আবাসিক পর্যায়ে গ্যাসের প্রিপেইড মিটারের ভাড়া বৃদ্ধির সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এমনিতেই আবাসিক পর্যায়ে গ্যাসের সরবরাহ মারাত্মক অবনতি হয়েছে। বাসাবাড়িতে দিনে—রাতে অধিকাংশ সময়ে গ্যাস থাকে না।
অথচ অবৈধ সরকার নানা কৌশলে গ্যাস ব্যবহারকারী সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা চুষে নিচ্ছে। জনগণ প্রত্যাখাত একদলীয় ডামি সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর কয়েক ঘন্টা পরই জানা গেল আবাসিক পর্যায়ে গ্যাসের প্রিপেইড মিটার ভাড়া ১০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ২০০ টাকা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
মিটার চালানো ও রক্ষনাবেক্ষণের ব্যয় সমন্বয় করতেই নাকি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মিটার ভাড়া এক লাফে দ্বিগুণ বৃদ্ধি ৭ জানুয়ারি ভোট না দেওয়ায় শাস্তি হিসেবে জনগণের ওপর ধার্য করা হয়েছে। গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত না করে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগের মধ্যে ফেলে মিটার ভাড়া দ্বিগুণ করা সরকারের গণশত্রু চরিত্রেরই বহিঃপ্রকাশ।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, জনগণকে বন্দুকের নলের মুখে দুরে ঠেলে ক্ষমতা দখলে রাখার একমাত্র লক্ষ্য গোটা দেশটাকে লুন্ঠনের অভয়ারণ্য বানানো। এর ফলে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি অরাজকতার কালো আঁধারে আচ্ছন্ন।
ভয়াবহ ডলার সংকটের কারণে রপ্তানী প্রবৃদ্ধিতে ধ্বস নেমেছে। তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে নগদ সহায়তা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অবৈধ ডামি সরকার। এমনিতেই বায়ারদের কাছ থেকে পোশাকের অর্ডার অর্ধেকে নেমে এসেছে। এছাড়াও চামড়া, পাটজাত পণ্য, এগ্রো প্রসেসিং পণ্যে নগদ সহায়তা অনেক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে এ সমস্ত পণ্যের রপ্তানী চরমভাবে হ্রাস পাবে।
তিনি বলেন, ভোটারবিহীন সরকার কখনোই জনকল্যাণমুখী হতে পারে না। এরা অবাধ লুন্ঠনের যে নজীর তৈরি করেছে তা পৃথিবীতে বিরল। বেপরোয়া দুর্নীতি আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুযোগ দিয়ে এরা রাষ্ট্রের বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থা গড়ে তুলেছে। এদেরকে দিয়েই প্রবল জনমতকে দমন করা হয়। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবির ওপর নামিয়ে আনা হয় এক ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। দলীয় ক্যাডার, সন্ত্রাসী আর সিন্ডিকেটবাজদেরকে ভরণ—পোষণ করতে গিয়ে রাষ্ট্রের কোষাগার শুণ্য করা হয়েছে। তথাকথিত উন্নয়নের নামে যেভাবে হরিলুট হয়েছে সেটি পূরণ করতেই এরা রপ্তানী খাত থেকে তহবিল কমাচ্ছে।
রিজভী বলেন, প্রভুদের সমর্থনে ডামি নির্বাচন করে অবৈধ ক্ষমতার জোরে আওয়ামী মন্ত্রীরা নিজেদেরকে এখন অখন্ড কতৃর্ত্বের অধিকারী ভাবছেন। এরা গণতান্ত্রিক বিশ্বের নামকরা গণমাধ্যমকেও তুচ্ছ—তাচ্ছিল্য করছে অবলীলায়। নোবেল লরিয়েট ড. মুহম্মদ ইউনুসকে নিয়ে বিশ্বের অনেক নোবেল লরিয়েট ও বিশ্ব নেতাদের বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে ওয়াশিংটন পোষ্টে। এই বিবৃতিকে বিজ্ঞাপন বলে তুচ্ছ—তাচ্ছিল্য করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে পারদর্শী আওয়ামী সরকারের মন্ত্রীরা রাষ্ট্রশক্তিকে কব্জায় নিয়ে ‘ধরাকে সরা জ্ঞান’ করছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ইউনুস প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে নাকি বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ। স্বচ্ছ বটে তবে সেটি বর্তমানে বুড়িগঙ্গা নদীর পানির মতোই। রুচিহীন, আপত্তিকর ও বানোয়াট কথা বলার জন্য আওয়ামী মন্ত্রীদের পুরস্কৃত করা উচিৎ।
তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব গতকাল বলেছেন—দুর্নীতি সারা বিশ্বেই আছে, শুধু বাংলাদেশকে অপবাদ দেয়া হয়। তার এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বলতে চাই—দুর্নীতি হয়তো সারাবিশ্বেই কমবেশী থাকতে পারে, কিন্তু বিশ্বব্যাপী আওয়ামী মার্কা দুর্নীতির কলঙ্ক তীলক আর কোথাও আছে বলে জানা নেই। ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনাদের মন্ত্রীর দুর্নীতি করা টাকা ফেরত দিতে হয়। যে দেশে একটা বালিশের দাম ২৭০০০, বালিশের কাভারের দাম ২৮০০০, পর্দার দাম ৩৩০০০ টাকা।
করোনাকালে চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে সবচেয়ে বেশী দুর্নীতি হয়েছে। রেল বিভাগে টাকা বিনিময় বাণিজ্যের কথা সবার নিশ্চয়ই স্মরণে আছে। গভীর রাতে মন্ত্রীর এপিএসের বাসায় ৭০ লাখ টাকার স্তুপের কথা অর্থাৎ কালো বিড়ালের কথা কেউ ভুলে যায়নি। দুর্নীতির এ রকম লঙ্কাকান্ড পৃথিবীর কোথাও ঘটে না। কয়েকবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আওয়ামী সরকার।
সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম মুহিত সাহেব বলেছিলেন চার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি কিছুই না। এখন ওবায়দুল কাদের সাহেবের কাছে আমার প্রশ্ন—কত হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করলে সেটিকে আওয়ামী পরিভাষায় দুর্নীতি হিসেবে গণ্য করা হবে। ওবায়দুল কাদেরের কথায় মনে হচ্ছে যে, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দুর্নীতিকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হচ্ছে।
এখন টিআইবি বলছে এই দুর্নীতি বর্তমানে আরও অবনতিশীল হয়েছে। আর এজন্যই টিআইবি—কে বিএনপির দালাল বলা হচ্ছে। রিজভী বলেন, বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে, এরা কি কারণে কারাবন্দী সেই কথাটি সাবলিলভাবে ফাঁস করেছেন সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। এখন ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনি কখন ড. আব্দুর রাজ্জাককে বিএনপির দালাল বলবেন সেটির জন্য জাতি অপেক্ষা করছে। দখলদার আওয়ামী সরকার শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দুর্নীতিকে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, গতকাল বিএনপির পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ কালো পতাকা মিছিলে ঢাকা মহানগরসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন এলাকায় নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় নেতাকর্মীদের অনেককে নাজেহাল, গ্রেফতার ও অনেকের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। কালো পতাকা মিছিলে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ১০০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মোট ৬টি মামলায় ৪৫৬ জনের বেশি আসামী এবং ৭০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। আমি বর্বরোচিত এই পুলিশী হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে নেতাকর্মীদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, বিলকিস জাহান শিরিন, কেন্দ্রীয় নেতা আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, আমিনুল ইসলাম, তারিকুল আলম তেনজিং প্রমুখ।
টিএইচ