সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১
The Daily Post

২২তম রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর পরিচয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

২২তম রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর পরিচয়

সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হতে যাচ্ছেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। রাষ্ট্রপতি পদে তাঁর মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তাদের মনোনীত প্রার্থীই হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি, এটি মোটামুটি নিশ্চিত। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি প্রার্থী না দেওয়ার কথা আগেই জানিয়ে দিয়েছে।

বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী সাহাবুদ্দিন একাধারে আইনজীবী, অধ্যাপক, সাংবাদিক ও বিচারক ছিলেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার তিনি। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদেরও সদস্য।

৭৫র’ পরবর্তী বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করায় ২০ আগস্ট সামরিক আইনের ৭ ধারায় আটক হয়ে প্রায় তিন বছর কারাগারে কাটান মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন।

১৯৪৯ সালে পাবনা শহরের জুবিলি ট্যাঙ্কপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর বাবা মরহুম শরফুদ্দীন আনসারী এবং মা মোসাম্মৎ খায়রুন্নেছা। পাবনা শহরের পূর্বতন গান্ধি বালিকা বিদ্যালয়ে (বর্তমানে টাউন গার্লস স্কুল) তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে রাধানগর মজুমদার একাডেমিতে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।

তিনি ১৯৬৬ সালে পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এসএসসি, ১৯৬৮ সালে এইচএসসি পাস করেন ও ১৯৭১ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৭২ সালে) বিএসসি পাস করেন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা শহিদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রাবস্থায় ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি।

স্বাধীন বাংলা ছাত্রপরিষদের পাবনা জেলার নেতা হিসেবে পাবনায় স্বাধীন বাংলার প্রথম পতাকা উত্তোলনকারীদের অন্যতম মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। পাবনা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন তিনি। এরপর ১৯৭১ সালে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।

১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) বিভাগে যোগদান করেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। ১৯৯৫ সালে জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন। কর্মজীবনে তিনি সহকারী জজ, যুগ্ম জেলা জজ, অতিরিক্ত জেলা জজ ও জেলা জজ হিসেবে বিভিন্ন জেলায় দায়িত্ব পালন করেন। শহীদ বুলবুল কলেজের অধ্যাপকও ছিলেন তিনি।

অধুনালুপ্ত বাংলার বাণী পত্রিকার পাবনা জেলা প্রতিনিধি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। পাবনা প্রেস ক্লাব ও অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির আজীবন সদস্য এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের একজন প্রতিনিধি হিসেবে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক আইন সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন সাহাবুদ্দিন। ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তখন সরকারের কাছে এ বিষয়ে ১৩৯৭ পৃষ্ঠার রিপোর্ট পেশ করেছিলেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন।

২০০১ সালে শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে কর্মরত প্রথম সচিবের রহস্যজনক মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক থাকাকালীন ‘রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা’ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সদস্য হিসেবে ওয়াশিংটন, যুক্তরাজ্য ও সুইজারল্যান্ড সফর করেন।

দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিশ্বব্যাংকের কথিত পদ্মাসেতু সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে অন্যতম মুখ্য ভূমিকা পালন করা সাহাবুদ্দিন চু্পপু অভিযোগটি মিথ্যা ও অন্তঃসারশূন্যতা প্রমাণে সমর্থ হন। তার দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন কানাডা কোর্ট কর্তৃক সমর্থিত হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, চীন, কানাডা, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, ইতালি, লুক্সেমবার্গ, বেলজিয়াম, জার্মানি, ভারত, ভুটান, পাকিস্তান, নেপালসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন সাহাবুদ্দিন।

তিনি বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। এর মধ্যে ১৯৭৩-৭৫ সাল পর্যন্ত পাবনা জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সম্পাদক, ১৯৭৮-৮২ সাল পর্যন্ত পাবনা জেলা পরিবার পরিকল্পনা সমিতির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন।

১৯৭২ সালের ১৬ নভেম্বর পাবনা শহরের দিলালপুর নিবাসী আলী আকতারের জ্যেষ্ঠ কন্যা ড. রেবেকা সুলতানার সঙ্গে সাহাবুদ্দিন চুপপু বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন। ড. রেবেকা সুলতানা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দিয়ে যুগ্ম সচিব হিসেবে ২০০৯ সালে অবসরে যান।

তিনি বর্তমানে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্চ প্রোগ্রাম বিভাগের অধ্যাপক এবং ফ্রেন্ডস ফর চিলড্রেন অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। সাহাবুদ্দিন-রেবেকা দম্পতির একমাত্র সন্তান মো. আরশাদ আদনান (রনি) দেশে ও বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে প্রাইম ব্যাংকের উচ্চপদে কর্মরত।

টিএইচ