রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
ঢাকা রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
The Daily Post

টি-টোয়েন্টি থেকে মাহমুদউল্লাহর অবসর ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

টি-টোয়েন্টি থেকে মাহমুদউল্লাহর অবসর ঘোষণা

টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন আগেই, ২০২১ সালের জুলাই মাসে। তুমুল আলোচিত সেই অবসর। কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি, হারারে টেস্টের মাঝপথে মাহমুদউল্লাহকে সতীর্থদের গার্ড অব অনার দিতে দেখে সবাইকে যা অনুমান করে নিতে হয়েছে। এরপর অনেক দিন মাহমুদউল্লাহ কিছু বলেননি। সেই অবসর নিয়ে রীতিমতো একটা রহস্যের জন্ম হয়েছিল।

টি–টোয়েন্টি থেকে অবসর নিতে এমন কোনো নাটকীয়তার আশ্রয় নেননি মাহমুদউল্লাহ। আনুষ্ঠানিকভাবেই বিদায়ের ঘোষণা দিয়েছেন। আগামীকাল ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। তার আগে আজ দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদউল্লাহ জানিয়েছেন, তিন ম্যাচের এই সিরিজ শেষেই তিনি আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি থেকে অবসর নেবেন।

তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এখনই ছাড়ছেন না অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। দেশের হয়ে ওয়ানডে খেলে যেতে চান।

ভারতের বিপক্ষে সিরিজের বাকি দুই ম্যাচে খেললে বাংলাদেশের পক্ষে মাহমুদউল্লাহ শেষ টি–টোয়েন্টি ম্যাচটি হবে আগামী ১২ অক্টোবর। সেদিন হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ।

বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়ার রেকর্ডও তাঁর। ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ৪৩টি টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে টস করতে নেমেছেন মাহমুদউল্লাহ। ৩৯ ছুঁই ছুঁই মাহমুদউল্লাহ এই সিরিজ শুরুর আগেই সিদ্ধান্তটা মাহমুদউল্লাহ নিয়ে রেখেছিলেন। প্রথম ম্যাচের পরই বিসিবিকে যা জানিয়ে দিয়েছেন। বিসিবিও মাঠ থেকে বিদায় নিতে চাওয়ার এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদউল্লাহ বলেছেন, ‘এই সিরিজের শেষ ম্যাচের পরেই আমি টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেব। আসলে এটা আমি এই সফরে আসার আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম। আমি আমার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। আমার কোচ, অধিনায়ক, নির্বাচক এবং বোর্ড সভাপতিকেও সিদ্ধান্ত জানিয়েছি। আমি মনে করি, এটাই সঠিক সময় এই সংস্করণ থেকে সরে গিয়ে সামনে ওয়ানডে যা আছে, সেদিকে মনোযোগ দেওয়ার। আমার জন্য এবং পরের (টি-টোয়েন্টি) বিশ্বকাপের কথা যদি ভাবি, দলের জন্যও এটাই সঠিক সময়।’

২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে নাইরোবিতে কেনিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেক মাহমুদউল্লাহর। বাংলাদেশের হয়ে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৩৯টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। ১১৭.৭৪ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ২৩৯৫, গড় ২৩.৪৮। বাকি দুই ম্যাচ খেললে তাঁর টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ার শেষ হবে ১৪১ ম্যাচ খেলে। এর চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড আছে মাত্র দুজনের।

বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়ার রেকর্ডও তাঁর। ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ৪৩টি টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে টস করতে নেমেছেন মাহমুদউল্লাহ। ২০২১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি জয়ও মাহমুদউল্লাহর। তবে এই রেকর্ডের একজন ভাগীদার আছেন। তাঁর সমান ১৬টি জয় পেয়েছেন সাকিব আল হাসানও।

ক্যারিয়ারের সর্বশেষ পাঁচ–ছয় বছরে বাংলাদেশের টি–টোয়েন্টি দলে খেলেছেন ফিনিশারের ভূমিকায়। যে নামের সার্থকতা সবচেয়ে বেশি প্রমাণ করেছিলেন ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত নিদাহাস ট্রফিতে। ফাইনালে উঠতে জিততেই হবে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এমন এক স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচে মাহমুদউল্লাহর ১৮ বলে অপরাজিত ৪৩ রানের ইনিংস বাংলাদেশকে এনে দিয়েছিল স্মরণীয় এক জয়। শেষ চার বলে ১২ রান লাগে—এমন পরিস্থিতিতে পরের তিন বলেই খেলা শেষ করে দেন মাহমুদউল্লাহ। প্রথম দুই বলে ৪ ও ২ রান, পরের বলে ছক্কা! মাহমুদউল্লাহ টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে সবচেয়ে স্মরণীয় ইনিংস এটাই হওয়ার কথা।

হয়তো কাছাকাছি থাকবে গত টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই অপরাজিত ১৬। রানসংখ্যা যে ইনিংসের মহিমা বোঝাতে ব্যর্থ। ১৮তম ওভারে পরপর ২ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের ৮ উইকেট নেই। শেষ দুই ওভারে লাগে ১১ রান। ১৯তম ওভারে শানাকার প্রথম বলেই ছক্কা মারেন মাহমুদউল্লাহ, ম্যাচ শেষ করে দেন সেই ওভারেই। বাংলাদেশের সুপার এইটে ওঠায় বড় ভূমিকা রাখে ওই জয়।

টি–টোয়েন্টির মাহমুদউল্লাহর কথা বললে এই দুটি ইনিংসই হয়তো বেশি মনে পড়ে। এর সঙ্গে আরও কিছু যোগ করার সুযোগ থাকছেই। ভারতের বিপক্ষে সিরিজের বাকি দুই ম্যাচ যদি খেলেন, শেষটাকে নিশ্চয়ই স্মরণীয় করে রাখার প্রতিজ্ঞা নিয়েই ব্যাটিং করতে নামবেন মাহমুদউল্লাহ।

টিএইচ