সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক নেতার ফোনে কথোপকথনের ১০ মিনিটের একটি অডিও রেকর্ড সাম্প্রতিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
ভাইরাল হওয়া কথোপকথনটি সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে রেকর্ডটিতে শেখ হাসিনার সাথে যিনি কথা বলছিলেন তার নাম তানভীর বলে জানা গেছে। তিনি ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকার বাসিন্দা বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নেতারা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অবহিত করে ফোন কলটিতে তানভীর শেখ হাসিনাকে বলেন মামলা হওয়ার কারণে নেতারা এলাকায় থাকতে পারছেন না, বাধ্য হয়ে এলাকার বাহিরে অবস্থান করছে নেতাকর্মীরা।
এর জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, সবার বিরুদ্ধে খুনের মামলা দেওয়া হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে ১১৩টি মামলা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে ফিরে গেলে ওই নেতাকেও আইনি সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভবনা আছে বলে সতর্ক করেন শেখ হাসিনা।
তানভীর বলেন, নিউইয়র্ক মহানগরে আমরা এমদাদ ভাইয়ের নেতৃত্বে মিটিং মিছিল করছি। কিন্তু এলাকার পরিস্থিতি খুব খারাপ। কামরাঙ্গীরচর-কেরাণীগঞ্জের সকল নেতাকর্মী এলাকার বাইরে। এরপর শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, সব মার্ডার কেস। সবার বিরুদ্ধে মার্ডার কেস।
এরপর ওই নেতা বলেন, এলাকার ছাত্রলীগ-যুবলীগকে আমি সহায়তা করছি। আপনি যদি বলেন তুমি এখানে থেকে ওদের হেল্প করো, করলাম। আর যদি বলেন তুমি দেশে গিয়ে দল গোছানোর চেষ্টা করো তাহলে করবো আপা। আপনার সিদ্ধান্ত আপা।
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, এখানে বসে এখন সাহায্য করো। এটাই সবচেয়ে বেশি কাজে লাগবে। দেশে পরে গেলেও হবে।
তখন তারভীর বলেন, আইনজীবীরা দাঁড়াতে পারছে না। এই বিষয়ে যদি আপনি পরামর্শ দিতেন...
শেখ হাসিনা বলেন, আইনজীবীদের বলো লোকজনকে অরগানাইজ করে যেন আইনজীবীরা সেখানে যায়। তাছাড়া তো আর কোনো...
এরপরে শেখ হাসিনাকে আবার বলতে শোনা যায়, তুমি যেখানে আছো সেখানে তো ইলেকশন চলছে। তাদের ক্যাম্পেইনিংয়ের সময় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, ক্যাম্পেইনিংয়ে সহযোগিতা করার সাথে সাথে এই বিষয়গুলো জানিয়ে রাখা। এদের কাছ থেকে একটা সাপোর্ট নিয়ে আসা।
তানভীর বলেন, আমার মনে হয় এবার ট্রাম্প আসবে। ট্রাম্প আসলে আমাদের জন্য খুবই ভালো আপা।
শেখ হাসিনা বলেন, সে যেই আসুক। তাদের ক্যাম্পেইনিংয়ে থাকলে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হলে ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। এটা আমি সবাইকে বলেও দিয়েছি।
তারপরে তানভীর বলেন, আপা বাংলাদেশে একটা নিউজ আসছে, আপনাকে গাজিয়াবাদ থেকে দিল্লিতে ট্রান্সফার করছে হেলিকপ্টারে করে।
হাসিনা অবাক হয়ে প্রশ্ন করেন হেলিকপ্টার দিয়ে? বলেন, কোন দেশের হেলিকপ্টার। ছবি পাঠাইও দেখবোনে। কি একটা আজগুবি কথা বলে ওরা। আমি দেশের খুব কাছাকাছি আছি। অতদূরে নাই। আমি খুব কাছাকাছিই আছি, যাতে আমি চট করে ঢুকে পড়তে পারি।
এ সময় কাঁদতে কাঁদতে তানভীর বলেন, আপা কষ্ট লাগে, আপনি যে মিডিয়াদের দিয়ে আসছেন, এরা সত্য বলে না, এরা কাজ করে না আপা। কই যাবো আপা। আল্লাহ আপনারে বাঁচাই রাখুক। আমরা আছি আপা। আপনি যখন নির্দেশ দেবেন, তানভীর তুমি আমেরিকা থেকে দেশে চলে আসো, এসে কামরাঙ্গীরচর-কেরাণীগঞ্জে দলীয় নেতৃত্ব গোছাও, আপনি বললে সাথে সাথে দৌঁড় দেব আপা।
শেখ হাসিনা বলেন, এখন গেলেই দেবে একখানা মামলা, শেষে কিছুই করতে পারবা না। আমার বিরুদ্ধে ১১৩টা মামলা। এইসব জিনিসগুলো নিয়ে জাতিসংঘ থেকে সবার কাছে বলা দরকার, ফলস মামলা দিচ্ছে। আমার পরিবারের কেউ বাকি নাই। সবার নামে মামলা।
টিএইচ