- স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ১১৮৯ কোটি টাকা
- কৃষিতে বরাদ্দ কমল ৮৬৮৮ কোটি টাকা
- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বরাদ্দ ১১০০ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব‘
স্মার্ট’ লক্ষ্যে বাজেটে ব্যয় বাড়ল ১৫ শতাংশ
তৈরি হবে পেপারলেস ও ক্যাশলেস সোসাইটি
রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত নয়
—এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম
অর্থবছর শুরু হতে না হতেই বাজবে নির্বাচনি ডামাডোল। ঊর্ধ্বমূখী মূল্যস্ফীতিতে জনজীবনে চলছে নাভিশ্বাস। তীব্র ডলার সংকট সামাল দিতে রিজার্ভের পতন অব্যাহত। দেশীয় মুদ্রা টাকার নজিরবিহীন অবনমন। ব্যাংক ব্যবস্থায় তারল্য সংকটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করে চলতে হচ্ছে সরকারকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বৈদেশিক ঋণ প্রক্রিয়ায় আইএমএফের কঠিন শর্ত। সংস্কারের ধাক্কায় ওলটপালট সব। এমন পরিস্থিতিতে চাপমুক্তির কৌশলী বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সরকারের বর্তমান মেয়াদের শেষ বছরে এবং দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে জনতুষ্টির খুব বেশি সুযোগ ছিল না অর্থমন্ত্রীর। তারপরও স্মার্ট বাংলাদেশে পৌঁছানোর নির্বাচনি স্লোগানটিকেই তিনি বাজেটে ফিরিয়ে এনেছেন। তার এবারের বাজেটের শিরোনাম ‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। তার আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর ওই প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন। নতুন অর্থবছরের জন্য সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত হয়েছে। প্রস্তাবিত এই ব্যয় বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের (ছয় লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা) চেয়ে ১৫.৩৩ শতাংশ বেশি। টাকার ওই অংক বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৫.২১ শতাংশের সমান। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে মুস্তফা কামালের দেয়া বাজেটের আকার ছিল ২০২১-২২ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটের ১৪.২৪ শতাংশ বেশি এবং জিডিপির ১৫.২৩ শতাংশের সমান। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ মাথাপিছু আয় হবে কমপক্ষে ১২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার; দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকবে ৩ শতাংশের কম মানুষ আর চরম দারিদ্র্য নেমে আসবে শূন্যের কোঠায়; মূল্যস্ফীতি সীমিত থাকবে ৪-৫ শতাংশের মধ্যে; বাজেট ঘাটতি থাকবে জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে; রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত হবে ২০ শতাংশের ওপরে; বিনিয়োগ হবে জিডিপির ৪০ শতাংশ। ‘শতভাগ ডিজিটাল অর্থনীতি আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক স্বাক্ষরতা অর্জিত হবে। সবার দোড়গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে যাবে। স্বয়ংক্রিয় যোগাযোগ ব্যবস্থা, টেকসই নগরায়ণসহ নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সব সেবা থাকবে হাতের নাগালে। তৈরি হবে পেপারলেস ও ক্যাশলেস সোসাইটি। সবচেয়ে বড় কথা— স্মার্ট বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হবে সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা।’ বর্তমান সরকারের বাজেটগুলোতে উন্নয়ন খাত বরাবরই বেশি গুরুত্ব পেয়ে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও উন্নয়ন ব্যয় ১৫ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হয়েছে দুই লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এবার পরিচালন ব্যয় (ঋণ, অগ্রিম ও দেনা পরিশোধ, খাদ্য হিসাব ও কাঠামোগত সমন্বয় বাদে) ধরা হয়েছে চার লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে প্রায় ১৪.৭২ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা যাবে সরকারের ঋণের ?সুদ পরিশোধে, যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের প্রায় ২০ শতাংশ। অনুন্নয়ন ব্যয়ের আরও প্রায় ১৬.২০ শতাংশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যয় হয়ে, যার পরিমাণ অন্তত ৭৭ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আহরণে এনবিআর বিদায়ী অর্থবছরের লক্ষ্যের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও মুস্তফা কামালের আশা, নতুন অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের প্রায় ৬৬ শতাংশ তিনি রাজস্ব খাত থেকে পাবেন। তার প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ তিন হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এই অংক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত রাজস্ব আয়ের ১৫.৫০ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলে এনবিআরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১৬ শতাংশের বেশি। টাকার ওই অংক মোট বাজেটের ৫৬.৪৪ শতাংশের মতো। গতবারের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে, এক লাখ ৬৩ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। এই অংক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১২ শতাংশের মতো। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল এক লাখ ৪১ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। সংশোধনে তা বাড়িয়ে এক লাখ ৪৬ হাজার ২২৭ কোটি টাকা করা হয়। আয়কর ও মুনাফার ওপর কর থেকে এক লাখ ৫৩ হাজার ২৬০ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার আশা করা হয়েছে এবারের বাজেটে। বিদায়ী সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল এক লাখ ২১ হাজার ৯৪ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক থেকে ৪৬ হাজার ১৫ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৬০ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা, রপ্তানি শুল্ক থেকে ৬৬ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে চার হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে এক হাজার ৫৪০ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ ছাড়া বৈদেশিক অনুদান থেকে তিন হাজার ৯০০ কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে বাজেট প্রস্তাবে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন। বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল চার লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা, সংশোধনে তা সামান্য কমিয়ে চার লাখ ৩৬ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা করা হয়, যদিও মার্চ পর্যন্ত সময়ে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৬০ শতাংশ অর্জিত হয়েছে।
বাজেট প্রতিক্রিয়ায় অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘আগামী অর্থবছরের জন্য যে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, সেটি বাস্তবসম্মত নয়। এটি অর্জন কঠিন হবে। তবে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। জিডিপির অনুপাতে কর আহরণ বিশ্বের সর্বনিম্ন দেশের তালিকায় বাংলাদেশ। এমনকি পার্শ্ববর্তী নেপালের চেয়েও কম আদায় হয়।’ অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণ পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ, ব্যয় দক্ষতা বৃদ্ধি ও সাশ্রয়ী অর্থায়নের দেশি-বিদেশি উৎস অনুসন্ধান হবে রাজস্ব খাতের নীতি-কৌশল। রাজস্ব আহরণে সব সম্ভাবনাকে আমরা কাজে লাগাতে চাই। ‘রিটার্ন দাখিল পদ্ধতি সহজীকরণসহ অন্যান্য সংস্কারের মাধ্যমে কর নেট সমপ্রসারণ, কর অব্যাহতি যৌক্তিকীকরণ, স্বয়ংক্রিয় ও স্বচ্ছ পদ্ধতিতে মূল্য সংযোজন কর আদায় সহায়ক ইলেকট্রনিক ফিসকাল ডিভাইস স্থাপন ও সমপ্রসারণ, অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন, কর প্রশাসনের অটোমেশন ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে কর রাজস্ব আদায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করা হবে।’
২০২২-২৩ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। সংশোধনে তা ছয় লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। নতুন অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রী যে বাজেট প্রস্তাব সংসদের সামনে তুলে ধরেছেন, তাতে আয় ও ব্যয়ের সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে রেকর্ড দুই লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫.২ শতাংশের সমান। সাধারণত ঘাটতির পরিমাণ ৫ শতাংশের মধ্যে রেখে বাজেট প্রণয়নের চেষ্টা হয়। তবে টাকা জোগানোর চাপ থাকায় গত কয়েক বছর ধরেই তা সম্ভব হচ্ছে না। বরাবরের মতোই বাজেট ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রীকে নির্ভর করতে হবে অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ঋণের ওপর। তিনি আশা করছেন, বিদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯০ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ করে ওই ঘাটতি তিনি মেটাবেন। অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে রেকর্ড এক লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে আরও পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে বাজেটে। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। ৯ মাসের প্রাক্কলনের ভিত্তিতে অর্থবছর শেষে তা ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ হবে বলে সরকার ধারণা করছে। তারপরও অর্থমন্ত্রী আশা করছেন, তার নতুন বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারলে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে আটকে রেখেই ৭.৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব হবে।
স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ১১৮৯ কোটি টাকা : আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শতকরা বিবেচনায় এই বরাদ্দ মোট প্রস্তাবিত বাজেটের ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা ছিল। অর্থাৎ প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ছে এক হাজার ১৮৯ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মানসম্মত ও জনবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা আমাদের সরকারের অন্যতম নির্বাচনি অঙ্গীকার। এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বিশেষ করে কোভিডকালে স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত অর্থায়ন সংগ্রহ ও তার ব্যবস্থাপনা, দ্রুততম সময়ে ভ্যাকসিন ক্রয় ও প্রয়োগ করেছি। জনগণকে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন প্রদানে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম পাঁচ দেশের মধ্যে অবস্থান করছে।’
কোভিড পরিস্থিতি পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ : তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ১৬টি জাতীয় গাইডলাইন, অন্যান্য নির্দেশিকা, চারটি এসওপি (অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং প্রসিডিউর) এবং ১৩টি গণসচেতনতামূলক উপকরণ তৈরি করা হয়েছে। কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে ১২ হাজার ৮৬০টি শয্যা এবং এক হাজার ১৮৬টি আইসিইউর সংস্থান করা হয়েছে। দেশের সব জেলা হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ মোস্তফা কামাল বলেন, ‘সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালে কমপক্ষে পাঁচটি শয্যা কোভিড রোগীদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী ভবিষ্যতে এ সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। মোবাইল ফোনে কোভিড-১৯ এর সেবা প্রদান ও স্বাস্থ্য বাতায়নসহ অন্যান্য হটলাইনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান অব্যাহত রেখেছি। সারা দেশে ১৬২টি পরীক্ষাগারে আরটিপিসিআর টেস্ট করা হচ্ছে। এ ছাড়াও ৫৭টি জিন এক্সপার্ট মেশিনের মাধ্যমে এবং ৬৬৬টি কোভিড-১৯ র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট সেন্টারের মাধ্যমে কোভিড-১৯ টেস্ট করা হচ্ছে।’
সবার জন্য সুলভ ও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা : অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে সাফল্যের ধারাবাহিকতায় টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের মূল বৈশিষ্ট্য হলো— অগ্রাধিকারভিত্তিক সেবাসমূহ সম্প্রসারণ, অধিক সংখ্যায় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্তকরণ ও সেবাগ্রহীতার ব্যক্তিগত ব্যয় হ্রাস করা। এক কথায় আর্থিক কষ্ট ব্যতিরেকেই সব নাগরিকের জন্য গুণগত স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা চতুর্থ স্বাস্থ্য, ও পুষ্টি খাত কর্মসূচির আওতায় ৩১টি অপারেশনাল প্ল্যানের মাধ্যমে সারা দেশে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছি।’ তিনি বলেন, ‘প্রতিরোধযোগ্য রোগসমূহ থেকে শিশুদের সুরক্ষা দিতে চলমান রাখা হয়েছে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি-ইপিআই। ১৯৮৫ সালে ইপিআই কভারেজ ছিল মাত্র ২ শতাংশ, যা বর্তমানে ৯৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ১০৬টি উপজেলায় মাল্টিপারপাস হেলথ (এমএইচভি) কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। দরিদ্র জন্য পরীক্ষামূলকভাবে স্বাস্থ্যসুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় টাঙ্গাইল জেলার ১১টি আন্তঃবিভাগীয় রোগীদের (স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি) বেনিফিট প্যাকেজের অধীনে ৭৮টি নির্ধারিত রোগের মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে।’
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবায় কমিউনিটি ক্লিনিক : মোস্তফা কামাল বলেন, ‘গ্রামীণ জনগণের কাছে সরাসরি স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর কার্যকর মাধ্যম হিসেবে এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৩৮৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছি। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সরকার ও জনগণের সম্মিলিত অংশীদারিত্বে পরিচালিত হয়। ক্লিনিকের জন্য জমি দেয়ার পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারা ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনায়ও ভূমিকা রাখেন। ক্লিনিক পরিচালনা ও ওষুধ-চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যয় নির্বাহের দায়িত্ব সরকারের। ক্লিনিকে মা, নবজাতক ও অসুস্থ শিশুর সমন্বিত সেবা (আইএমসিআই), প্রজননস্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা, সাধারণ আঘাতের চিকিৎসা ছাড়াও পুষ্টিসেবা দেয়া হয়।’ তিনি বলেন, ‘ক্লিনিকে ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো অসংক্রামক রোগ শনাক্ত করা হয়। বয়স্ক, কিশোর-কিশোরী ও প্রতিবন্ধীদের লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা ও পরামর্শ দেয়া হয়। ক্লিনিক থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ ছাড়াও শিশুদের অনুপুষ্টিকণার প্যাকেট দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী কমিউনিটি ক্লিনিকে বিনাপয়সায় ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ইনসুলিন দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে দৈনিক গড়ে ৪০ জন সেবাপ্রার্থী সেবা গ্রহণ করে থাকেন, যার ৮০ শতাংশই নারী ও শিশু। সারা দেশে প্রায় চার হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাভাবিক প্রসবসেবা দেয়া হয়।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশের মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা, দায়বদ্ধতা এবং দেশবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থনের উদ্ভাসিত আলোয় ২০৪১ সালের মাঝে সম্পূর্ণ ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত জ্ঞানভিত্তিক উন্নত ‘স্মার্ট বাংলাদেশে উন্নীত হওয়ার মাধ্যমে জাতির পিতার অন্তর-মন-প্রোথিত ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্ন পূরণের সুবর্ণ রেখাটি বাংলাদেশ স্পর্শ করবে বলে আশাবাদ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। উন্নয়ন অগ্রযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ শিরোনামে এবারের বাজেটের সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ডলার সংকটে সৃষ্ট অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা। এ ছাড়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, ভর্তুকির চাপ সামলানো এবং রাজস্ব আয় বাড়ানোসহ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বাজেটে। পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা কৃষি, খাদ্য, নতুন কর্মসংস্থান সৃজন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় নিয়ে আসা। আগামী এক বছর দেশ পরিচালনার সার্বিক আয়-ব্যয়ের হিসাব রয়েছে এই বাজেটে।
কৃষিতে বরাদ্দ কমল ৮৬৮৮ কোটি টাকা : আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে কৃষি মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ২৫ হাজার ১২২ কোটি টাকা। যা গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে আট হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা কম। গত অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে কৃষিতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ২৪ হাজার ২২৪ কোটি টাকা। যদিও সংশোধিত বাজেটে কৃষি খাতে তা উন্নীত হয় ৩৩ হাজার ৮১০ কোটি টাকায়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে কৃষি মন্ত্রণালয়ে ২৫ হাজার ১২২ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়। যা গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ২৪ হাজার ২২৪ কোটি টাকা। আর সংশোধিত বাজেটে ছিল ৩৩ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চার হাজার ২৪০ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়। যা গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল তিন হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। যদিও ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ছিল তিন হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা। আর খাদ্য মন্ত্রণালয়ে ছয় হাজার ৫১৮ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়। যা গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ছয় হাজার ২১৩ কোটি টাকা। অবশ্য সংশোধিত বাজেটে তা দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৯২৭ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষি, খাদ্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৫ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বরাদ্দ ১১০০ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব : ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে জননিরাপত্তা বিভাগে এক হাজার ১০১ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় জাতীয় সংসদে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জননিরাপত্তা বিভাগে (পুলিশ-র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) ২৫ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। গত অর্থবছরে যা ছিল ২৪ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা। গত বছরের তুলনায় এক হাজার ১০১ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
তবে গত অর্থবছরে জননিরাপত্তা বিভাগের সংশোধিত বাজেট ছিল ২২ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। এবারের বাজেটের মূল দর্শন হলো— ২০৪১ সালের মধ্যে সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ। স্মার্ট বাংলাদেশ চারটি মূল স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি ও স্মার্ট ইকোনমি। অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট হবে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে প্রথম বাজেট। এবারের বাজেটে সংগত কারণেই স্বাস্থ্য, কৃষি, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। অর্থবছরের পুরো সময়জুড়েই থাকবে সরকারের নানা ধরনের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি এবং বাড়ানো হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য বাজেটের আকার চূড়ান্ত করা হয়েছে সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেট ছিল ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। তা সংশোধিত বাজেটের চেয়ে এক লাখ এক হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বেশি। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ধরা হয়েছে দুই লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছর ছিল দুই লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। নতুন বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি (অনুদান ব্যতীত) ধরা হচ্ছে দুই লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয় দুই লাখ ২৭ হাজার ৫০৭ টাকা। মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছেপাঁচ লাখ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরে ছিল চার লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ছয় শতাংশ।
নতুন বাজেটে বাড়ছে ভ্রমণ খরচ : দেশে-বিদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাড়ছে খরচ। এসব ভ্রমণে যাত্রীপ্রতি যে করারোপ করা হতো, নতুন অর্থবছরের বাজেটে তা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ২০০৩ সালের ভ্রমণ কর আইনের সংশোধনী প্রস্তাবে দেশে-বিদেশে ভ্রমণ করের নতুন হার নির্ধারণ করেছেন তিনি। নতুন প্রস্তাব ভ্রমণ কর দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। আকাশপথে উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, চীন, জাপান, হংকং, উত্তর কোরিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া ও তাইওয়ান যাওয়ার ক্ষেত্রে যাত্রীপ্রতি ছয় হাজার টাকা কর দিতে হবে। বর্তমানে এই করের পরিমাণ দুই হাজার ৫০০ টাকা।
আকাশপথে সার্কভুক্ত কোনো দেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে। এক্ষেত্রে বর্তমান কর ৮০০ টাকা। এই দেশগুলোর বাইরে আকাশপথে অন্য কোনো দেশে গেলে চার হাজার টাকা কর আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা এখন ১৮০০ টাকা। আকাশপথে দেশের অভ্যন্তরে ভ্রমণের ক্ষেত্রেও যাত্রীপ্রতি ২০০ টাকা কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আগে কোনো ভ্রমণ কর ছিল না। স্থলুপথে যে কোনো দেশে গেলে কর দিতে হবে এক হাজার টাকা, জলপথে অন্য দেশে গেলেও একই কর দিতে হবে। অন্য দেশে স্থলপথে ভ্রমণের ক্ষেত্রে এখন ৫০০ টাকা এবং জলপথে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ৮০০ টাকা কর দিতে হচ্ছে। অর্থাৎ স্থলপথে ভারত ভ্রমণের ক্ষেত্রে এখন কর দ্বিগুণ হলো। তবে ১২ বছর পর্যন্ত যাত্রীদের ক্ষেত্রে উল্লিখিত হারের অর্ধেক হারে কর আদায়ের প্রস্তাব করা হয়।
যাদের ভ্রমণ কর দিতে হবে না
১. সংশোধন প্রস্তাবে আগের মতোই কিছু ভ্রমণকারীর ক্ষেত্রে ভ্রমণ কর রেয়াত দেয়া হয়েছে।
২. পাঁচ বছর বা তার চেয়ে কম বয়সি যাত্রীরা।
৩. হজ পালনের জন্য সৌদি আরবে গমনকারী ব্যক্তি।
৪. অন্ধ ব্যক্তি বা ক্যানসারে আক্রান্ত রোগী বা স্ট্রেচার ব্যবহারকারী পঙ্গু ব্যক্তি।
৫. জাতিসংঘের কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।
৬. বাংলাদেশে অবস্থিত কূটনৈতিক মিশনের কূটনীতিক মর্যাদাসম্পন্ন সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।
৭. বাংলাদেশে কর্মরত বিশ্বব্যাংক, জার্মান কারিগরি সংস্থা এবং জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্য।
৮. বিমানে কর্তব্যরত ক্রু।
৯. বাংলাদেশের ভিসাবিহীন ট্রানজিট যাত্রী, যারা ৭২ ঘণ্টার বেশি বাংলাদেশে অবস্থান করবেন না।
১০. যে কোনো বিমান সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশি নাগরিক, যিনি বিনা ভাড়ায় অথবা হ্রাসকৃত ভাড়ায় বিদেশ যাবেন।
১১. এর বাইরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা যে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তি শ্রেণিকে এই ভ্রমণ কর থেকে অব্যাহতি দিতে পারবে।
ভ্রমণ কর আদায়ের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা সংস্থা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরকারি কোষাগারে করের টাকা জমা দিতে ব্যর্থ হলে যে মূল আদায়কৃত অর্থ এবং এর ওপর মাসিক শতকরা দুই শতাংশ হারে জরিমানা আদায় করা হবে।
অর্থমন্ত্রী যে বাজেট বক্তব্য দিয়েছেন, তার শিরোনাম দেয়া হয়েছে ‘উন্নয়নের অভিযাত্রায় দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’। আগামী এক বছর দেশ পরিচালনার সার্বিক আয়-ব্যয়ের হিসাব রয়েছে এই বাজেটে। এটি আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম ও বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেট ২৬ জুন অনুমোদন হবে। আর ১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হবে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হচ্ছে সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বিশাল এ বাজেটের ঘাটতি দুই লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে দুই লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির পাঁচ দশমিক দুই শতাংশ।
বরাদ্দ কমেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের : বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অনেকটাই ভালো অবস্থান তৈরি করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়েছে। এ ছাড়া মানবসৃষ্ট দুর্যোগও আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এই মন্ত্রণালয়ের বাজেট কিছুটা কমানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল যে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন সেখান থেকে জানা গেছে এ তথ্য। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে বাজেট প্রস্তাব দেয়া হয়েছে ১০ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ৬৪৬ কোটি টাকা কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটে মন্ত্রণালয়টিতে বাজেট প্রস্তাব দেয়া হয় ১০ হাজার ২২৯ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে মন্ত্রণালয় বরাদ্দ পায় ১০ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।
উন্নত হচ্ছে সরকারি কর্মচারীদের আবাসন সুবিধা : প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীদের জন্য আবাসন সুবিধা ৮ শতাংশ হতে ৪০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য অর্জনে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তাদের জন্য আরও আট হাজার ৮৩৫টি ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করার সময় এ তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বেলা ৩টায় জাতীয় সংসদে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন চলছে। এতে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপনে মন্ত্রী সরকারি আবাসনের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ছয় হাজার ৫০৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। পাঁচ হাজার ২১১টি ফ্ল্যাট নির্মাণের কাজ চলমান। আরও আট হাজার ৮৩৫টি ফ্ল্যাট নির্মাণ ও ৬৪ জেলায় সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ডরমিটরি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে চলমান প্রকল্পগুলো শেষ হলে সরকারি কর্মচারীদের আবাসন সুবিধা ১৫ শতাংশে উন্নীত হবে। সিরাজগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে ছিন্নমূল জনগণের জন্য অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। যার মাধ্যমে প্রায় ৩৬ হাজার ছিন্নমূল ও নিম্নআয়ের মানুষ উপকৃত হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকায় চারটি স্যাটেলাইট সিটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে পদ্মা বহুমুখী সেতুর উভয় প্রান্তে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সিটি নির্মাণসহ ঢাকার পূর্বাচলে আধুনিক ও নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী সম্পন্ন ১৪২তলা আইকনিক টাওয়ার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। অর্থমন্ত্রী যে বাজেট বক্তব্য দিচ্ছেন তার শিরোনাম দেয়া হয়েছে— ‘উন্নয়নের অভিযাত্রায় দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে।’ আগামী এক বছর দেশ পরিচালনার সার্বিক আয়-ব্যয়ের হিসাব রয়েছে এ বাজেটে। এটি আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম ও বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেট ২৬ জুন অনুমোদন হবে। আর ১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হচ্ছে সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বিশাল এ বাজেটের ঘাটতি দুই লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে দুই লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা; যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ।
টিএইচ