সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ভোট গ্রহণে ১৫০ আসনের জন্য আরো ২ লাখ ইভিএম মেশিন ক্রয়ের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। হঠাৎ কেন এমন সিদ্ধান্ত, বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি আমার সংবাদকে বলেন, এটি নির্বাচন কমিশন একটা সামর্থ্যের মধ্যে তাদের কথাটা ব্যক্ত করেছে।
বাস্তবভিত্তিক কোন কারন যদি থাকে সেই জায়গাটায় আমরা কোন দায়িত্বহীন আচরণ কথাবার্তা বলতে পারব না। এটি নিশ্চয়ই নির্বাচন কমিশন বিবেচনা করবে।
তিনি বলেন, আর যদি সেটি তাদের সামর্থ্যরে বাইরে চলে যায় তাহলে আমাদের নিশ্চয়ই সে বাস্তবতাটা মানতে হবে। এটা একটা দিক।
আরেকটা দিক হলো, বিএনপিসহ যে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো বলেছিল ইভিএমএ ভোট কারচুপি হবে, তারা ইভিএম প্রত্যাখান করেছিল তাদের আস্থার জায়গা নেই বলে, প্রকারান্তরে তাদের (বিরোধীদের) দাবি মেনে নেয়া হল। সুতরাং এক্ষেত্রে আমি বলবো বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যারা নির্বাচনবিমুখ হতে চেয়েছিলেন এই সিদ্ধান্তের ফলে তাদের আস্থা বাড়বে যে এখন সিদ্ধান্ত সুষ্ঠু ও অবাধ হবে এবং তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, আমরা অনুরোধ করবো যেন আবারও তারা এই ব্যাপারটি যেন গভীরভাবে চিন্তা করে। এবং কোন পথ বের করে হলেও ৩০০ আসনে ইভিএম চালু করা যায় কিনা সে ব্যাপারটির জন্য ভেবে দেখতে।
কমিশনের সিদ্ধান্তের সাথে এটা সাংঘর্ষিক হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুর রহমান বলেন, মহামারী করোনা ও প্রাকৃতি দূর্বিপাক একটি অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি তৈরি করেছে। আমরা কেউ কখনো ভাবিনি করোনা আসবে বা এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে। এমন ভয়ংকর মহমারি মোকাবেলা করার কথা আমরা ভাবিনি। এ সমস্ত প্রাকৃতিক দূর্বিপাক এবং মহামারী তো আগাম নোটিশ দিয়ে আসেনি।
তিনি বলেন, আজকে গোটা বিশ্ববাসী অর্থনৈতিক একটা ধাক্কার মধ্যে আছে। সুতরাং সেই ধাক্কার ঢেউ বাংলাদেশেও পড়েছে।
আব্দুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ তো একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। সুতরাং এটা আমাদের সকলকে প্রভাবিত করেছে। তাই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এখন যে সময়টা এসেছে সে সময়ের প্রায়োরিটিগুলো আগে ঠিক করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, প্রথমত জনকল্যাণধর্মী ও কল্যাণমুখী এবং মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোকে পুরণ করা সরকারের দায়িত্ব।
সিদ্ধান্তটি সাংঘর্ষিক কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে, তিনি একটি উদাহরণের সাহায্যে বোঝানোর চেষ্টা করে বলেন, যদি এমন হয় শীতের রাতের ছোট কম্বল পা ঢাকতে গেলে মাথা বেরিয়ে যায়। মাথা ঢাকতে গেলে পা বেরিয়ে যায়। তাহলে শরীরের কোন অংশ পুরোপুরি আবৃত রাখা সম্ভব নয়। তখন যে কাউকে কৌশলী হয়ে শুতে হবে। এ অবস্থাটি এখন ঘটেছে।
তিনি বলেন, সরকারের প্রধান দায়িত্ব হল মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, সেই জায়গাটা মিটআপ করা এবং মৌলিক যে সমস্যগুলো আছে সেই জায়গাটা চিহ্নিত করা। নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক সময়ে ইভিএম ক্রয় করার ক্ষেত্রে যে আর্থিক অসংগতি ও অপরাগতা প্রকাশ করেছে, এটি হয়তো নির্বাচন কমিশন বিবেচনা করেছে।
এর চাইতে বড় প্রয়োজনীয়তা ও প্রায়োরিটি বেসিসে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ কিছু অথবা জনগণের অন্য দাবিগুলো সরকারের মিটানো উচিৎ। একপক্ষ বলছে, ভোট ইভিএমএ পদ্ধতিতে করতে হবে আরেক পক্ষ বলছে ইভিএম করা যাবে না। সুতারং আমার মনে হয় এই সিদ্ধান্ত মন্দের ভাল এবং সকলের জন্য ভাল হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর, নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩০০টির মধ্যে ১৫০টি আসনে ইভিএম সংগ্রহের জন্য ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছিলো। গত বছরের ২৩ আগস্ট আগামী নির্বাচনে সর্বাধিক ১৫০টি আসনে ব্যালট পেপারের পরিবর্তে ইভিএম ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি।
আগামী বছরের শুরুতে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সিদ্ধান্তে বিরোধিতা করে বিএনপি এবং তার মিত্ররা। গত বছরের জুলাই মাস জুড়ে চলা সিইসির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে যোগ দেয়নি তারা। তবে, আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ইভিএম ব্যবহারের দাবি ছিল আওয়ামী লীগের।
বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, সরকার এই মুহূর্তে দুই লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার বিষয়টি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ক্রয় প্রকল্পটি বাতিল করা হয়নি। গত সোমবার (২৩ জানুয়ারি) রাজধানী ঢাকায় ইসি ভবনে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে, সরকারের এই সিদ্ধান্তে কথা জানান জাহাঙ্গীর আলম।
টিএইচ