শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post

দাবি না মানলে পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না : ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

দাবি না মানলে পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না : ফখরুল

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে জনগণের দাবি মেনে নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অন্যথায় পালানোর পথ খুঁজে পাবে না বলে তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

সোমবার বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

গত শনিবার ঢাকায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী হামলা, নিপীড়ন-নির্যাতন ও পাইকারি হারে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আজ সোমবার সারাদেশে মহানগর ও জেলা সদরে জনসমাবেশের ঘোষণা দেয় বিএনপি।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত জনসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক মো. আবদুস সালাম।

মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হকের পরিচালনায় জনসমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা বরকতুল্লাহ বুলু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আমানউল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, এডভোকেট জয়নুল আবদীন ফারুক, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, এডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, কামরুজ্জামান রতন, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, রকিবুল ইসলাম বকুল, মীর সরফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) অধঅধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, কৃষক দলের শহীদুল ইসলাম বাবুল, রওলামা দলের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম তালুকদার, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক খান, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, মৎস্যজীবী দলের মো. আবদুর রহিম।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ২৮/৩০ তারিখে আওয়ামী লীগ ক্রিকেটের মতে গুগলি খেলেছে। অবৈধ সরকারের পুলিশ আমাদেরকে ২৭ জুলাই সমাবেশ করতে দিবে না। আমরাতো পরেরদিন করলাম। সেখানে প্রতিকূল পরিবেশেও টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার মানুষ জমায়েত হয়েছিলেন। তাদের বার্তা ছিলো এই মুহূর্তে গদি ছাড়ো। আমাদের ছোট ও শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতেও সরকার ভয় পেয়েছে। তারা যুদ্ধের সাজে সাজোয়া যান নিয়ে নিরীহ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা মামলা করেছে। প্রবীন নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছে।

তিনি বলেন, জনগণের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক থাকে না তারাই এগুলো করে। এই নাটকে তারাই ছোট হয়েছে। গয়েশ্বর আমান ছোট হয়নি।

এই সরকারের পায়ের নিতে মাটি নেই। তারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করতে গিয়ে ছয় শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করেছে। এক হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে খুন করা হয়েছে। চল্লিশ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এগুলো করে কি মানুষের ঢল থামানো গেছে। থামানো যায় নি যাবে না। সুতরাং এনাফ ইজ এনাফ।

মির্জা ফখরুল বলেন, কয়েকটা লোককে বিদেশ থেকে ভাড়া করে এনেছে। একজন নাকি আমেরিকার। উনি কে?  তাকে তো আমেরিকার কেউ চেনে না! গতবারও তাকে আনা হয়েছিলো। এভাবে মানুষকে বোকা বানিয়ে আবারো নিজেদের অধীনে নির্বাচন করতে চায়।

তবে দেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন চায় না। আমরাও নির্বাচন চাই। সেটা হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা সব দল আজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করছি। দাবি এক দফা।

সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। অবিলম্বে পদত্যাগ করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দাও। না হলে পালাবার পথ খুঁজে পাবে না। অবিলম্বে দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করুন। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। হামলা, মামলা গ্রেপ্তার হয়রানি বন্ধ করুন। না হলে ফয়সালা হবে রাজপথে।

পরিস্কার কথা- বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান। এবার আর সেটা হবে না। দেশের মানুষকে বোকা বানিয়ে আর আগের মতো নির্বাচন করা যাবে না। কারা কর্তৃপক্ষ যদি জেলকোডের বাইরে কিছু করেন সবকিছুর হিসাব দেশের মানুষ বুঝে নেবে।

তিনি বলেন, আজকে সরকার প্রধান ভয় পাচ্ছেন। তাদেরকে বলবো- জনগণের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচিতে বাধা দিবেন না। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে এগিয়ে যেতে চাই। শিগগিরই একদফার পরবর্তী নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

জনসমাবেশে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) নেতা ডা. হারুন আল রশিদ, ডা. এমএ সেলিম, ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, মো. মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে ফ্রি মেডিকেল সার্ভিস দেওয়া হয়। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব) এর অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, অধ্যাপক শেখ মনির উদ্দিন, দেবাশীষ পাল, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের কাদের গণি চৌধুরী, এসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্সের (অ্যাব) প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, প্রকৌশলী মো. মোস্তাফা-ই জামান সেলিম, প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান চুন্নু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, আইয়্যুব খান ও ইয়াহিয়া খানের স্বৈরশাসন দেখেছি। কিন্তু এই সরকার যেভাবে শাসন করছে সেটা কখনো দেখিনি। গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ওপর কি নির্যাতন করা হয়েছে! সাপের মতো পেটানো হয়েছে। সাপকেও এভাবে মারা হয় না। এরপর গ্রেপ্তার করেছে অনেককে। আমরা কি বাংলাদেশটা আওয়ামী লীগকে ইজারা দিয়েছি নাকি? আওয়ামী লীগের পতন অবশ্যম্ভাবী। কোনো অত্যাচার নির্যাতন করে টিকে থাকতে পারবে না। তাদের হুংকার আল্লাহর কাছে পৌঁছে যাবে এবং আপনাদের তখতে তাউস ভেঙে পরে যাবে। এখনো সময় আছে জেল ভাঙার আগেই গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের ছেড়ে দেন।

ড. আবদুল মঈন খান বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সত্যিকারের চরিত্র আবারো জাতির সামনে পরিষ্কার হয়ে গেছে। কারণ এরা একদলীয় সরকার। এ জন্যই কাউকে কথা বলতে দেওয়া হয় না। 

টিএইচ