কিশোরগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে বদলে গেছে ২২১১ টি পরিবারের হতদরিদ্র মানুষের জীবনমান। যে মানুষগুলোর এক সময় ছিল না কোনো স্থায়ী ঠিকানা। খাসজমি অথবা অন্যের জমির ওপর ঘর করে পরিবার-পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করত। আজ তারা নিজস্ব ঠিকানা, স্থায়ী নিবাসে বাস করছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না স্লোগানে জেলায় প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়ের প্রথম ধাপে মোট ২ হাজার ২১১টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
জেলায় চতুর্থ পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে করিমগঞ্জ উপজেলায় ১২টি, হোসেনপুর উপজেলায় ২২টি, মিঠামইন উপজেলায় ১২টি, নিকলী উপজেলায় ২০টি, বাজিতপুর উপজেলায় ৩২টি, কুলিয়ারচর উপজেলায় ৩৬টি, তাড়াইল উপজেলায় ৪৬টি, ইটনা উপজেলায় ৯২টি ঘর উপকারভোগীদের নিকট ২ শতাংশ জমিসহ হস্তান্তর করা হয়। গত ৯ আগস্ট আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় চতুর্থ পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে হোসেনপুর, করিমগঞ্জ, বাজিতপুর, কুলিয়ারচর, নিকলী, মিঠামইন উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে জেলায় উদ্ধারকৃত খাসজমির পরিমাণ ৬৬ দশমিক ৯৮ একর। এসব জমির স্থানীয় বাজারমূল্য প্রায় ৯৫ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অন্যদিকে জেলায় ক্রয়কৃত জমির পরিমাণ ১১২ দশমিক ৮২ শতক।
এ জমির স্থানীয় বাজারমূল্য ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। তিনি আরও বলেন, উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটি কর্তৃক ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার যাচাই বাছাইয়ের দিন নির্দিষ্ট তারিখ ও সময় নির্ধারণ করে মাইকিং করে ভূমিহীনদের জড়ো করা হয়।
উপস্থিত ভূমিহীনদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে, যাচাই করে, প্রাথমিক বাছাই করা হয়। আমরা নির্মাণস্থলে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ প্রকল্পের কাজ তদারকি করেছি। উপজেলা মনিটরিং টিমও নিয়মিত মনিটরিং করেছে। টেকসই ও উন্নতমানের মালামাল ব্যবহার করে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আবুল কালাম আজাদ আরো জানান, কোনো কারণে নতুন করে কেউ ভূমিহীন এবং গৃহহীন হলে ওই সব পরিবারকে একই ধরনের প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ আরো বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় দেয়া হয়েছে এসব ঘর। আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। ঘরগুলো গুণগত মান বজায় রেখে নির্মাণ করা হয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন প্রত্যেক কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে।
সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়নের আশ্রয়ণ ঘরের এক বাসিন্দা বলেন, আগে ছোট ভাঙা ঘরে সন্তান নিয়ে শীত-বৃষ্টির সঙ্গে লড়াই করে অন্যের জমিতে থেকেছি; এখন সরকার নতুন ঘর দেয়ায় পরিবার নিয়ে নিজের ঘরে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছি। রাস্ট্রপতি আব্দুল হামিদ পল্লী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের অপর এক বাসিন্দা বলেন, শেষ বয়সে সরকারের জমিসহ পাকা ঘর পেয়ে অনেক ভালো আছি। পাকা ঘরে থাকব কখনো কল্পনা করিনি। প্রধানমন্ত্রী ঘরসহ জমিও দিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ।
উল্লেখ্য, গত ১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাস্তবায়নাধীন আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান (যুগ্মসচিব) কিশোরগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার যশোদল আশ্রয়ণ প্রকল্প ও মিঠামইন উপজেলার রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ পল্লী আশ্রয়ণ প্রকল্প পরিদর্শন করেন এবং পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে আশ্রয়ণ প্রকল্প বিষয়ে মতবিনিময় করেন।
টিএইচ