ভয়-ভীতি দেখিয়ে অবৈধভাবে পাসপোর্ট করিয়েছিলেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। মঙ্গলবার দুপুরে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ৮ কর্মকর্তা একথা স্বীকার করেছেন। দুদকের তলবে সকালে দুর্নীতি দমন কমিশন অফিসে যান পাসপোর্ট অধিদপ্তরের এই সদস্যরা।
সাবেক আইজিপি বেনজীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি পাসপোর্টে আড়াল করেছেন তার পুলিশ পরিচয়। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তিনি সরকারি চাকরিজীবী পরিচয়ে নীল রঙের অফিশিয়াল পাসপোর্ট করেননি। সুযোগ থাকার পরও নেননি লাল পাসপোর্ট। এমনকি বেসরকারি চাকরিজীবী পরিচয়ে সাধারণ পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রেও আশ্রয় নিয়েছেন নজিরবিহীন জালিয়াতির।
তবে, নবায়নের সময় ধরা পড়লে নবায়ন কার্যক্রম আটকে দেয় পাসপোর্ট অধিদপ্তর। সে সময় তিনি র্যাবের মহাপরিচালক থাকায় চিঠি দেওয়া হয় র্যাবের সদর দপ্তরে। তবে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে ম্যানেজ করেন সব। পাসপোর্ট অফিসে না গিয়েই নেন বিশেষ সুবিধা।
দৈনিক কালের কণ্ঠের এক প্রতিবেদনে সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের বিপুল সম্পদের কথা তুলে ধরা হয়। এতে দাবি করা হয়, বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে রাজধানীর অভিজাত এলাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, পাঁচ তারকা হোটেলের শেয়ার, গাজীপুর, কক্সবাজার, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে শত শত বিঘা জমির মালিকানা রয়েছে।
এ খবর প্রকাশ হওয়ার পর সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীরের বিপুল অবৈধ সম্পদের অভিযোগ অনুসন্ধান করতে দুদকের কাছে আবেদন করেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। এর পরপরই বেনজীর আহমেদের বিপুল অবৈধ সম্পত্তির অভিযোগের অনুসন্ধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী সালা উদ্দিন রিগ্যান।
এই দুই ঘটনার পর গত ১৮ এপ্রিল দুদকের সভায় সাবেক এই পুলিশ প্রধানের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর এর জন্য একটি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করে দুদক। কমিটির সদস্যরা হলেন, দুদক উপপরিচালক হাফিজুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক নিয়ামুল হাসান গাজী ও জয়নাল আবেদীন। এরই মধ্যে বেনজীর ও তাঁর পরিবারের জাতীয় পরিচয়পত্র, আয়কর নথি ও কোম্পানির কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে দুদক। বেনজীর ও তাঁর স্ত্রী সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলবও করা হয়।
দুদক বলছে, গণমাধ্যমে অবৈধ সম্পদের খবর প্রকাশের পর থেকেই সম্পদ রক্ষায় তৎপর হয়ে উঠে বেনজীর। এ সময় নিজেদের শতাধিক ব্যাংক হিসাবও বন্ধ করে দেন তিনি। একে একে ৫০টি এফডিআর ভেঙে নগদ প্রায় ১০০ কোটি টাকা তুলে নেন বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। এছাড়া ব্যাংকের হিসাবে থাকা আরও কয়েক কোটি টাকা এ সময় তুলে নেওয়া হয়।
এর রেশ কাটতে না কাটতেই জানা যায়, বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যরা দেশ ছেড়েছেন। তবে তিনি কোথায় অবস্থান করছেন সে সম্বন্ধে সরকারের কাছে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য নেই।
গত ৬ মে বেনজীর আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছিল দুদক। এর একদিন আগে দেওয়া এক আবেদনে হাজির হতে সময় চান সাবেক পুলিশ প্রধান। পরে তাকে ২৩ জুন হাজির হতে নতুন সময় নির্ধারণ করে দুদক। তার স্ত্রী ও মেয়েরাও দুদকে হাজির হতে সময় প্রার্থনা করেন।
সেই হিসেবে রোববার হাজির হওয়ার কথা ছিলো বেনজীর আহমেদের। কিন্তু এবারও তিনি আসেননি। বরং ২১ জুন নিজের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আরেকটি চিঠি দিয়েছেন বেনজীর। এতেও তিনি উল্লেখ করেননি কোথায় আছেন।
টিএইচ