শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১
The Daily Post

৫১ বছরেও শেষ হয়নি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা

সমকাল প্রতিবেদন

৫১ বছরেও শেষ হয়নি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা

স্বাধীনতার ৫১ বছরেও শেষ হয়নি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়নের কাজ। দুই দফায় এখন পর্যন্ত মাত্র ৩৩৪ শহীদ বুদ্ধিজীবীকে গেজেটের মাধ্যমে স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। যাঁদের নামে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে, সেই পরিবারগুলোর জন্যও কোনো রাষ্ট্রীয় সহায়তা ঘোষণা করা হয়নি। নির্ধারিত হয়নি তাঁদের মর্যাদাক্রমও।

মন্ত্রণালয় বলছে, চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়নের কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারগুলোর সহায়তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মন্ত্রণালয় এবং সাব-কমিটির কাছে প্রায় দেড় হাজার শহীদ বুদ্ধিজীবীর তথ্য-উপাত্ত রয়েছে, যা যাচাই-বাছাই করা হবে। এরই মধ্যে আজ বুধবার দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শহীদ বুদ্ধিজীবী তালিকা প্রণয়ন সংক্রান্ত যাচাই-বাছাই কমিটির প্রথম সভাটি হয় ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর। ওই সভায় প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ২২২ জনের নাম অনুমোদন করা হয়। পরে অনুমোদন হওয়া ১৯১ জনের নাম প্রথম দফায় গেজেট আকারে প্রকাশ করে সরকার। এর পর গত ২২ মে দ্বিতীয় দফায় ১৪৩ শহীদ বুদ্ধিজীবীর নামে গেজেট প্রকাশ করা হয়।

গত ২৫ মার্চ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, এ বছরের ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়নের কাজ শেষ হবে। এ বিষয়ে গতকাল মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহীদ বুদ্ধিজীবী তালিকা প্রণয়ন সংক্রান্ত যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি হলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খাজা মিয়া। তিনি যোগদানের পর থেকে গত দেড় বছরে জাতীয় কমিটির কোনো সভা ডাকা হয়নি।

এদিকে দুই দফায় যে ৩৩৪ শহীদ বুদ্ধিজীবীকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, তাঁদের পরিবারকে এখনও রাষ্ট্রীয় কোনো সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনা হয়নি। গেজেট প্রকাশের পর মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়নের পর তাঁদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কমিটিই এ বিষয়ে সুপারিশ করবে। গতকাল মন্ত্রী একই কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়নে ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর গবেষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করে সরকার। এতে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব তপন কান্তি ঘোষকে সভাপতি করা হয়। এ ছাড়া কমিটিতে মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তাসহ গবেষক সদস্য হিসেবে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের ট্রাস্টি চৌধুরী শহীদ কাদের, ডা. বায়েজিদ খুরশীদ রিয়াজ এবং গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের গবেষক গাজী সালাউদ্দিনকে রাখা হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা সদস্যদের মধ্যে কমিটিতে রয়েছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু ও গবেষক লে. কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক। এই কমিটিই ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ও ২০২১ সালের ২৩ মার্চ দুই দফা বৈঠক করে ৩৩৪ শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য সুপারিশ করে।

জাতীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ‍‍`চূড়ান্ত তালিকা কখনও সম্পন্ন হবে না। কারণ, স্বাধীনতার ৫১ বছরে অনেক কিছুই বদলে গেছে। তবে আমরা একটি গ্রহণযোগ্য তালিকা প্রণয়নের চেষ্টা করছি।‍‍` তিনি আরও বলেন, ‍‍`আমরা অনেকে শহীদ বুদ্ধিজীবী বলতে ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক-শিক্ষকদের বুঝে থাকি। কাজ করতে গিয়ে দেখিছি, গ্রামেও অনেক প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ছিলেন, যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন; তাঁদের খুঁজে বের করতে হবে।‍‍`

এ ছাড়া ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নির্মিত ‍‍`বাংলাদেশ‍‍` নামক প্রামাণ্যচিত্রে বলা হয়, ‍‍`স্বাধীনতা যুদ্ধে ৬৩৭ জন প্রাথমিক স্কুলশিক্ষক, ২৭০ জন সেকেন্ডারি স্কুলশিক্ষক এবং ৫৯ জন কলেজ-শিক্ষক শহীদ হয়েছেন।‍‍` তবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটিসহ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন প্রকাশনায় হাজারো শহীদ বুদ্ধিজীবীর তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে ৯৯১ জন শিক্ষাবিদ, ১৩ জন সাংবাদিক, ৪৯ জন চিকিৎসক, ৪২ জন আইনজীবী, ৯ জন সাহিত্যিক ও শিল্পী, পাঁচজন প্রকৌশলী এবং অন্যান্য রয়েছেন দু‍‍`জন।

ইএফ