শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post

অসহযোগের ডাক দিয়ে বিএনপির যত আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক

অসহযোগের ডাক দিয়ে বিএনপির যত আহ্বান

ডামি নির্বাচন বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বিএনপি। বুধবার (২০ ডিসেম্বর) বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বরাত দিয়ে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

অনলাইনে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, অসহযোগ আন্দোলনে দেশবাসীকে সহযোগীতার আহ্বান জানাচ্ছি। তারেক রহমান আজ যুগান্তকারী কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছেন। দেশের প্রত্যেকটি নাগরিক এ কর্মসূচিকে সহযোগীতা করার বিকল্প নেই, এ কথাটি তারেক রহমান আজ জাতির উদ্দেশ্যে বলেছেন।

পাঠাকদের জন্য গণমাধ্যমে পাঠানো রুহুল কবির রিজভীর সংবাদ সম্মেলনের বিবৃতিটি তুলে ধরা হলো:

মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত গণতন্ত্র ছলে, বলে, কৌশলে হত্যা করে গত ১৫ বছর ধরে বিনাভোটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার সীমাহীন দুর্ণীতি, অনাচার, নির্যাতন ও অপশাসন চালিয়ে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। বিরোধী মত দমনের জন্য গুম, খুন, গায়েবী মামলাকে হাতিয়ার বানিয়ে দেশে এক নিকৃষ্ট স্বৈরশাসন কায়েম করেছে। 

ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য জনগণের ভোট লাগেনা বলে এই সরকারের কাছে জনগণের আশা, আকাঙ্ক্ষা, প্রয়োজন কিংবা অসন্তুষ্টির কোন মূল্য নেই। ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য সমাজের কিছু দুর্ণীতিগ্রস্ত ধনী, আমলা, পুলিশ এবং দলীয় নেতাকর্মী দিয়ে জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন দমন করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এরা দেশের সম্পদ লুট করে দেশে বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ছে আর জনগণ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও ক্ষমতাসীনদের অত্যাচার-চাঁদাবাজির শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।

দেশের পুঁজিবাজার, ব্যাংক, বীমা- এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করা হয়েছে। মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্ণীতি ও অপচয় করা হয়েছে। ফলে একদিকে যেমন দেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে এবং খেলাপী ও মন্দ ঋণের কবলে পড়ে দেশের ব্যাংকগুলো বন্ধ হওয়ার পথে; অন্যদিকে ক্ষমতাসীনদের সুবিধাভোগীরা বিদেশে সেকেন্ড হোম, বেগমপাড়া, গুলশান-৩ বানাচ্ছে এবং সুইস ব্যাংকসহ বহুদেশে টাকা পাচার করছে।

দেশের কৃষকগণ তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পায়না অথচ প্রতিদিনই কৃষি ও ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। শ্রমিকেরা ন্যায্য মুজুরি পায়না অথচ প্রতিবাদ করলেই রাজপথে তাদের রক্ত ঝড়ছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। প্রবাসে শ্রমিকদের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানোর কেও নেই। অথচ এরাই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা পরিবর্তনের প্রধান শক্তি। কিন্তু গণতন্ত্র না থাকলে সংখ্যাগরিষ্ঠের কোন মূল্য থাকেনা বলেই এদের আজ কোন মূল্য নেই। আমরা গণতন্ত্র চাই এই সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং দুস্থ মানুষের মূল্য নিশ্চিত করতে।

আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে যে খেলার আয়োজন করা হচ্ছে তা শুধুই সরকারের অবৈধ ক্ষমতার মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য। এই নির্বাচনের সরকারবিরোধী কোন রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে না। প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের গণদাবিকে জোর করে উপেক্ষা করার ফলে এই নির্বাচনে জনগণের কোন আগ্রহ নেই। গণতান্ত্রিক বিশ্ব এমন একতরফা নির্বাচনী প্রহসনের অশুভ পরিণাম নিয়ে উৎকণ্ঠা ও সতর্কতা জানিয়েছে।

তবে ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকার জাতীয় সংসদের কিছু আসন তাদের দুর্ণীতি-অনাচারের অংশীদার অনুগত দলগুলোকে অনুদান হিসেবে দিয়ে তথাকথিত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের তামাশা করতে যাচ্ছে। এই লক্ষ্যে তারা কিছু ডামি প্রার্থীকে নির্বাচনে রেখে এক নতুন হাস্যকর দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছে।

আমরা দেশবাসীকে সত্যিকারের গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠার ন্যায্যদাবির প্রতি অটল থেকে এই আসন ভাগাভাগির তামাশাপূর্ণ ডামি নির্বাচন বর্জন করার আহবান জানাচ্ছি। জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া এই নির্বাচন সফল হবেনা। শুধু নিজেদের অনুপস্থিতি দিয়ে গণতন্ত্রকামী জনগণ নির্বাচনের নামে এই নোংরা খেলা ব্যর্থ করে দেবেন। ফলে শীঘ্রই জনগণের অংশগ্রহণে একটি অবাধ নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।

যে অবৈধ সরকার জনমতের বিরুদ্ধে নির্বাচনের নামে তামাশা করতে যাচ্ছে- সেই সরকারকে সহযোগীতা করা কোন দেশপ্রেমিক গণতন্ত্রকামী নাগরিকের জন্য উচিত হতে পারেনা বলেই আমরা আজ এই মূহুর্ত থেকে এই অবৈধ সরকারকে অসহযোগীতা করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানাচ্ছি, এ লক্ষ্যে-

৭ জানুয়ারি ডামি ভোটের খেলা বর্জন করুণ।

ভোট গ্রহণে নিযুক্ত কর্মকর্তা কর্মচারীগণ দায়িত্ব পালনে বিরত থাকুন।

সরকারকে সকল প্রকার ট্যাক্স, খাজনা, ইউটিলিটি বিল ও অন্যান্য প্রদেয় স্থগিত রাখুন।

ব্যাংকগুলো সরকারের লুটপাটের অন্যতম মাধ্যম বিধায় ব্যাংকে লেনদেন যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন

রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ মিথ্যা ও গায়েবী মামলায় অভিযুক্তগণ মামলায় হাজিরা দেয়া থেকে বিরত থাকুন।

জনগণের আন্দোলনের ফলে দেশে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা হলে এইসব অসহযোগিতায় ক্ষতিগ্রস্থগণ যথাযথ ক্ষতিপূরণ এবং সুবিচার পাবেন।

স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আমাদের অনেক সাথী জীবন দিয়েছেন, গুম হয়েছেন, বন্দী ও আহত হয়েছেন। কিন্তু গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াই চলছে ও চলবে। জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও লড়াইয়ের বিজয় অবশ্যম্ভাবী ও অনিবার্য।

টিএইচ