সরকারকে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ঘোষণা করতে ক্ষমতাসীনদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।
তিনি বলেন, সরকার যদি সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে তাহলে তাদের সামনে একটি পথ খোলা আছে, সেটা হলো- এই ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে দেশে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ঘোষণা করুক। এটাই আমরা চাই। প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিত্যাগ করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের আজকে সরকার ফিরে আসুক। এছাড়া এই সরকারের সামনে আর কোন পথ খোলা নেই।
মঙ্গলবার দুপুরে মিরপুর পল্লবীতে সদ্য কারামুক্ত ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হককে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন তিনি।
আপনারা কি মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মধ্যবর্তী নির্বাচন বলে কোন কথা নেই। যে নির্বাচন হয়েছে, এটা কোন নির্বাচন হয়নি। আর শুধু বিএনপির নয় আওয়ামী লীগের ভোটাররাও এই নির্বাচন সম্পূর্ণভাবে বর্জন করেছে। এটা কোর নির্বাচন নয়, এটা প্রহসন, নাটক ও সার্কাস। আজকে যে সংসদ, সেটা একটা নাট্যশালায় পরিণত হয়েছে। সুতরাং সরকার যে পথে হাঁটছে, সেটা সঠিক পথ নয়।
`বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মার্কিন প্রতিনিধি দলের কাছে লাঠিতে ভর দিয়ে নালিশ করতে গিয়েছেন`- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ড. মঈন বলেন, মহাসচিব একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি। কোন নীতিবান লোক একজন সিনিয়র সিটিজেন সম্পর্কে এ ধরণের কথা বলতে পারেন, এটা আমি বিশ্বাস করি না যে- কারো কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের কথায় এটাই প্রমাণিত হয়েছে, মহাসচিব তিন মাসের অধিক কারাগারে ছিলেন। তার শারীরিক অবস্থা আমরা সবাই জানি। সেই অবস্থায় যদি তিনি একটি লাঠি নিয়ে বেরিয়ে থাকেন সেটা তো তার যে প্রতিজ্ঞা, তার যে সংগ্রামের ব বহির্মুখী যে প্রত্যাশা সেটা তো প্রমাণ করে যে, কোন রকমের জুলুম, নির্যাতন ও অত্যাচার কাউকে থামিয়ে রাখতে পারে না। আর বিদেশিদের সঙ্গে কে কথা বলে না?
আমরা তো দেখেছি, সরকারও বিদেশে গিয়ে সহযোগিতা চেয়েছে এবং বন্ধুত্ব করতে চায়। আমরা পত্রিকায় দেখেছি। সরকার নিজেই প্রকাশ্যে বলেছে।
বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, এই নির্বাচনের কথা বলছেন? এই নির্বাচনের কথা আমি বলতে চাই না। সরকারের প্রভাবশালী একজন মন্ত্রী, তিনি নিজেই নির্বাচনে সহযোগিতা করার জন্য আমাদের বন্ধু রাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আর নির্বাচনে আগে আমাদের পূর্ববর্তী মন্ত্রী বন্ধু রাষ্ট্রে গিয়ে সহায়তা চেয়েছিলেন। সুতরাং আজকে কে বিদেশিদের কাছে গিয়ে কি বলছে, না বলছে-সেগুলো সরকার নিজেই প্রকাশ করে দিয়েছে। তারা নিজেই স্বীকার করেছে। বিদেশিদের সঙ্গে মানুষ কথা বলবে না কেনো? আমরা তো কারো বিরোধিতা করি না। বিএনপি আজ বিদেশিদের সঙ্গে কথা বলবে, এতে অপরাধের কি হলো। সেটা তো আমরা বুঝতে পারি না।
সরকারকে কি আরও পাঁচ সময় দিবেন- এই প্রশ্নের জবাবে আবদুল মঈন খান বলেন, সরকারকে সময় দেয়ার বিষয় না। দেশের রাজনীতিকেই সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশের রাজনীতির যে সমস্যা, সেটা হচ্ছে- প্রতিহিংসার রাজনীতি। এই যে আমিনুল তিন মাসের উপর জেলে ছিলেন, আমাদের মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কেউ বাদ যায়নি। সরকারের পক্ষ থেকে তারা নিজেরাই স্বীকৃতি দিয়েছে যে, এই ২৫ থেকে ২৬ হাজার বিএনপির নেতাকর্মীদের জেলের ভিতরে ঢুকিয়ে না রাখতো তাহলে সরকার তাদের পতন তারা বন্ধ করতে পারতো না।
মঈন খান বলেন, এই পরিস্থিতিতে কীভাবে রাজনীতি চলতে পারে? এই সরকার কি চায়। তারা কি নিজেরা জানে? তারা ক্ষমতায় মোহে অন্ধ হয় গিয়ে দেশ থেকে অর্থ বিদেশে পাচার করে দিয়ে বিলাসবহল জীবন-যাপন করবে। এটাই কি রাজনীতির উদ্দেশ্যে? আজকে আওয়ামী লীগকে উপলব্ধি করতে হবে যে, এভাবে সহিংসতার রাজনীতি দিয়ে এদেশ কোন পর্যায়ে কোথাও গিয়ে পৌঁছাবে না। এদেশের নৈতিকতা, প্রশাসন ও সমাজ ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা এবং সংসদ ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। দুর্নীতিতে ছেড়ে গেছে।
এসময় আমিনুল হক বলেন, এই অবৈধ সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে একতরফা ও ডামি নির্বাচন করেছে। আমাদের যে দাবি ছিল, এই একতরফা নির্বাচনে যাতে মানুষ ভোট দিতে না যায়। আপনারা দেখেছেন, প্রত্যেকটি ভোট কেন্দ্র খালি ছিল। কেউ ভোট দিতে যায় নাই। আমার মতে ২ শতাংশ মানুষ মাত্র ভোট দিতে গিয়েছিলো।
এই যে ভোট বর্জনের আহ্বান, এখানে বিএনপি নৈতিকভাবে জয়ী হয়েছে। সুতরাং দেশের জনগণ বিএনপির সঙ্গে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন চলতে থাকবে বলেও জানান আমিনুল।
টিএইচ