বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪
ঢাকা বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১
The Daily Post

সরস্বতী পূজার বাকি একদিন, জমজমাট প্রতিমার হাট

আবু ছালেহ আতিফ

সরস্বতী পূজার বাকি একদিন, জমজমাট প্রতিমার হাট
  • প্রতিমার দাম ১ হাজার-৫ হাজার টাকা
  • বিক্রি হচ্ছে হলুদ, কুমকুম, সাদা ও বাসন্তী রঙের ফুলমালা 
  • পান-সুপারি, চন্দন কাঠের সমারোহে সয়লাব পূজোর বাজার

আগামীকাল (২৬ জানুয়ারি) পালিত হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম সরস্বতী পূজার উৎসব। এ উপলক্ষে বসেছে জমজমাট প্রতিমার হাট। দোকানে এবং অস্থায়ী হাটে এ সরস্বতী পূজোর প্রতিমা কেনা-বেচা হচ্ছে।

বুধবার (২৫ জানুয়ারি) সকালে পুরান ঢাকার শাঁখারী বাজার, তাতীবাজার, রায়সাহেব বাজার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আগামীকাল পূজোর উৎসবকে কেন্দ্র করে এখানকার ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে ব্যস্ততা দেখা যাচ্ছে।

প্রতিমার হাটের অবস্থা জানতে চাইলে শাঁখারী বাজারের প্রতিমা বিক্রেতা স্বজল আমার সংবাদকে বলেন, গতকালকে এবং আজকে প্রতিমা বিক্রি সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে সন্ধ্যার আগে বিকেলে বেশি বিক্রি হয়।

প্রতিমা/মূর্তির দাম সম্পর্কে স্বজল বলেন, এটা সম্পূর্ণ মান অনুযায়ী হয়ে থাকে। আমার এখানে ১ থেকে ৫ হাজার পর্যন্ত একটা প্রতিমার দাম আছে।

তাঁতীবাজারের আরেক মূর্তির দোকানদার অনুক রায় বলেন, পূজোর সময় আসলে প্রতিমা বিক্রি করতে অনেক শান্তি পাই। এ প্রতিমাগুলো নিজেরাই তৈরি করি। নিজেদের দেবীকে নতুন রুপ দিতে অনেক আনন্দ, ব্যবসাটা উদ্দেশ্য না এখানে। ব্যবসার পাশাপাশি ধর্মীয় অনুভূতিটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে।

পূজোর জন্য বাইরে বসে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল, পান-সুপারি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি করতে থাকা মানসী মন্ডল আমার সংবাদকে বলেন, আমি পূজো আসলেই এসব বিক্রি করি। মা সরস্বতীর জন্য এটা আমার সামান্য করনীয়।

এক একটা ফুলের মালার দাম জানতে চাইলে মানসী বলেন, আমি দামাদামি করিনা, তবে ১০০-১৫০ টাকা করে চাই। যে যা দেয় তা নিয়ে বিক্রি করে দেই। তবে ক্রেতারা এসব কিনতে খুব আন্তরিক।

পূজোর জন্য প্রতিমাসহ বিভিন্ন সামগ্রী কিনতে থাকা স্বস্তিকা সরকার এবং তার স্বামী সুব্রত বলেন, বাসা থেকে বের হয়েছি পূজোর জন্য সুন্দর একটা প্রতিমা কিনবো এবং প্রয়োজনীয় সবকিছু কিনবো। স্বস্তিকা বলেন, ইতোমধ্যে মূর্তি কিনেছি একটা দুই হাজার টাকা দিয়ে। আরও সব কিছু কিনবো জামাইকে নিয়ে।

সরস্বতী পূজোর আমেজ জানতে চাইলে, এ দম্পতি বলেন, সব পূজোর আনন্দই আলাদা। দেবী সরস্বতী আমাদের বিদ্যার দেবী এজন্য তার কাছে আমরা আমাদের সন্তানরা যেনো মেধাবী হয় এটাই এখন বড় কামনা।

উল্লেখ্য, হিন্দু ধর্ম মতে দুর্গার মেয়ে সরস্বতী। আর বিদ্যাদেবী হিসেবে সরস্বতী তাদের কাছে বিশেষভাবে পূজনীয়। তাই মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে, সাদা রাজহাঁসে চড়ে, জ্ঞানের দেবী আসেন ধরায়।

এই দিনে জ্ঞান বৃদ্ধির আশায়, উপবাসে থেকে দেবীর নামে অঞ্জলী দিয়ে বিশেষ প্রার্থনা করে থাকেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

সনাতন ধর্ম মতে, বিদ্যা, জ্ঞান এবং সঙ্গীতের দেবী মা সরস্বতীর পুজো হয় মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে। তিথিটি শ্রীপঞ্চমী বা বসন্ত পঞ্চমী নামেও সকলের কাছে পরিচিত। বাঙ্গালীর প্রতিটি ঘরে ঘরে খুব ধুমধাম করে পালিত হয় সরস্বতী পূজো।

সরস্বতী পূজোর নিয়মের মধ্যে, সরস্বতী পূজোর দিন সকালে উঠে স্নান সেরে শুদ্ধ বস্ত্র পরতে হয়। তবে পূজোর আগে শরীর ও মনের শুদ্ধির জন্য এদিন নিম ও হলুদ বাটা মাখার রীতি প্রচলিত রয়েছে। পূজোর স্থানে একটি পিঁড়ির ওপর সাদা কাপড় পেতে সরস্বতীর মূর্তি স্থাপন করে থাকেন হিন্দু ধর্মের সরস্বতী ভক্তরা। মূর্তির সামনে জলভর্তি ঘটি বসিয়ে তার ওপরে রাখতে হয় আম্রপত্র। এর পর তার ওপর পান পাতা রেখে দিতে হয়। পুজোর স্থানে একপাশে হলুদ, কুমকুম, চাল, সাদা ও বাসন্তী রঙের ফুল-মালা দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়।

এছাড়াও থাকে কুলসহ নানান প্রকারের ফল। কারণ কুলই সরস্বতী পূজোর প্রধান ফল। সরস্বতী পূজোর আগে কুল খাওয়ার রীতি প্রচলিত নেই। বরং পূজোর অঞ্জলির পরই সাধারণত কুল খাওয়া হয়ে থাকে। এবং সরস্বতী মূর্তির এক পাশে রাখা হয় দোয়াত, খাগের কলম ও বই। আমের মুকুল, পলাশ ফুল অর্পণ করবেন। সঙ্গীত বা নৃত্যশিল্পী হলে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সামগ্রীও মূর্তির পাশে রাখা হয়ে থাকে। এরপর সরস্বতী পূজোর মন্ত্রপাঠ পূর্ণ করে দেবীকে ভোগ নিবেদন করে থাকেন সনাতনী সমাজ।

পূজোর সময়ে নিরাপত্তা বিষয়ক ব্যবস্থা সম্পর্কে কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (অসি) শাহীনুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, নিরাপত্তা বিষয়কে নিশ্চিত করতে আমরা তৎপর আছি। বিশেষ করে শাঁখারী বাজার, তাঁতীবাজারে সাদা পোশাকে নিরাপত্তা কর্মী যারা থাকবে তাদের বিভিন্ন সহায়তা এবং আমাদের পুলিশের সদস্যদেরকে নিয়োজিত করা আছে। সুতরাং এ বিষয়ে আমরা শক্ত অবস্থানে আছি  যেনো শান্তিপূর্ণভাবে পূজোর উৎসব পালন করতে পারে।

টিএইচ