শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post

মানবতাবিরোধী দুই ফাঁসির আসামি বিভিন্ন পরিচয়ে পলাতক ছিলেন: র‌্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক

মানবতাবিরোধী দুই ফাঁসির আসামি বিভিন্ন পরিচয়ে পলাতক ছিলেন: র‌্যাব

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি নকিব হোসেন আদিল সরকার ও মোখলেসুর রহমান মুকুলকে রাজধানীর দক্ষিণখান ও আশুলিয়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। তারা ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় পরিচয় গোপন রেখে বাসা ভাড়া নিয়ে আত্মগোপনে থাকতেন।

মঙ্গলবার (৩১) জানুয়ারি র‍্যাব মিডিয়া সেন্টার কাওরান বাজারে প্রেস ব্রিফিং থেকে এ তথ্য জানান র‍্যাবের মিডিয়া শাখার আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক, কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

ব্রিফিং থেকে জানা যায়, গত ২৩ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে নকিব হোসেন আদিল সরকার ও মো. মোখলেছুর রহমান মুকুলসহ ০৭ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ প্রদান করেন। র‍্যাব বর্ণিত মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‍্যাব-২ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর দক্ষিনখান ও আশুলিয়া এলাকা হতে নকিব হোসেন আদিল সরকার (৬৯), এবং মো. মোখলেছুর রহমান মুকুলকে (৬৭) গ্রেপ্তার করে।

আদিল সরকার ময়মনসিংহের ত্রিশালের মৃত মাহাতাব উদ্দিন সরকার গেদু চেয়ারম্যানের ছেলে এবং মোখলেছুর রহমান মৃত আব্দুল খালেক সরকারের ছেলে।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ময়মনসিংহের ত্রিশালের কাকচর গ্রামের ইউনুছ আলী নামক একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা নদী পারাপারে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা (জুন-জুলাইয়ের) দিকে ময়মনসিংহের ত্রিশালের আহমেদাবাদে একটি ক্যাম্প স্থাপন করে।

মুক্তিযোদ্ধাদের নদী পারাপারে সহযোগিতার কারণে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা বীর মুক্তিযুদ্ধা ইউনুছ আলীকে রাজাকারদের ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায় এবং রাজাকার ক্যাম্পের টর্চার সেলে নির্যাতনের পর ১৫ আগস্ট সকালে তাকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে।

উক্ত ঘটনায় মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ইউনুস আলীর ছেলে ২০১৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের বিচারিক আদালতে নকিব হোসেন আদিল সরকার ও মো. মোখলেছুর রহমান মুকুলসহ ০৯ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। পরবর্তীতে আদালত বিচারিক কার্যক্রমের জন্য মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করেন। এ প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলা নং-০৭/২০১৮ রুজু হয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় উভয়ের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে বর্ণিত অভিযোগের তদন্ত শেষে তদন্ত সংস্থা নকিব হোসেন আদিল সরকার ও মো. মোখলেছুর রহমান মুকুলসহ ০৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

উক্ত মামলায় আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। মামলার অভিযুক্ত দুইজন আসামি রায়ের পূর্বে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করে এবং গত ২৩ জানুয়ারি নকিব হোসেন আদিল সরকার ও মো. মোখলেছুর রহমান মুকুলসহ ০৭ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ প্রদান করেন।

গ্রেপ্তারকৃত নকিব হোসেন ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয় এবং পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে তাদের বিভিন্ন কাজে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করে। সে ১৯৭১ সালে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলাকায় স্থানীয় রাজাকার বাহিনী গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

নকিব হোসেন মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলাকায় স্বাধীনতাকামী নিরীহ বাঙ্গালিদের আটক, নির্যাতন, অপহরণ, হত্যা, লুটপাট, ঘরবাড়ি লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও গণহত্যার সাথে জড়িত থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে জানা যায়।

টিএইচ