শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
The Daily Post

ইসলামী আন্দোলনের চার দফা কর্মসূচি ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইসলামী আন্দোলনের চার দফা কর্মসূচি ঘোষণা

একতরফা তফসিল ঘোষণা করতে চাইলে তফসিল ঘোষণার দিন ঢাকায় নির্বাচন কমিশন অভিমুখে গণমিছিল করা হবে বলে জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

রোববার (১২ নভেম্বর) রাজধানীর দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে দলটি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, স্বাধীনতার এতোগুলো বছর পরে এসে এ ধরনের পরিস্থিতি আমাদের কারোই কাম্য ছিল না। একজন নেতা এবং একটি দলের গোয়ার্তুমির কারণে দেশ আক্ষরিক অর্থেই যুদ্ধাবস্থায় নিপতিত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় ক্ষমতার প্রয়োগ অর্থে স্বাধীনতার যে তাৎপর্য তা হারিয়ে গেছে। ক্ষমতাসীনদের সীমাহীন ক্ষমতা লিপ্সার কারণে সৃষ্ট রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের ভয়াবহতা আমরা ৩ নভেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেছিলাম। শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংকট উত্তরণে সরকারের কাছে আমরা কিছু যৌক্তিক দাবিও জানিয়েছিলাম। কিন্তু সরকার কোনোরূপ কর্ণপাত করেনি। এমতাবস্থায় একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল ও দেশের গণমানুষের প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ ও করণীয় নিয়ে আপনাদের অবহিত করতেই আজকের এই আয়োজন।

চরমোনাই পীর বলেন, আমরা আগেও বারংবার বলেছি যে, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো জাতীয় নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না। কারণ নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে যে আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতা থাকার দরকার তা এই সরকারের নাই। এবং এটা বারংবার প্রমাণিত হয়েছে। আমরা বিগত সময়গুলোতে স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে অংশ নিয়ে তাদের শঠতা, প্রতারণা ও সহিংসতা মানুষের সামনে প্রকাশ করে দিয়েছি। আওয়ামী লীগের চরিত্র যে পরির্বতন হবে না সর্বশেষ লক্ষীপুর ও বি-বাড়িয়ায় হয়ে যাওয়া দু’টি উপ-নির্বাচনও এর প্রমাণ।

তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চলমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য নির্বাচনকালীন “জাতীয় সরকার” এর ধারণা পেশ করেছে। জাতীয় সরকারের ধারণা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিদ্যমান সংবিধানের মান্যতাও রক্ষা করা যাবে একই সাথে চলতি সংকট থেকেও উত্তরণ হওয়া যাবে। আর জনগণের অভিপ্রায়ের প্রতিফলন ঘটাতে যদি সংবিধানের কোনো সংশোধনীও প্রয়োজন হয়, সে সুযোগও রয়েছে। অতীতে কারণে অকারণে ১৭ বার সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি এবং নির্বাচন কমিশন কোনো দলীয় বা সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়। এগুলো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সরকার সংবিধানের জপ করে, অথচ এই দুই প্রতিষ্ঠানকে সংবিধান যে ক্ষমতা দিয়েছে তারও যদি অনুসরণ করা হয় তাহলেও জাতি সংকট থেকে মুক্তি পেতে পারে। অথচ আমরা কি দেখলাম? সিইসি রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করে এসে আওয়ামী লীগের নেতাদের মতো করেই কথা বলছেন।

মুফতি রেজাউল করিম বলেন, আমরা আমাদের ৩ নভেম্বরের সমাবেশ থেকে দাবি করেছিলাম, বিরোধী দলের নেতাদের মুক্তি দিয়ে রাষ্ট্রপতি সবাইকে নিয়ে সংলাপে বসুন। তিনি সেই দাবীর প্রতি কর্ণপাত করেননি। বর্তমান রাষ্ট্রপতির নিয়োগের সময় তিনি যে ধরণের কথাবার্তা বলেছেন, তাতে তার আওয়ামী আনুগত্য প্রকাশিত হয়েছে। তারপরেও দেশের সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল পদের অধিকারী হয়ে তার এই দলান্ধতা অন্ধকারকে আরও নিকষ করেছে। আমরা জাতিকে অন্ধকারে পথ হারাতে দিতে পারি না। সেজন্য আমরা আবারো দাবি করছি—

১. অনতিবিলম্বে চলতি সংসদ ভেঙে দিয়ে সকল প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিগণের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে।
২. রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতারকৃত বিরোধী দলের সকল নেতা-কর্মী এবং ওলামায়ে কেরামকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে রাষ্ট্রপতির মধ্যস্থতায় সংলাপের আয়োজন করতে হবে।
৩. দলান্ধ এই নির্বাচন কমিশনকে বাতিল করতে হবে।
৪. রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির আগে কোনো অবস্থাতেই তফসিল ঘোষণা করা যাবে না।

এ দাবি জানিয়ে ৪ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। কর্মসূচিগুলো হলো-
১. নির্বাচন কমিশন একতরফা তফসিল ঘোষণা করতে চাইলে তফসিল ঘোষণার দিন ঢাকায় নির্বাচন কমিশন অভিমুখে গণমিছিল করা হবে।
২. তফসিল ঘোষণার পরের দিন সারাদেশে প্রতিটি জেলা ও মহানগরে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল।
৩. আন্দোলনরত অন্যান্য বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ সকল কর্মসূচীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন।
৪. জাতীয় সংকট নিরসনে সকল রাজনৈতিক দল, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিক এবং বিভিন্ন পেশাজীবি সংগঠনের প্রতিনিধিগণকে নিয়ে আগামী ২০ শে নভেম্বর’২৩ সোমবার ঢাকায় জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে এবং পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 

টিএইচ