শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post

পশ্চিম তীরের জেনিন শহর ছাড়ছে ইসরায়েলি বাহিনী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

পশ্চিম তীরের জেনিন শহর ছাড়ছে ইসরায়েলি বাহিনী

দখলকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে টানা দুদিন সামরিক অভিযান চালানোর পর সেনা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে দখলদার ইসরায়েল। 

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৪ জুলাই) মধ্যরাতে ইসরায়েলি সেনাদের বহনকারী গাড়িগুলো জেনিন ছাড়তে শুরু করেছে। তবে ইসরায়েলি বাহিনীর পক্ষ থেকে অভিযান শেষ করার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কিছুই জানানো হয়নি। খবর রয়টার্স ও বিবিসি।

দুজন প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলি সেনাদের ফিরতি কনভয় দেখেছেন। রাতের অন্ধকারে সেনারা সামরিক বাহিনীর গাড়িতে চড়ে জেনিন থেকে পর্যায়ক্রমে বেরিয়ে যাচ্ছেন।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, দুদিনের এ সামরিক অভিযানে ১২ ফিলিস্তিনি ও একজন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন। জীবন বাঁচাতে জেনিনের শরণার্থী শিবির ছেড়েছেন তিন হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। 

ইসরায়েলি সেনারা যদি ফিরে যান, তাহলে রোববার (২ জুলাই) মধ্যরাতে পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে শুরু হওয়া এ অভিযান শেষ হতে পারে। এটি ছিল কয়েক বছরের মধ্যে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বাহিনীর সবচেয়ে বড় হামলা ও অনুপ্রবেশ।

অন্যদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সূত্রের বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, পশ্চিম তীরের জেনিন শহরের শরণার্থী শিবিরে সামরিক অভিযানে যাওয়া সেনাদের ফিরিয়ে নিচ্ছে ইসরায়েল।

এদিকে, সেনা প্রত্যাহারের খবরের মধ্যেই গাজা উপত্যাকা থেকে ইসরায়েলের দিকে রকেট ছোড়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে দেশটির সামরিক বাহিনী। স্থানীয় সময় বুধবার (৫ জুলাই) ভোররাতে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চল লক্ষ্য করে এ রকেট ছোড়া হয়, যা আয়রন ডোমের মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়েছে বলেও জানায় ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস।

এক টুইটবার্তায় ইসরায়েলি বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘গাজা উপত্যাকা থেকে একের পর এক রকেট ছোড়া হচ্ছে। ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের দিকে নিরাপত্তা সতর্কতায় ব্যবহৃত সাইরেন বাজতে শোনা যাচ্ছে। আয়রন ডোম সক্রিয় রয়েছে।’

গুলিতে ইসরায়েলি সেনা নিহত

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যায় জেনিনে ফিলিস্তিনের পাল্টা হামলায় এক ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন। এর আগে বিকেলে তেল আবিবের পিনচাস রোজেন স্ট্রিটের একটি শপিং সেন্টারের সামনে হামলায় অন্তত ৮ ইসরায়েলি আহত হয়।

ইসরায়েলি বাহিনী তাদের একজন সেনা কর্মকর্তা নিহতের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস তাদের ভেরিফাইড অ্যাকাউন্ট থেকে টুইট করে এ তথ্য জানিয়েছে।

টুইটবার্তায় বলা হয়, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেনিনে অবৈধ অবকাঠামো উচ্ছেদ অভিযানের সময় গোলাগুলিতে আমাদের একজন নন-কমিশনড সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। আমরা তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।’

দুদিনে ১২ ফিলিস্তিনির প্রাণহানি

অন্যদিকে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের নৃশংস সামরিক অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত ১২ জন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন শতাধিক। জেনিনের ডেপুটি গভর্নর কামাল আবু আল-রউফ জানিয়েছেন, প্রায় তিন হাজার মানুষ শরণার্থী শিবির ছেড়ে নিরাপদে আশ্রয়ে ছুটছেন।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার সকালে জেনিন শহরের দোকানপাট ছিল বন্ধ। খুব কম লোকজনকে চলাচল করতে দেখা গেছে। আগের দিন ইসরায়েলি বাহিনী ও ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের লড়াইয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন স্থাপনা ও বিদ্যুতের তার রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। আকাশে ড্রোন ওড়ার শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল।

রোববার (২ জুলাই) রাত থেকে পশ্চিম তীরে জেনিনের শরণার্থী শিবিরে ড্রোন হামলার পাশাপাশি বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী। এটি গত ২০ বছরের মধ্যে ওই অঞ্চলে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় হামলা ও অনুপ্রবেশের ঘটনা।

জেনিন শরণার্থী শিবিরে প্রায় ১৮ হাজার ফিলিস্তিনির বসবাস। অভিযানের সময় সেখানকার সড়কগুলো খুঁড়ে ফেলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বোমাবিরোধী বুলডোজার। এতে পুরো এলাকায় পরিণত হয়েছে ধ্বংসযজ্ঞে।

টিএইচ