টানা তৃতীয় ম্যাচেও সেই একই চিত্র! ব্যাটিং ব্যর্থতায় অস্ট্রেলিয়ার কাছে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ নারী দল। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমবারের মত দ্বিপাক্ষীক ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নেমেই হোয়াইটওয়াশের লজ্জা পেল নিগার সুলতানার দল।
সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে বুধবার অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৮ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। নিগারদের ৮৯ রানে আটকে রেখে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা জিতে যায় স্রেফ ১৮.৩ ওভারেই।
আগের দুই ম্যাচেও দলীয় সংগ্রহ একশ স্পর্শ করতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডে ১১৮ রানে এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ৬ উইকেটে হেরেছিলো স্বাগতিকরা।
এই প্রথমবার ঘরের মাঠে প্রথম কোন ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ। তবে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে তিন ম্যাচের সিরিজে এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো হলো এমন অভিজ্ঞতা। এর আগে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা নারী দলের কাছে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ হেরেছিলো টাইগ্রেসরা।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর ম্যাচে সিরিজে প্রথমবার টস হেরে আগে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলে খালি হাতে সাজঘরে ফিরেন ওপেনার সুমাইয়া আকতার। পরের ওভারে সাজঘরের পথ ধরেন আরেক ওপেনার ৫ রান করা ফারজানা হক।
৮ রানে ২ ওপেনারকে হারানোর পর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন মুরশিদা খাতুন ও অধিনায়ক নিগার সুলতানা। কিন্তু ২৮ বলে ১৬ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি দু’জনে। ২১ বলে ১টি চারে ৮ রানে তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে আউট হন মুরশিদা।
১১তম ওভারে জোড়া উইকেট হারায় বাংলাদেশ। পাঁচ নম্বরে নামা রিতু মনি ১ ও ফাহিমা খাতুন খালি হাতে বিদায় নেন। এতে ৩২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে মহাবিপদে পড়ে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় দলকে লড়াইয়ে ফেরানোর চেষ্টা করেন নিগার ও স্বর্ণা আকতার। সাবধানে জুটি গড়ার চেষ্টা করছিলেন তারা।
কিন্তু দলীয় ৫৩ রানে বিচ্ছিন্ন নিগার ও স্বর্ণা। ২টি চারে ৩৯ বলে ১৬ রান করেন নিগার। জুটিতে ৩৯ বলে ২১ রান যোগ করেন নিগার ও স্বর্ণা।
এরপর ১০ রানের ব্যবধানে আরও ৩ উইকেট হারিয়ে গুটিয়ে যাবার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। ৬৩ রানে নবম উইকেট পতন হয় তাদের। কিন্তু দশম উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের উপর চড়াও হন শেষ দুই ব্যাটার সুলতানা খাতুন ও মারুফা আকতার। তাদের মারমুখী ব্যাটিংয়ে ১শর রানের এগিয়ে যেতে থাকে বাংলাদেশ। কিন্তু ২৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে সুলতানা আউট হলে ৮৯ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। সিরিজের আগের দুই ম্যাচে যথাক্রমে ৯৫ ও ৯৭ রানে অলআউট হয়েছিলো স্বাগতিকরা।
শেষ উইকেটে ২২ বল খেলে ইনিংসে সর্বোচ্চ ২৬ রানের জুটি গড়েন সুলতানা-মারুফা। ২টি চারে ১০ রানে সুলতানা আউট হলেও ১টি বাউন্ডারিতে ১৫ রানে অপরাজিত থাকেন মারুফা। অস্ট্রেলিয়ার কিম গ্যারেথ ১১ রানে ও অ্যাশলে গার্ডনার ২৫ রানে ৩টি করে উইকেট নেন।
৯০ রানের সহজ টার্গেটে খেলতে নেমে ২ উইকেট হারিয়ে ১৮৯ বল বাকী রেখেই ম্যাচ জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া নারী দল।
নবম ওভারে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম উইকেট শিকার করেন অফ-স্পিনার সুলতানা। ফোবি লিচফিল্ডকে ১২ রানে আউট করেন সুলতানা। ১৩তম ওভারে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যালিসা হিলিকে ৩৩ রানে আউট করেন লেগ-স্পিনার রাবেয়া খান।
তৃতীয় উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৩৯ রান যোগ করে অস্ট্রেলিয়ার জয় নিশ্চিত করেন এলিসা পেরি ও বেথ মুনি। পেরি ২৭ ও মুনি ২১ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের সুলতানা ও রাবেয়া ১টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন গ্যারেথ ও সিরিজ সেরার পুরস্কার জিতেন গার্ডনার।
সিরিজটি নারী চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ ছিলো। এখন অবধি ১৮ ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে আছে অস্ট্রেলিয়া। সমানসংখ্যাক ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের সপ্তম স্থানে আছে বাংলাদেশ।
আগামী রোববার মিরপুরে শুরু তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২৬.২ ওভারে ৮৯ (ফারজানা ৫, সুমাইয়া ০, মুর্শিদা ৮, নিগার ১৬, রিতু ১, ফাহিমা ০, স্বর্ণা ১০, রাবেয়া ৪, নাহিদা ০, সুলতানা ১০, মারুফা ১৫*; গার্থ ৭-৪-১১-৩, পেরি ৪-১-১৭-২, সাদারল্যান্ড ২-০-৭-০, মলিনিউ ৭-২-২৩-২, গার্ডনার ৬.২-০-২৫-৩)
অস্ট্রেলিয়া: ১৮.৩ ওভারে ৯৩/২ (হিলি ৩৩, লিচফিল্ড ১২, পেরি ২৭*, মুনি ২১*; সুলতানা ৬-১-৩৫-১, নাহিদা ৬-০-২৫-০, রাবেয়া ৫-১-২১-১, ফাহিমা ১-০-৭-০, মারুফা ০.৩-০-৫-০)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ৩-০ ব্যবধানে জয়ী।
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: কিম গার্থ।
প্লেয়ার অব দা সিরিজ: অ্যাশলি গার্ডনার।
টিএইচ