শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১
The Daily Post

আগামী বছর রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ শেষ হবে : বার্লিনে জেলেনস্কি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

আগামী বছর রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ শেষ হবে : বার্লিনে জেলেনস্কি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আশা প্রকাশ করেছেন যে রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ পরের বছর শেষ হবে।

বার্লিন থেকে এএফপি শুক্রবার জানায়, টেকসই সামরিক সহায়তার জন্য বার্লিন সফরকালে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউক্রেন তৃতীয় কঠিন শীতের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে এমন সময় জেলেনস্কি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অধিকতর সমর্থন ও সহায়তা চাইতে ইউরোপীয় দেশেগুলোর রাজধানীতে এক ঝটিকা সফর শেষ করেছেন। সর্বশেষ বার্লিন সফরের আগে তিনি লন্ডন, প্যারিস ও রোম সফর করেন।

ট্রেডমার্ক সামরিক পোশাক পরিহিত জেলেনস্কি জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সহায়তা প্রদানের জন্য জার্মানিকে ধন্যবাদ জানান। তবে তিনি বলেন, ‘এই সহায়তা পরের বছর না কমাটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ আগামী বছর ২০২৫ সালের পরে শেষ হবে এমন আশা প্রকাশ করে তিনি শোলজকে যুদ্ধে জয়ের জন্য তার পরিকল্পনা উপস্থাপন করবেন বলে জানান।

জেলেনস্কি বলেন, ‘বিশ্বের অন্য কারো চেয়ে ইউক্রেন এই যুদ্ধের সুষ্ঠু ও দ্রুত সমাপ্তি চায়।’ ‘যুদ্ধ আমাদের দেশকে ধ্বংস করছে, আমাদের মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে।’

শোলজ প্রতিশ্রুতি দেন যে জার্মানি ও ইইউ অংশীদাররা এ বছর ইউক্রেনে আরো প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম পাঠাবে এবং ২০২৫ সালে জার্মানি চার বিলিয়ন ইউরো সাহায্য দেবে। তিনি প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা ইউক্রেনের জন্য আমাদের সহায়তা হ্রাস করব না।’

শোলজ বলেন, তিনি ও ইউক্রেনের নেতা জেলেনস্কি রাশিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি শান্তি সম্মেলনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হয়েছেন। তবে তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতেই শান্তি আনা সম্ভব।’ ‘আমরা রাশিয়ার নির্দেশিত শান্তি মেনে নেব না,’ বলেন শোলজ।

জেলেনস্কি পরে জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ারের সাথে সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে তার সফর গুটিয়ে আনেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হলে সহায়তা হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কায় সফরকালে ইউক্রেনের নেতা তার ইউরোপীয় মিত্রদের কাছ থেকে নতুন সামরিক ও আর্থিক সহায়তা চেয়েছেন।

হারিকেন মিলটনের কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জার্মানিতে রাষ্ট্রীয় সফর বাতিল করার পর পশ্চিম জার্মানির রামস্টাইন মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে শনিবার ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা বিষয়ক একটি পূর্ব-নির্ধারিত বৈঠক স্থগিত করা হয়।

জার্মানি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় সামরিক সহায়তা সরবরাহকারী। তবে পারমাণবিক অস্ত্রসজ্জিত রাশিয়ার সাথে ন্যাটোর উত্তেজনাপূর্ণ অচলাবস্থা আরো অবনতির আশঙ্কায় শোলজ ইউক্রেনে জার্মানির দূর-পাল্লার টরাস মিসাইল সিস্টেম পাঠানোর বিষয়টি নাকচ করেন।

- পোপের সাথে সাক্ষাৎ -

এর আগে জেলেনস্কি ভ্যাটিকানে বিশ্বের প্রায় ১৪০ কোটি ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের নেতা ৮৭ বছর বয়সী পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে তার সফরের কার্যসূচি শুরু করেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আক্রমণের পর পোপ ফ্রান্সিসের সাথে এটি ছিল তার দ্বিতীয় ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ।

ফ্রান্সিস বারবার ইউক্রেনে শান্তির আহ্বান জানিয়েছেন এবং নিয়মিতভাবে এর ‘শহিদ’ জনগণের জন্য প্রার্থনা করেছেন, কিন্তু তিনি এ বছরের শুরুতে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনীয়দের ‘সাদা পতাকা তুলে আলোচনা’ করার আহ্বান জানান। তার এ মন্তব্যের জেরে কিয়েভে ক্ষোভের জন্ম হয়েছে।

শুক্রবার সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে জেলেনস্কি বলেন, পোপের সাথে তার আলোচনায় ইউক্রেন থেকে রাশিয়ায় বন্দী এবং নির্বাসিত লোকদের ‘অবিশ্বাস্যভাবে বেদনাদায়ক’ প্রশ্নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। তিনি বলেন, তিনি আশা করেন যে ভ্যাটিকান সিটি এক্ষেত্রে তাদের সাহায্য করতে পারবে।

ভ্যাটিকান বলেছে যে জেলেনস্কি সফরকালে ‘ইউক্রেনের যুদ্ধের অবস্থা ও  মানবিক পরিস্থিতি’  এবং ‘ন্যায্য ও স্থিতিশীল শান্তিতে’ পৌঁছার উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার জেলেনস্কি প্যারিসে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সাথে আলোচনা করেন। এরপর তিনি রাশিয়ার সাথে যুদ্ধবিরতির শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা করেছেন মর্মে মিডিয়া রিপোর্ট নাকচ করে দেন।

‘এটি আমাদের আলোচনার বিষয় নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক নয়। রাশিয়া মিডিয়া বিভ্রান্তিকর ভুল তথ্য নিয়ে অনেক কাজ করে।’

জেলেনস্কি রাশিয়ার কাছে ভূমি ছেড়ে দেওয়ার সাথে জড়িত যে কোনো শান্তি পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, মস্কোকে প্রথমে ইউক্রেনের ভূখ- থেকে সমস্ত সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে।

- দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র -

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ান আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে ইউক্রেন এবার তার সবচেয়ে কঠিন শীতের মুখোমুখি হচ্ছে এমন সময় রুশ বাহিনী পূর্ব ফ্রন্টলাইন জুড়ে অগ্রসর হয়েছে এবং পাওয়ার গ্রিডকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে।

রাশিয়া শুক্রবার বলেছে যে তার বাহিনী ঝেলান ড্রুজ এবং অস্ট্রিভস্কের সামনের সারির গ্রামগুলো দখল করে নিয়েছে। এর আগেও মস্কো বেশ কয়েকবার ইউক্রেনের বিভিন্ন গ্রাম দখলের দাবি করে।

আঞ্চলিক গভর্নর জানান, দক্ষিণ ইউক্রেনের ওডেসা অঞ্চলে রাতভর রুশ হামলায় এক কিশোরীসহ চারজন নিহত এবং আরো ১০ জন আহত হয়েছে।

জেলেনস্কি রাশিয়ার একেবারে ভেতরে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার জন্য ব্রিটিশ স্টর্ম শ্যাডো মিসাইলসহ মিত্রদের সরবরাহ করা দূরপাল্লার অস্ত্র ব্যবহারের ছাড়পত্র পেতে মিত্রদের চাপ দিচ্ছেন।
কিন্তু ওয়াশিংটন ও লন্ডন রাশিয়ার সাথে সরাসরি সংঘর্ষে ন্যাটো মিত্রদেরও টানতে পারে এই আশঙ্কায় এটি অনুমোদন করা থেকে বিরত রয়েছে।

ইউক্রেনকে টরাস ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করতে শোলজের অস্বীকৃতি জার্মানিতে বিতর্কিত। এমনকি গ্রিনস ও লিবারেল ফ্রি ডেমোক্র্যাটস (এফডিপি)’র সাথে তার নিজের তিন-দলীয় জোটের মধ্যেও এ নয়ে তির্ক রয়েছে।

গ্রিনসের ইউরোপীয় এমপি আন্তন হোফ্রেইটার রাইনিশ পোস্ট পত্রিকাকে বলেছেন, ‘আমাদের অবশ্যই ইউক্রেনকে উল্লেখযোগ্যভাবে আরো বেশি বিমান প্রতিরক্ষা, গোলাবারুদ ও দূরপাল্লার অস্ত্র সরবরাহ করতে হবে।’

সরবরাহকৃত অস্ত্রের পরিসরের ওপর বিধিনিষেধ উত্তেজনা প্রশমনে অবদান রাখে না বরং রাশিয়াকে আরো বেশি আক্রমণের শক্তি জোগায়।

এফডিপির প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ মেরি-অ্যাগনেস স্ট্র্যাক-জিমারম্যান একই সংবাদপত্রকে বলেন: ‘আমি অত্যন্ত আশাবাদী যে জেলেনস্কি চ্যান্সেলরকে আবারও স্পষ্ট করে দেবেন যে ইউক্রেন যদি এই যুদ্ধে হেরে যায় তবে এটি ইউরোপের শেষ যুদ্ধ হবে না।’

টিএইচ