রাজধানীতে সাবেক স্বামীর কাছে থাকা সন্তানদের দেখতে এসে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত পাঁচ আসামিকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত ২৬ জানুয়ারি বিকেল ৩টার দিকে অজ্ঞাতনামা ৫ জনকে আসামি করে ভিকটিমকে জোরপূর্বক ধর্ষণ ও সহায়তার অপরাধে মামলা করা হয়। মামলার ঘটনাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং চাঞ্চল্যকর হওয়ায় ডিসি তেজগাঁও বিভাগের নির্দেশে এডিসি মোহাম্মদপুর জোন ও এসি মোহাম্মদপুর জোনের তত্ত্বাবধানে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করে।
শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বছিলা, গাবতলী, ডেমরা ও ভোলার তজুমুদ্দিন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ।
রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে এ বিষয়ে জানাতে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক।
তিনি জানান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- বিল্লাল হোসেন (২৫), আল-আমিন হোসেন (২৬), সবুজ (২৬), রাসেল ওরফে মোল্লা রাসেল (২৪) ও শফিকুল ইসলাম (২৬)।
আজিমুল হক বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও প্রযুক্তির সহায়তায় ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী ঘটনাস্থলে ৭ জন ব্যক্তি ও তিনটই রিকশার উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়। প্রযুক্তির সহায়তা ও সোর্সের মাধ্যমে গত ৩১ জানুয়ারি মোহাম্মদপুর থানার চাঁদ উদ্যান এলাকা হতে মো. শাহিনকে (১৯) গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার নিকট হতে ভিকটিমের ব্যবহৃত খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি দারুস সালাম থানার গাবতলী এলাকা হতে আসামি বিল্লাল হোসেন (২৫), ঢাকার ডেমরা হতে আসামি আল-আমিন হোসেন (২৬), মোহাম্মদপুরের বছিলা হতে মো. সবুজ (২৬) ও মো. রাসের ওরফে মোল্লা রাসেল (২৪) এবং ভোলা জেলার তমুমুদ্দিন এলাকা হতে আসামি মো. শফিকুল ইসলামকে (২৬) গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদের হেফাজত হতে অপরাধে ব্যবহৃত দুটি রিকশা উদ্ধার করা হয়। আসামিরা ভিকটিকে জোরপূর্বক ধর্ষণের কথা স্বীকার করে এবং পলাতক দুইজন সহযোগীর নাম-ঠিকানা প্রকাশ করে। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
এজাহারে ওই নারী উল্লেখ করেন, সম্প্রতি স্বামীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়েছে। পরে তিনি গ্রামের বাড়ি যশোরে চলে যান। তার সাবেক স্বামী সন্তানদের নিয়ে রাজধানীতে থাকতেন। তিনি (নারী) গত ২৫ জানুয়ারি সন্তানদের দেখতে ঢাকায় আসেন। কিন্তু এসে দেখেন, তার সাবেক স্বামী বাসা ছেড়ে দিয়েছেন। সন্তানদের না পেয়ে রাত ৯টার দিকে তিনি গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার জন্য একটি অটোরিকশায় ওঠেন।
অটোরিকশাচালকের সঙ্গে কথায় কথায় তিনি সন্তানদের কথা বলেন। অটোরিকশাচালক তাকে সন্তানদের খুঁজতে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়ে কয়েক ঘণ্টা বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাতে থাকেন। অটোরিকশাচালক তাকে নিয়ে ঘোরানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বলতে থাকেন।
কিছুক্ষণ পর ওই অটোরিকশায় জোর করে দুই ব্যক্তি উঠে পড়ে। নেমে যেতে বলা হলেও তারা নামেনি। একপর্যায়ে অটোরিকশাটি নির্জন একাটি জায়গায় গিয়ে থামে। তখন প্রায় মধ্যরাত। সেখানে দুজন আগে থেকেই অবস্থান করছিল। পরে একটি অস্থায়ী টিনের ঘরে নিয়ে অটোরিকশাচালকসহ চারজন তাকে ধর্ষণ করে। অন্য একজন পাহারায় ছিল। ওই নারীর চিৎকারে আশপাশের লোক জড়ো হলে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা পালিয়ে যায়।
একপর্যায়ে নারীর চিৎকারে নিরাপত্তাকর্মীসহ আশপাশে লোকজনের ছুটে আসেন। চালকসহ পাঁচজন পালিয়ে যান। পরে মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ ভুক্তভোগী নারীকে উদ্ধার করে। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠায় পুলিশ।
টিএইচ