বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post

বাংলাদেশের মানুষ কোনো দেশের প্রভুত্ব মেনে নেবে না: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের মানুষ কোনো দেশের প্রভুত্ব মেনে নেবে না: মির্জা ফখরুল

‘ফকির আলমগীরের (প্রয়াত গণসঙ্গীত শিল্পী) একটা চমৎকার গান আছে ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা, কারো দানে পাওয়া নয়’। আমরা রক্তের দাম দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। কারও দয়ায় বাংলাদেশ স্বাধীন হয় নাই।’

সোমবার (২৫ মার্চ) দুপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে এ মন্তব্য করেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কমিটি এ সমাবেশ আয়োজন করে।

‘আজকে সেই বোধ নিয়ে রুখে দাঁড়ান। আন্তর্জাতিক বিশ্ব নিশ্চয়ই সেই বিষয়গুলো দেখবে, দেখেছে অতীতে। আর কোনো দেশ যদি আমাদেরকে মনে করে যে, আমাদের ওপরে প্রভুত্ব করবে বাংলাদেশের মানুষ কোনোদিন সেই প্রভুত্ব স্বীকার করে নাই। মোগল আমলেও করেনি, বৃটিশ আমলেও করেনি, পাকিস্তান আমলেও করেনি, এখনও করবে না’— বলেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি, হাফিজ (হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম) ভাই আমার চেয়েও বড়। আমরা এখনও লড়ছি, কথা বলছি, লড়ে যাচ্ছি। কিন্তু, আমরা এখনও বিশ্বাস করি, এই দেশকে পরাধীন করে রাখার ক্ষমতা কারও নেই। আমরা বিশ্বাস করি, এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী একটা রেজিম একটা শাসকগোষ্ঠী যারা আজকে জোর করে, কলা-কৌশল করে, বিভিন্ন নাটক করে ক্ষমতা দখল করে আছে তাদের একদিন চলে যেতেই হবে।’

‘সেজন্য বলি, মানুষকে সঙ্গে নিয়ে নামতে হবে। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে না নামলে আপনারা জয়ী হতে পারবেন না। সেই মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কিছুক্ষণ আগে এখান দিয়ে রিকশা শ্রমিক ভাইয়েরা গেলেন না, এরকম শ্রমিক ভাইদের নামাতে হবে। এই রকম সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ভাইদেরকে আনতে হবে। সমস্ত জায়গা থেকে মানুষ উঠে আসবে সেইদিন হবে সত্যিকার অর্থেই সফল গণঅভ্যুত্থান’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘তারা (সরকার) বলে যে, দারিদ্র্যের সংখ্যা নাকি কমে এসছে ১৯%। নিরাপত্তা বেষ্টনীর কর্মসূচির আওতায় সরকার যে ভাতা দেয়, দুঃস্থ ভাতা, বিধবা ভাতা, দরিদ্র ভাতা সেটা ৩৮% নিয়ে যায়। পত্রিকায় বলছে, ওখানেও (দরিদ্রভাতা) এরা ভাগ বসায়, তাদের জন্য বরাদ্দের টাকা নিয়ে যায়। এভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা তারা বিদেশে পাচার করেছে, টাকার কোনো হিসাব নাই। ব্যাংকগুলো লোপাট করে দিয়ে এখন ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। ওটা আরেকটা দুর্নীতির ব্যবস্থা তৈরি করছে।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের শ্লীলতাহানির ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে এ ব্যাপারে ছাত্র দলকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘এইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি হয়েছে। আপনারা কি করেছেন? উত্তর দিতে পারবেন না। একটা প্রতিবাদ পর্যন্ত করেন নাই। এই যে মেয়েরা বসে আছে আপনারা প্রতিবাদ করেন নাই। কোথায় গেল সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কোথায় গেল ছাত্ররা যারা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন করেছে, ’৬৯ এর আন্দোলন করেছে, ৯০ এর আন্দোলন করেছে কোথায় গেছে তারা?’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে ছাত্রদলের নেতারা এখানে যারা আছেন এভাবে শুধু শ্লোগান দিলে হবে না, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। ইনফেন্ট্রি যদি শক্তিশালী না হয় তাহলে যুদ্ধ কে করবে? ইনফেন্ট্রিকে শক্তিশালী করতে হবে। পুলিশের হুইসেল শুনলে দৌঁড়াবে না। যারা সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ শুনলে পালবে না, যারা রাস্তায় অনড় হয়ে প্রাণ দেবে, দাঁড়িয়ে থাকবে এই ধরনের মানুষগুলো তৈরি করতে হবে, সেই সাহস বুকে তৈরি করে দাঁড়াতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। আমি জানি আমার বহু ছেলেরা কষ্ট করছে, তারা কেউ বাড়িতে থাকতে পারে না, তাদের চাকুরি-বাকরি নাই, টাকা-পয়সা নাই, তাদের কোনো ভবিষ্যত নাই। তারা লড়াই করছে দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য। এই গণতন্ত্র ফেরানোর বিষয়টি ছড়িয়ে দিতে হবে সারাদেশে তরুণ সমাজের মধ্যে, সেই সাহস ও বোধ তৈরি করতে হবে যে আমি যা করছি তা আমার দেশের জন্য করছি, আমি যা করছি তা আমার গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য করছি, আমি যা করছি তা আমার দেশমাতৃকাকে রক্ষা করার জন্য করছি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পাকিস্তানের দিকে তাকিয়ে দেখেন। ইমরান খান দেখিয়ে দিয়েছেন যে কীভাবে তুরণদেরকে মাঠে নিয়ে আসতে হয়, তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন যে, কীভাবে মহিলাদেরকে মাঠে আনতে হয়। আমাদের চেয়ে কম অত্যাচার তাদের ওপর হয়নি। তারা সেনানিবাস আক্রমণ করেছিল, তারা মার্কিন সামাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, তারা সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ইমরান খান জেলে চলে গেছে। ৩৪ বছর সাজা হয়েছে, তার ২ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার হয়েছে জোর করে দল বদল করা হয়েছে। তারপরেও জেলে বসে যখন তার দলের মার্কা নিয়ে গেছে। তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নির্বাচনে যাও। এই সেই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে কারা? এই তরুণেরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আপনারা সবাই ব্যবহার করেন সেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।’

মেজর হাফিজের সভাপতিত্বে ও মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, ফজলুর রহমান, ফরহাদ হালিম ডোনার, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, যুব দলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ইশরাক হোসেন, ছাত্র দলের রাকিবুল ইসলাম রাকিবসহ অনান্যরা।

টিএইচ