভোটে পুনঃনির্বাচিত হওয়া কঙ্গোলিজ সরকার জাতিসংঘের এই মিশনকে দেশ ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানানোর পরে মনুস্কোর পক্ষ থেকে এই ঘোষণাটি দেওয়া হলো। সরকারের অভিযোগ, জাতিসংঘের এই মিশন সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হাত থেকে বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। মূলত অ্যালাইড ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এডিএফ) এবং এম২৩-সহ অসংখ্য সশস্ত্র গোষ্ঠী আফ্রিকার এই দেশটির নর্থ কিভু, সাউথ কিভু এবং ইতুরি প্রদেশের মতো অশান্ত পূর্বাঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে। এসব অঞ্চলে বেসামরিক মানুষ ব্যাপক সহিংসতা এবং বাস্তুচ্যুতির সম্মুখীনও হয়েছে।
ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের প্রত্যাহার মোট তিন ধাপে সম্পন্ন হবে। প্রথম পর্যায়ে, চলতি বছরের এপ্রিলের শেষ নাগাদ জাতিসংঘের প্রায় ২ হাজার সৈন্য দেশটির সাইথ কিভু প্রদেশ ছেড়ে যাবে। এতে করে বর্তমানে ১৩ হাজার ৫০০ জনের শক্তিশালী মনুস্কো বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা কমে ১১ হাজার ৫০০ জনে নেমে আসবে বলে কেইতা জানিয়েছেন। এর পর ওই প্রদেশে থাকা জাতিসংঘের ১৪টি ঘাঁটি কঙ্গোর নিরাপত্তা বাহিনী তাদের দখলে নেবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এরপর নর্থ কিভু এবং ইতুরি প্রদেশ থেকেও জাতিসংঘের বাহিনী প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।
এদিকে কঙ্গোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টোফ লুতুন্ডুলা রাজধানী কিনশাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে নিশ্চিত করেছেন, তার দেশে থাকা জাতিসংঘের অবশিষ্ট বাহিনী আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দেশ থেকে বেরিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘মনুস্কো প্রত্যাহারের অর্থ এই নয় যে, আমরা আমাদের দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য যে লড়াই করছি তা শেষ হয়ে যাবে, আমাদের অবশ্যই সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।’
উল্লেখ্য, মধ্য আফ্রিকার এই দেশটির নিরাপত্তাহীনতা প্রশমিত করতে সাহায্য করার জন্য মনুস্কো কাজ শুরু করলেও দেশটিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের উপস্থিতি ক্রমশ অজনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। গত বছরের আগস্টের শেষের দিকে দেশটিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনবিরোধী বিক্ষোভ ৪০ জনেরও বেশি নিহত হন।
টিএইচ