ব্যাটারিচালিত যানবাহনের বিআরটিএ কর্তৃক লাইসেন্স প্রদানসহ ১০ দফা দাবিতে সমাবেশ করেছে রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়ন।
আজ রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে ১০ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি পেশ করার উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় অভিমুখে মিছিল নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন আয়োজকরা। তবে মিছিলটি নগরীর কদমফুল ফোয়ারার সামনে পৌঁছালে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে বলে অভিযোগ সংগঠনটির নেতাকর্মীদের।
সমাবেশে অংশ নিয়ে সিপিবি নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, সরকার লুটপাটকারী সিন্ডিকেট ও মজুতদারদের স্বার্থে বাজারে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। যার প্রধান শিকার দেশের শ্রমজীবী মানুষ। একদিকে সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা, অন্যদিকে বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও নির্যাতনের মধ্য দিয়ে শ্রমজীবীদের রুটি-রুজির অবলম্বন সংকুচিত করা হচ্ছে।
সমাবেশে মনজুরুল আহসান খান বলেন, মন্ত্রী-এমপি-আমলাদের বেতন বৃদ্ধি হলে তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে সেটা বাস্তবায়ন করেন। সম্ভব হলে পূর্বের সময় থেকেই বেতন ও সুবিধা বৃদ্ধি কার্যকর হয়। সরকার ব্যাটারিচালিত রিকশার লাইসেন্স দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিন্তু তা কার্যকর হচ্ছে না। বরং পুলিশ ও সরকারদলীয় গুন্ডাদের মাসোয়ারা ঠিক রাখতে নীতিমালা প্রণয়ন ও লাইসেন্স প্রদান আটকে আছে। অবিলম্বে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।
সমাবেশে আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন বলেন, ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের এ বাহন অর্থনীতিতে আরও ভূমিকা রাখতে ব্যাটারিচালিত রিকশা শ্রমিকরা সরকারকে রাজস্ব দিতে চান। আমাদের দাবি, একটি নীতিমালার মাধ্যমে লাইসেন্স প্রদান করা হোক। লাইসেন্স হওয়ার আগ পর্যন্ত রাস্তায় এবং নিচু এলাকায় আঞ্চলিকভাবে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে দেওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের আদেশ বাস্তবায়ন করতে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক আটক বন্ধ রাখা হোক।
সমাবেশে রাগীব আহসান মুন্না বলেন, সরকার আমাদের লাইসেন্সের দাবিতে কর্ণপাত করছে না। ফলে ব্যাটারিচালিত যানবাহন নিয়ে চলছে প্রচুর লুটপাট ও অরাজকতা। কার্ড ব্যবসার নামে হাজার হাজার কোটির টাকার দুর্নীতি ও লুটপাট চলছে। চাঁদাবাজদের সঙ্গে এ খাতে অসাধু প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও জড়িত। লুটপাটকারী ও চাঁদাবাজদের রুখে দিতে শ্রমিকের গণআন্দোলন এখন সময়ের দাবি।
১০ দফা দাবিগুলো হলো-
১. আধুনিকায়নের জন্য পর্যাপ্ত সময় বরাদ্দ করে বুয়েট প্রস্তাবিত মডেলে আধুনিকায়নসহ বিআরটিএ কর্তৃক লাইসেন্স প্রদান করা। আধুনিকায়নের জন্য আর্থিক প্রণোদনা প্রদান।
২. বিআরটিএ কর্তৃক ব্যাটারিচালিত যানবাহন চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করা ও লাইসেন্স প্রদান সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ব্যাটারিচালিত যানবাহন আটক বন্ধে নির্বাহী আদেশ জারি করা।
৩. ব্যাটারিচালিত যানবাহন শ্রমিকদের ওপর জুলুম-নির্যাতন-চাঁদাবাজি বন্ধ করা। কার্ড- টোকেনের নামে চলমান অবৈধ চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ও ট্রাফিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৪. ব্যাটারিচালিত যানবাহন গ্যারেজের ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করা।
৫. বিভিন্ন রাস্তায় রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা। রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক ও সাইকেলের জন্য সকল সড়কে সার্ভিস লেন নির্মাণ করা। বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার ভিত্তিতে রাস্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থা আধুনিকায়ন ও ব্যাটারিচালিত যানের জন্য র্যাকার বিল কমিয়ে যৌক্তিক করা।
৬. শ্রমিকদের জন্য রেশন চালু ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা।
৭. বিনামূল্যে চিকিৎসা ও শিক্ষা নিশ্চিত করা।
৮. ব্যাটারিচালিত যানবাহনকে গণপরিবহন হিসেবে শিল্পের স্বীকৃতি ও শিল্পের বিকাশে সহায়তার জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনার এক অঙ্কের সুদে জামানতবিহীন ঋণ প্রদান।
৯. “জীবিকা সুরক্ষা আইন” প্রণয়ন করা।
১০. রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিকদের মানুষ হিসেবে নাগরিক অধিকার ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করা।
টিএইচ