২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেন শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরা।
তৎকালীন বিডিআর সদর দফতরে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারির ‘গণহত্যা’ তদন্তে জাতীয় স্বাধীন কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে গত অক্টোবরে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদ ও বিপ্লব কুমার পোদ্দার।
পরবর্তী সময়ে প্রকৃত সত্য বের করতে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিটি বা কমিশন গঠন করতে এবং ‘শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণায় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানিয়ে গত ৩ নভেম্বর স্বরাষ্ট্রসচিব (জননিরাপত্তা বিভাগ) বরাবর আবেদন করেন রিট আবেদনকারীরা।
এরপর রিটের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ৫ নভেম্বর হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। স্বরাষ্ট্রসচিব বরাবর করা আবেদন নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আবেদনটি ১০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে স্বরাষ্ট্রসচিবের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়।
এর ধারাবাহিকতায় ২ ডিসেম্বর রিটটি কার্যতালিকায় ওঠে। জাতীয় স্বাধীন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শুরু করেছে বলে সেদিন হাইকোর্টকে জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। পাশাপাশি দুই সপ্তাহ সময়ের আরজি জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আদেশের জন্য গত ১৫ ডিসেম্বর আদালতে ওঠে রিটটি।
ওইদিন আদালত বলে, পিলখানা হত্যাকাণ্ড ঘিরে হত্যা মামলায় (ডেথ রেফারেন্স) আপিল বিভাগে শুনানি চলমান। অপর মামলাটি ঢাকার বকশীবাজারে কারা অধিফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে বিচারাধীন। তাই রিট আবেদনকারীর চাহিদা অনুসারে প্রস্তাবিত কমিটি গঠন আদালতের আদেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে আপাতত কমিটি গঠন সম্ভব হচ্ছে না।
এ নিয়ে ভোক্তভোগীরা আন্দোলনের ডাক দিলে ১৭ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। বলেন, কমিটিতে সদস্য থাকবে পাঁচ থেকে ৯ জন। তাদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, প্রশাসনের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তারা থাকবেন।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআরের সদর দফতরে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। পরে মামলা দুটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়। বিচার হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন আলিয়া মাদরাসা মাঠসংলগ্ন অস্থায়ী এজলাসে। বিচার শেষে ঢাকা মহানগর তৃতীয় বিশেষ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে বিডিআরের সাবেক ডিএডি তৌহিদসহ ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু (প্রয়াত) ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ২৭৭ জনকে খালাস দেওয়া হয়। এ ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলাটি এখনো নিম্ন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
টিএইচ