কারাবাখে বিচ্ছিন্নতাবাদী আর্মেনিয়ান বাহিনীর দখল থেকে ৬০টির বেশি সামরিক অবস্থানের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে আজারবাইজানের সামরিক বাহিনী। মঙ্গলবার হামলা শুরু করার পর এই সাফল্য তারা লাভ করেছে বলে জানিয়েছে আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আনর ইভাজভ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, `৬০টির বেশি আর্মেনিয়ান (বিচ্ছিন্নতাবাদী) সশস্ত্র বাহিনীর ইউনিট এখন আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর নিয়্ন্ত্রণে।`
নাগারনো-কারাবাখ আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের অংশ হিসেবে স্বীকৃত। তবে এখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক জাতিগত আর্মেনিয়ান এবং খ্রিস্টান। আর্মেনিয়ান সরকারের সাথে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ১৯৯০-এর দশকের প্রথম দিকে একবার এবং ২০২০ সালে আরেকবার দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ হয়। তিন বছর আগে আজারবাইজান নাগারনো-কারাবাগের বিশাল এলাকা দখল করে নেয়। পরে রাশিয়ার তদারকিতে সেখানে যুদ্ধবিরতি হয়।
এদিকে গত ৯ মাস ধরে আর্মেনিয়া ও কারাবাখের মধ্যকার সংযোগকারী ল্যাচিন করিডোরে অবরোধ আরোপ করে রেখেছে আজারবাইজান। আজারবাইজান জানিয়েছে, চার পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয় ব্যক্তির ল্যান্ড মাইন বিস্ফোরণে মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে তারা এই অভিযান শুরু করেছে।
কারাবাখের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, আজারবাইজানের অভিযানে পাঁচ ব্যক্তি নিহত হয়েছে, কয়েক ডজন লোক আহত হয়েছে। আজারবাইজান জানিয়েছে, তারা বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে না। তারা কেবল সামরিক স্থাপনাগুলোকে টার্গেট করছে।
এদিকে বিচ্ছিন্নতাবাদী এক কর্মকর্তা দাবি করেছেন, আজারবাইজানি হামলায় ২৫ জন নিহত এবং ১৩৮ জন আহত হয়েছে। জাতিগত আর্মেনিয়ান বিচ্ছিন্নতাবাদীরা আত্মসমর্পণ না করা পর্যন্ত নাগারনো-কারাবাখে `সন্ত্রাসবিরোধী` অভিযান বন্ধ হবে না বলে ঘোষণা করেছে আজারবাইজান। মঙ্গলবার আজারবাইজান জানিয়েছে, তারা বিচ্ছিন্নতাকামী ওই এলাকায় সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করেছে।
বাকু অস্ত্র হস্তান্তর এবং `অবৈধ প্রশাসন` ভেঙে দেয়ার জন্য `অবৈধ আর্মেনিয়ান সামরিক ফরমেশনের` প্রতি নির্দেশ দিয়েছে। কারাবাখের জাতিগত আর্মেনিয়ানরা মঙ্গলবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে আলোচনা শুরুর প্রস্তাব দিয়েছে। তবে এটা পরিষ্কার যে আজারবাইজানি কর্তৃপক্ষ চাচ্ছে, পার্বত্য এই ছিটমহলের বিজয় সম্পন্ন করতে। আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান অভিযোগ করেছেন, আজারবাইজান `জাতিগত শুদ্ধি অভিযানের লক্ষ্যে এই স্থল হামলা শুরু করেছে।
তবে দেশের কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে শত শত আর্মেনিয়ান বিক্ষোভকারী ইয়েরেভেনে পার্লামেন্টের বাইরে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে মত্ত হয়। তারা তাদের নেতাকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে অভিহিত করে তার পদত্যাগ আহ্বান করেন। আজারবাইজান জানিয়েছে, আলোচনা হতে পারে ইয়েভলাখে। স্থানটি কারাবাখ অঞ্চলের রাজধানী খানকেনদির ১০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। জাতিগত আর্মেনিয়ানরা একে বলে স্টেপনাকার্ট।
তুরস্কের সমর্থন
এদিকে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যিপ এরদোগান কারাবাখ অভিযানে আজারবাইজানের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে বলেছে, দেশটি তার ভূখণ্ড অখণ্ড রাখার অধিকার রাখে। নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে মঙ্গলবার বক্তৃতা করার সময় তিনি এই মন্তব্য করেন।
ইরানের মধ্যস্ততা করার প্রস্তাব
এদিকে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্ততা করার আহ্বান জানিয়েছে ইরান। দেশটি ২০২০ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলারও আহ্বান জানিয়েছে। উল্লেখ্য, রাশিয়ার মতো ইরানও আর্মেনিয়ার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে।
ফ্রান্স, জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি দেশ আজারবাইজানকে যুদ্ধ থামানোর অনুরোধ করেছে। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বায়েরবুক বলেছৈন, নাগারনো-কারাবাঘে সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ কনা করার প্রতিশ্রুতি আজারবাইজান লঙ্ঘন করেছে।
তারা অবিলম্বে সামরিক অভিযান বন্ধ করতে বলেছে। ফ্রান্সও এই হামলাকে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে অভিহিত করেছে।
এদিকে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া উভয়ের সাথে যোগাযোগ করে অবিলম্বে আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া। সূত্র : বিবিসি, আল জাজিরা, ডেইলি সাবাহ
টিএইচ