প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা থাকতে কী করেছে, তা বিবেচনা করুন। আমাদের শুনতে হয়, আওয়ামী লীগ সরকার দেশটাকে ধ্বংস করেছে! এর আগে ১০০ সেতু উদ্বোধন করলাম, এবার ১০০টি মহাসড়ক নির্মাণ বা উন্নয়নকাজ সম্পন্ন করলাম। এরপর যারা বলে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে কিছুই নাকি করেনি, সেটা দেশের মানুষ বিশ্বাস করবে কি না, এটাই আমার প্রশ্ন?
বুধবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে ১০০ মহাসড়ক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এ আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, যারা বলে আওয়ামী লীগ কিছুই করেনি, ধ্বংস করেছে। তাদের উদ্দেশে প্রশ্ন— ১০০ সেতু একদিনে এবং ১০০ মহাসড়ক একদিনে উদ্বোধন অতীতে কেউ করতে পেরেছে? পারেনি। আওয়ামী লীগ পারে, এটাই প্রমাণিত সত্য।
জনগণের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, যতটুকু সুবিধা আপনারা পেয়েছেন ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালেই। সেই ১৯৭২-১৯৭৫ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের সড়ক, সেতু মেরামত ও নির্মাণ করেছেন জাতির পিতা। এছাড়া যারা ২১ বছর এবং ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল অর্থাৎ ২৯ বা ৩০ বছর ক্ষমতায় ছিল, তারা দেশের জন্য কী করেছে বা কতটুকু উন্নতি করেছে এবং আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা থাকতে কী করেছে, সেটা দেশবাসী একটু বিবেচনা করে দেখবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, কখন বাংলাদেশের মানুষ উন্নত জীবন পেল, আর কখন দেশের মানুষ সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির কবলে পড়ে জীবনমান সম্পূর্ণ ধ্বংসের পথে গিয়েছিল। সেই তুলনা করেই জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কী চান? বারবার ঝড় ঝাপটা এসেছে, সেটা মোকাবিলা করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে প্রত্যেক ক্ষেত্রে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব। প্রত্যেকে প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতা অর্জন করবে এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবে। সেভাবেই আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি এবং কিছু বাস্তবায়নও করছি। যারা ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে বিশ্বাস করে না, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না, তারা এ দেশের কোনো উন্নতিও চায় না।
তাঁর সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে মাধ্যমে প্রযুক্তিকে মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসায় অবাধ তথ্য প্রবাহের সুযোগ নিয়ে মিডিয়ায় নানা ঢালাও সমালোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সত্য মিথ্যা অনেক কিছু বলা যেতে পারে। কিন্তু, আমরা বিশ্বাস করি, সাধারণ মানুষের উন্নয়নে, গণমানুষের উন্নত জীবন যাপনের ক্ষেত্রে, জনগণের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে, পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া, শিক্ষার প্রসার ঘটানো, উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করা, কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলা, বিজ্ঞান প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের উপযুক্ত দক্ষ মানব শক্তি গড়ে তোলা এবং বিশে^র সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য প্রতিটি বাঙালি যাতে তৈরী হয় সেই লক্ষ্য নিয়েই আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, একইসঙ্গে আমরা এদেশের মানুষের শান্তি, উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। বিভিন্ন সময় নানা বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও তাঁর সরকার লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যচ্ছে। সম্প্রতি আটটি বিভাগে অধিকাংশ রাস্তা নির্মাণ বা উন্নয়ন করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয় বাংলাদেশে আর কোন রাস্তা বাকী নেই। এই ১শ’ সড়ক ও মহাসড়ক নির্মাণ এবং আগে যেগুলো করা হয়েছিল সেগুলো উন্নতমানের করা হলো। কাজেই এর মাধ্যমে বাংলাদেশে নিরাপদে সড়ক যাতায়াতের একটা বড় সুবিধা হবে। যাতে অর্থনৈতিকভাবে সকল অঞ্চলের মানুষ অত্যন্ত লাভবান হবে।
আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে এসেছে যোগাযোগের ক্ষেত্রটাকে সব থেকে গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু সড়ক যোগাযোগ নয় সড়ক পথ, রেলপথ, নদীপথ এবং বিমান প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই আমরা উন্নয়ন করে যাচ্ছি। জাতীয় সড়ক মহাসড়কের বাইরেও উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যন্ত রাস্তা ঘাট নির্মাণ করা হচ্ছে। গ্রামে গ্রামে পায়ে চলার পথগুলোও আমরা উন্নত করে দিচ্ছি। সমগ্র গ্রাম পর্যায়েও যোগাযোগের একটা নেটওয়ার্ক আমরা গড়ে তুলেছি। মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি যেমন হয়েছে তেমনি চলাচলের সুযোগটাও বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে চাইলে সর্বোচ্চ ৬/৭ ঘন্টার মধ্যে মানুষ রাজধানীতে আসতে পারছে।
তিনি বলেন, উন্নয়নের যে মূল চাবিকাঠি যার একটা হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, প্রতি ঘরে আমরা বিদ্যুৎ দিয়েছি, সমগ্র বাংলাদেশকে ইন্টারনেট সার্ভিসের আওতায় এনেছি, ব্রডব্যান্ড দিয়েছি, বঙ্গবন্ধুস্যাটেলাইট-১ আমরা উৎক্ষেপন করেছি এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। আর এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর করে গড়ে তুলতে যত রকম কাজের প্রয়োজন তাঁর সরকার করে যাচ্ছে।
সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশি হিসেবে গড়ে তুলবো। এই স্মার্ট বাংলাদেশে প্রত্যেকে প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতা অর্জন করবে এবং সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবে, সেভাবেই আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি এবং সেটা আমরা কিছু বাস্তবায়নও করছি।’
তিনি ওই মানিলন্ডারিং, অগ্নি সন্ত্রাসকারী অথবা গ্রেনেড হামলা করে আইভি রহমানসহ মানুষ হত্যাকারী, দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা থেকে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে অন্যের কাছে হাত পাতা, এই ধরনের মানসিকতা সম্পন্ন কেউ যেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে না পারেন সে বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য বলেন।
যারা আমাদের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেনি বা স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করে না, যারা জয় বাংলা স্লোগান দিতে বিশ্বাস করে না, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না, তারা এদেশের কোন উন্নতিও চায় না। স্বাধীন বাংলাদেশই তারা চায়নি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ুর অভিঘাত থেকে প্রতিনিয়ত আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। এর হাত থেকে রক্ষা করে এ দেশের জনগোষ্ঠীকে একটা উন্নত জীবন দিতে চাই। সেজন্য ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ সেটাও প্রণয়ন করে আমরা সেটাও বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি এবং এটা চলমানই থাকবে।
সড়কে চলাচলের নিয়ম কানুনগুলো শিশুকাল থেকেই শেখানোর তাগিদ দিয়ে অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে এবং চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে প্রশাসনের সকল স্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশনাও দেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি দুর্ঘটনা ঘটলে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহবান পুণর্ব্যক্ত করেন।
কোন দুর্ঘটনা হলে যিনি দুর্ঘটনা কবলিত অনেক সময় জনগণ তাকে সাহায্য না করে গাড়ি চালককে মারধর করা শুরু করে এবং গণপিটুনিতে গাড়ি চালক মারা যায় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই কাজটা কেউ দয়া করে করবেন না। কেউ ইচ্ছা করে মানুষকে মারে না বা ইচ্ছা করে ধাক্কা দেয় না। যদি অপরাধ করে আপনারা ধরেন, পুলিশে দিয়ে দেন, তার বিচার হবে। আমরা সড়ক আইনও করে দিয়েছি এটা বিচারের জন্য।’
তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায় কেউ রাস্তায় পড়ে গেলে গণপিটুনির ভয়ে গাড়িচালক গাড়ি না থামিয়ে আরেকবার তার উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে চলে গেছে। না গেলে হয়তো সে বেঁচেও যেতে পারতো। এই ভীতিটা থেকে ড্রাইভারকে মুক্ত করতে হবে। এটা জনগণের দায়িত্ব।’
এ দিন উদ্বোধন করা ৫০ জেলায় উন্নয়নকৃত ১০০ মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ২ হাজার ৪৯ কিলোমিটার। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সর্বোচ্চসংখ্যক সড়ক নির্মাণ হয়েছে ঢাকা বিভাগে।১০০ মহাসড়ক নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৪ হাজার ৮২৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এতে জাতীয় সড়কে যুক্ত হয়েছে ২০৬ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার এবং আঞ্চলিকে ৬২১ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। আর জেলায় ১ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার সড়ক যুক্ত হয়েছে।
টিএইচ