কী বিশেষণে বিশেষায়িত করা যায় একে? `অভাবনীয়` এক জয় বাদে? শেষ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে হোয়াইটওয়াশ করার আশা বাংলাদেশের ছিল। তবে সেটা এভাবে, এত বড় ব্যবধানে হবে; তা কি আপনি ভেবেছিলেন? বাংলাদেশ শেষ ম্যাচে তাই করে দেখিয়েছে। সেই সঙ্গে গড়ে ফেলল ইতিহাস। ব্যাট হাতে ১৮৯ রান তুলেছে ৭ উইকেট খুইয়ে। এরপর বল হাতে উইন্ডিজকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ১০৯ রানেই। আর তাতে হাতে এসে ধরা দিয়েছে ৮০ রানের বিশাল এক জয়, সঙ্গে ক্যারিবীয়দেরকে তাদেরই মাটিতে হোয়াইটওয়াশের সাধটাও পূরণ হলো লিটন দাসের দলের।
দলের এমন বিশাল জয় সম্ভব হয়েছে জাকের আলী অনিকের কল্যাণে। তার ৪১ বলে ৭২ রানের ইনিংসই মূলত বাংলাদেশকে চলতি বছর তাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের দেখা পাইয়ে দেয়। তার দিনটা অবশ্য ঘটনাবহুলই ছিল বেশ। নিজের ইনিংসের শুরুতে প্রশংসায় ভেসেছেন স্পোর্টসম্যানশিপের নজির দেখিয়ে। ওবেদ ম্যাকয় ডিপ অঞ্চলে চোট পেয়েছিলেন, তখন সুযোগ ছিল একটা বাড়তি রান নেওয়ার, তবে প্রতিপক্ষের চোটের কথা ভেবে সে সুযোগটা নেননি তিনি। ধারাভাষ্যকক্ষে তখন বেশ তারিফ হয় এই কাজের।
এরপর শামীম পাটোয়ারীর সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয় তার। `রান আউট` ভেবে তিনি সাঝঘরে চলেই গিয়েছিলেন। এরপরও থার্ড আম্পায়ার তাকে মাঠে আনেন, কারণ রিপ্লেতে দেখা যায় তিনি নন, আউট হয়েছেন শামীম। ১৫তম ওভারে আবারও ভুল বোঝাবুঝি হলো তার সঙ্গে, এবার ওপাশে ছিলেন শেখ মাহেদী। রান আউট হন তিনিও। দুটো `পাপের` প্রায়শ্চিত্ত জাকের করেন এরপর। একে একে ছয়টা ছক্কা হাঁকিয়েছেন শামীম-মাহেদীর বিদায়ের পর। তার দুটো ছক্কায় আবার বলই হারিয়ে ফেলেছেন রীতিমতো।
তিনি যখন উইকেটে এসেছেন, তখন দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ কিছুটা নড়বড়ে অবস্থানে ছিল। ২১ বলে ৩৯ রান করে বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দেওয়া পারভেজ হোসেন ইমন বিদায় নিয়েছেন কিছু আগে, এরপরও তানজিদ হাসান তামিমও বিদায় নিয়েছেন। সেখান থেকে দলকে টেনে তুলতে কিছুটা সময়ের জন্য খোলসে ঢুকে ছিলেন জাকের। শুরুর দিকের ধীরগতি, তার পর ওই দুই রানআউট। জাকেরের দেনা বেড়ে গিয়েছিল অনেক গুণে। তবে সেটা শোধ করেছেন শেষ দিকে। শেষ ২২ বলে তিনি তুলেছেন ৫৪ রান। আর তাতে ভর করেই বাংলাদেশ তাদের ইনিংস শেষ করে ১৮৯ রান তুলে।
বোলাররা এর আগে চলতি সিরিজে আরও কম রানও ডিফেন্ড করেছেন স্বাচ্ছন্দ্যে। সেটা আজ বড় পুঁজি পেয়ে ভুলে গেলেন না কেউই। তাসকিন আহমেদ ব্রেক থ্রু এনে দিলেন `বানি` ব্রেন্ডন কিংকে ফিরিয়ে। এরপর পুরো সিরিজে বল হাতে বড় ভরসা হয়ে ওঠা শেখ মাহেদীও তার আঁটসাঁট বোলিংয়ে ফিরিয়েছেন অভিষিক্ত জাস্টিন গ্রিভস আর নিকলাস পুরানকে।
পাওয়ারপ্লে শেষের আগেই তিন উইকেট খুইয়ে বসা উইন্ডিজ আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। পাওয়ারপ্লে শেষ হওয়ার পরপরই আরও দুই উইকেট খুইয়ে কোণঠাসা হয়ে পরে বরং। দশ ওভার শেষ হওয়ার ঠিক আগে অধিনায়ক রভম্যান পাওয়েল রিশাদ হোসেনের শিকার বনে যান।
এরপরও উইন্ডিজ আশার প্রদীপ নিভু নিভু করে জ্বলছিল রোমারিও শেফার্ড আর গুডাকেশ মোটির জুটিতে ভর করে। মোতির বিদায়ে এই জুটি ভাঙে রিশাদের করা ১৫তম ওভারে। সে ওভারে আলজারি জোসেফকেও শিকার করেন রিশাদ। ইনিংস সর্বোচ্চ ৩৩ রান করে শেফার্ড বিদায় নেন নবম ব্যাটার হিসেবে। উইন্ডিজের সব আশা শেষ হয় সেখানেই। এরপর ওবেদ ম্যাকয়কে বোল্ড করে তাসকিন আহমেদ জয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন। বাংলাদেশ ৮০ রানের বিশাল এক জয় তুলে নেয় তাতে। ২০২৪ এর শেষ দল রাঙায় মধুর এক সিরিজ জয় দিয়ে।
টিএইচ