মায়ের সঙ্গে ছেলের ফোনালাপের সূত্র ধরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি ক্লু-লেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এ ঘটনায় জড়িত আরিফ একটি ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য। তাকে গ্রেপ্তারের পর এ হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচিত হয়।
ডিএমপি জানায়, গত ২২ জানুয়ারি ভোরে যাত্রাবাড়ী থানাধীন ধলপুর কমিউনিটি সেন্টারের পাশের সড়কে ছুরিকাঘাতে খুন হন খলু মিয়া (২৮)। এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে পুরাতন একটি ছিনতাই মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি মো. আরিফকে (২৮) গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর আরিফের সঙ্গে তার মায়ের ফোনালাপের সূত্রে বেরিয়ে আসে সেই হত্যাকাণ্ডের রহস্য।
রোববার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, গত ২২ জানুয়ারি ভোরে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ জানতে পারে, ধলপুর এলাকায় একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ভর্তি আছে। এ খবরের ভিত্তিতে থানা পুলিশ ঢামেকে পৌঁছালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিমকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে রক্তাক্ত স্থানটি দেখতে পায়।
ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিকটিম গোলাপবাগ থেকে পাঁয়ে হেঁটে ধলপুর কমিউনিটি সেন্টারের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ওৎ পেতে থাকা অজ্ঞাতনামা কয়েকজন ভিকটিমকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়।
ভিকটিমের কাছে প্রাপ্ত জিনিসপত্র ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় জানা যায়, ভিকটিমের নাম খলু মিয়া (২৮)। তিনি নারায়ণগঞ্জের রূপসী এলাকায় গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি সেদিন গাইবান্ধা থেকে সোনালী পরিবহনে করে রাত আনুমানিক সাড়ে তিনটায় গোলাপবাগে পৌঁছান। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ছুরিকাঘাতের শিকার হন তিনি।
তিনি বলেন, ক্লুলেস এ ঘটনার তদন্তে নেমে বেশকিছু ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করেও কোন কুলকিনারা করতে পারছিল না পুলিশ। ২৬ জানুয়ারি একটি ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে যাত্রাবাড়ী এলাকার নিজ বাসা থেকে আরিফকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়। গ্রেপ্তারের পর আরিফ তার মায়ের সঙ্গে ফোনালাপে জানায়, অন্য কোন ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি, আগের ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার আরিফের এই বক্তব্যটি সন্দেহজনক হওয়ায় খলু মিয়া হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। এর ভিত্তিতে আরিফের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ডে আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদেই বেরিয়ে আসে খলু মিয়া হত্যাকাণ্ডের আসল রহস্য।
একপর্যায়ে খলু মিয়াকে খুনের দায় স্বীকার করেন আরিফ, পরে তার হেফাজত থেকে খলু মিয়ার খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়।
আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে এ পুলিশ কর্মকর্তা জানান, একাধিক ছিনতাই মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হওয়ায় আরিফ দীর্ঘদিন ধরে তার নিজ বাসায় অবস্থান না করে পলাতক ছিলেন। কিন্তু খুনের ঘটনার পরপর পুলিশি তৎপরতা দেখে হত্যার ঘটনা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে বাসায় অবস্থান নেয়। যেন তাকে আগের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়।
এ পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ঘটনার সময় আরিফ অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে একটি ছুরিসহ ধলপুর নতুন রাস্তায় একটি ব্যাটারির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। ভিকটিম রাস্তা দিয়ে আসার পথে তারা তার গলায় ছুরি ধরলে তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। ঘটনার একপর্যায়ে তারা ভিকটিমের বুকে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাত করে ভিকটিমের মোবাইল ও মানিব্যাগ নিয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তার আরিফ আদালতে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তার অন্যান্য সহযোগীদের নাম-ঠিকানাও জানিয়েছেন।
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।
টিএইচ