রোজাদারের জন্য রমজান রহমতের বার্তাবাহী মাস। মাসটি তিন ভাগে ভাগ করে ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত হয় রোজাদার মুসলমান। রহমতের প্রথম দশকে রোজাদারের জন্য রয়েছে শিক্ষণীয় ও প্রতিদান পাওয়ার বিশেষ কিছু আমল। সে আমলগুলো কী?
আল্লাহ তাআলা মানুষকে এ মাসের রোজা পালনের মাধ্যমে নিজেদের আত্মোপলব্ধির বিষয়টি বিশেষভাবে অনুধাবন করার কথা তুলে ধরেছেন কোরআনে। আল্লাহ বলেন- ‘হে মুমিনরা! তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেভাবে তোমাদের আগের (নবী-রাসূলদের) অনুসারীদের জন্য ফরজ ছিল রোজা। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। অর্থাৎ দুনিয়ার জীবনের চলাফেরায় আল্লাহর ভয়ের মাধ্যমে প্রতিটি কাজ উপলব্ধি করতে পারো।’ (সূরা-বাকারা: আয়াত-১৮৩)
রমজানের এ দশকের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ও পুরস্কার পাওয়ার বিষয়গুলো হলো-
১. সৎ কর্ম সম্পাদন : রমজান মাস সবার মাঝে সৎকর্ম সম্পাদনে ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করে। কারণ মাসটি গুনাহ মাফের মাস। এ মাসে- > আল্লাহ তাআলা রোজাদারের জন্য দান করেন দ্বিগুণ প্রতিদান। > রোজাদারের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। > রোজাদারের মর্যাদা বাড়িয়ে দেন।
২. দয়াশীল হওয়া : এ মাসের দান-সাদকা বান্দাকে আল্লাহর দয়ার গুণে উন্নীত করে। কেননা আল্লাহ তাআলা দয়াশীল। বান্দার যেকোনো দয়াশীল কাজকে তিনি পছন্দ করেন। বান্দার দান-সাদকার কারণে তার প্রতি সদয় হন।
৩. তাকওয়া অর্জন করা : এ মাসে রোজাদার পরিশুদ্ধ আত্মার অধিকারী হয়। আল্লাহর ভয় অর্জন করতে সক্ষম হয়। কেননা মাসটি বিশেষভাবে বান্দাকে তার ভয় অর্জনের জন্যই দেয়া হয়েছে।
৪. রমজান রোজাদারকে যে আচরণের দিকে আহ্বান করে : দুটি আচরণ পবিত্র মাস রমজানের প্রথমিক শিক্ষা। যা পুরো রমজানজুড়ে পালন করতে চেষ্টা করে মুমিন মুসলমান। কিন্তু মহান আল্লাহ চান রমজানের সব ভালো গুণ বছরের বাকি সময়গুলোতেও অব্যাহত থাকুক। আর তাহলো- > পরস্পরের সঙ্গে ধৈর্য ও শহনশীলতার আচরণ। > অন্যদের সঙ্গে শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখানোর আচরণ।
৫. নামাজের প্রশিক্ষণ লাভ : রমজান মাসজুড়ে রাতের বিশেষ ইবাদত তারাবিহ নামাজ। এ নামাজটি শুধু রমজানে হয় বিধায় এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে বিশেষ নেয়ামত দান করেন। তাদের জন্য নাজিল হয় রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাত। রাতের বিশেষ এ নামাজ রোজাদারকে বছরব্যাপী ইবাদতে অভ্যস্ত করে তোলে। এ নামাজের ফলে বিগত জীবনের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।
৬. দান-সাদকায় উদ্বুদ্ধ হওয়া : এ মাসের দান সহযোগিতায় রোজাদার অন্যরকম অনুভূতি পায়। সে কারণেই রোজাদার বেশি দান করেন। গরিব দুঃখীর মধ্যে এ দানের কথা বলা হয়েছে বার বার।
৭. ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ হওয়া : রমজানের প্রথম দশকেই মানুষ ভালো কাজের দিকে উদ্বুদ্ধ হয়। যা তাকে পরবর্তী দশকে আরও বেশি ভালো কাজ করার দিকে নিয়ে যায়। বছরব্যাপী রোজাদারের মধ্যে এ প্রেরণা বিরাজ করে।
৮. আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করা : যে রোজাদার রমজানের শুরু থেকে আল্লাহর রহমত বরকত তালাশ করে, আল্লাহ তাআলা তাকে প্রথম দশক থেকেই রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাত দিতে থাকেন। হাদিসের ঘোষণাও তাই। আল্লাহ রমজানের প্রতি রাতেই প্রথম আকাশে সেসব বান্দাকে ক্ষমা করেন, রহমত দেন, রিজিক দেন, যারা তার কাছে চায়।
সুতরাং রমজানে রোজাদারের প্রতিটি রাত কাটুক তারাবিহ আদায়, রহমত কামনা ও ক্ষমা প্রার্থনায়। একা একা নয় বরং পরিবারের সব সদস্য সমবেতভাবে মহান আল্লাহর কাছে রোনাজারি ও ক্ষমা প্রার্থনা অংশগ্রহণ করা। তবেই আল্লাহ তাআলা বান্দাকে দান করবেন সব রহমত। ক্ষমা করবেন গুনাহ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের এ দশক থেকেই তার ইবাদতের প্রতি মনোযোগী হয়ে নিজেকে তার রহমতে সিক্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন। গুনাহ থেকে ক্ষমা ও জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার তাওফিক দান করুন। পুরো রমজানের ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত থেকে বছরজুড়ে নিজেদের মধ্যে রমজানের আবহ তৈরি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।