অধিনায়ক হয়েছেন আট মাসও হয়নি। এরই মধ্যে কি অধিনায়কত্বের বোঝা অসহনীয় হয়ে উঠেছে নাজমুল হোসেনের কাছে? প্রশ্নটা ওঠার কারণ, ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকবাজের খবর অনুযায়ী, এরই মধ্যে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন নাজমুল এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে তা জানিয়েও দিয়েছেন।
কী জানিয়েছেন? দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চলতি টেস্ট সিরিজ শেষে তিনি আর বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক থাকতে চান না। বিসিবির শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা ক্রিকবাজের কাছে এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘হ্যাঁ, দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের পর তিনি আর দলকে নেতৃত্ব দিতে চান না বলে জানিয়েছেন।’
নাজমুল নিজেও এই সিদ্ধান্তের কথা স্বীকার করেছেন। ক্রিকবাজকে তিনি বলেছেন, ’দেখা যাক কী হয়, কারণ এখনো (বোর্ড) সভাপতির কাছ থেকে কোনো কিছু শুনিনি।’
বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ দুবাইয়ে আইসিসির সভা শেষে ওমরাহ করতে গিয়েছিলেন। আজ–কালের মধ্যে তাঁর দেশে ফেরার কথা।
এর আগে নিয়মিত অধিনায়কের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে বেশ কিছু ম্যাচে দায়িত্ব পালন করলেও নাজমুল তিন সংস্করণেরই অধিনায়ক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন গত ফেব্রুয়ারিতে।
ক্রিকবাজের তথ্য অনুযায়ী, গত জুনে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষে নাজমুল টি–টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিতে দিয়েছিলেন। পরে মত বদলে তিন সংস্করণের অধিনায়কত্বই ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
নাজমুলের অধিনায়কত্ব প্রশংসিত হলেও ব্যাট হাতে তাঁর বাজে ফর্মের কারণে তাঁকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে কোনো কোনো মহল থেকে। এটাই নাজমুলের এই সিদ্ধান্তের কারণ কি না, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
টেস্টে অধিনায়কের ভূমিকায় নাজমুলের ব্যাটিং গড়
টেস্টে অধিনায়কের ভূমিকায় নাজমুলের ব্যাটিং গড় (২৫.৭৬) তাঁর ক্যারিয়ার গড়ের (২৮.৬৮) চেয়ে কম হলেও ওয়ানডেতে ঘটনা পুরো উল্টো। ক্যারিয়ার গড় যেখানে ৩৩.২৯, অধিনায়ক হিসেবে তা ৫২। টি–টোয়েন্টিতে আবার কমে এসেছে সেই ব্যাটিং গড়। ক্যারিয়ার গড় ২২.৮৫, অধিনায়ক হিসেবে যা ১৮.৭৬।
নাজমুলকে তাঁর সিদ্ধান্ত থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে বলে জানা গেছে একটি সূত্রে। যদি তা সফল না হয়, তাহলে বিসিবিকে স্বাভাবিকভাবেই বিকল্প অধিনায়ক খুঁজতে হবে। ক্রিকবাজের খবর অনুযায়ী, টেস্ট ও ওয়ানডে মেহেদী হাসান মিরাজকে অধিনায়ক করার সম্ভাবনাই বেশি। টি–টোয়েন্টিতে যে দায়িত্ব পাবেন তৌহিদ হৃদয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুর টেস্ট পর্যন্ত নাজমুল হোসেন ৯ টেস্টে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এর তিনটিতে জিতেছে বাংলাদেশ। এই তিনটি জয়ই স্মরণীয়। প্রথমটিতে দেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশকে এখন পর্যন্ত ৯টি টেস্ট ও ওয়ানডে এবং ২৪টি টি–টোয়েন্টিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত পরের দুটি জয় পাকিস্তান সফরে। পাকিস্তানে প্রথম টেস্ট জয়ের পর দ্বিতীয় টেস্টও জিতে স্বাগতিক দলকে ধবলধোলাইও করেছে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতেও নাজমুল ৯টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন। টেস্টের মতো এটিতেও ৩টি জয় ও ৬টি পরাজয়। নাজমুলের নেতৃত্বে ২৪টি টি–টোয়েন্টি খেলে এর ১০টিতে জিতেছে বাংলাদেশ।
শেষ পর্যন্ত নাজমুল হোসেন অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিলে তিনি হবেন নিজে থেকে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া বাংলাদেশের দ্বিতীয় অধিনায়ক। এর আগে ২০০৩ বিশ্বকাপে যাওয়ার আগেই বিশ্বকাপ শেষে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন খালেদ মাসুদ।
টিএইচ